অমুসলিম দেশে ইসলাম ও নবীজির অবমাননা: যা করতে পারেন মুসলিম দেশের সরকার ও জনগণ

রায়হান মুহাম্মদ।।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন মুমিনের ঈমানের দাবি। হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার জীবনের সবকিছুর থেকে বেশি ভালবাসবে।

হাদিসের কিতাবগুলো যত্নভরে সংরক্ষণ করেছে, নবীর শানে গোস্তাখি করা এক অন্ধ সাহাবি কর্তৃক তার বাদিকে কতলের ঘটনা। বুখারি শরীফেও বর্ণিত হয়েছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে উপহাসমূলক কবিতা পাঠকারী ইহুদি-নেতা কাব ইবনে আশরাফকে মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রা.-এর হত্যা করার ঘটনা।

হাদিসের বাণীকে ধারণ করে যুগে যুগে নবী প্রেমের শত কোটি প্রাণবন্ত নজির দেখেছে পৃথিবীর ইতিহাস। যার প্রত্যেকটিই ছিল অন্যটির তুলনায় হৃদয়স্পর্শী ও নবীপ্রেমের আবেগ থেকে উৎসারিত। ইসলামের সূচনাকাল ও একবিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগ, সব সময় উম্মাহের মাঝে রাসূলপ্রেম ছিল উষ্ণ-উত্তপ্ত, কখনোই উম্মাহের নবীপ্রেমে কোন ভাটা পড়েনি।

আরো পড়ুন: বিশ্ববিখ্যাত আলেমদের বার্তা: ফ্রান্সের পণ্যবয়কট আমাদের সর্বনিম্ন প্রতিক্রিয়া

ইতিহাসে নবীপ্রেমের সাক্ষর হয়ে চির ভাস্বর হতে সর্বশেষ যুক্ত হলো বাকস্বাধীনতার ধোয়া তুলে ফ্রান্সে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটির নবী অবমাননা ও তার শিরচ্ছেদ করা চেচেন যুবকের ঘটনা।

এই ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের নবীপ্রেমী তৌহিদী জনতা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। জানাতে থাকে সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রতিবাদ।

আরো পড়ুন: ফ্রান্সের অভিশাপ: নবীজির অবমাননা সইবে না উম্মাহ

অমুসলিম দেশ- যেখানে মুসলিম সরকার ও জনগণের কর্তৃত চলে না, এমন দেশে ইসলাম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে অবমাননা ও কটুক্তির ক্ষেত্রে কি করতে পারেন মুসলিম দেশের জনগণ ও সরকার? জানতে ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় দেশেরবরেণ্য আলেম–লেখক ও জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার ইফতা বিভাগের প্রধান মুফতি মাওলানা হিফযুর রহমানের সাথে।

মুফতি হিফযুর রহমান ইসলাম টাইমসকে বলছিলেন, অমুসলিম দেশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবমাননার ক্ষেত্রে মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পন্থায় সংসদের মাধ্যমে এই ধরণের গর্হিত কাজের নিন্দা জানাতে পারেন।

এছাড়া অবমাননাকারী দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা ও কৈফিয়ত চাওয়া মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের প্রতিবাদের অংশ হতে পারে বলছিলেন মুফতি হিফযুর রহমান।

শক্তিশালী দেশ হলে রাষ্টীয়ভাবে সেই অমুসলিম দেশের পণ্য বর্জন ও তাদের সাথে করা সব চুক্তি বাতিল করা যেতে পারে তার মতে।

মুফতি হিফযুর রহমানের ভাষায়, মুসলিম দেশে যেই সরকারই ক্ষমতায় থাকুন, মুসলিম হিসেবে নবীজির অবমাননাকারীদের নিন্দা জানানো অবশ্য কর্তব্য ও ঈমানের দাবি।

আরো পড়ুন: ফিদাকা নাফসী ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

তিনি বলছিলেন, অতীতে আমাদের দেশে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার ঘটনায় সরকারিভাবে ব্যবস্থাগ্রহণ ও নিন্দা জানানোর নজির রয়েছে, তাই ফ্রান্সের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন জামিয়া রাহমানিয়ার প্রধান মুফতি।

সরকারের বাইরে এজাতীয় ঘটনায় কি করতে পারেন মুসলিম দেশের জনগণ?

এ প্রশ্নের উত্তরে মুফতি হিফযুর রহমান বলছেন, রাষ্ট্রের মতো জনগণও বর্তমান বিশ্বে প্রতিবাদ জানানোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পন্থায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করতে পারেন। অবমাননাকারী দেশের দূতাবাস ঘেরাও, দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনও হতে পারে জনগণের প্রতিবাদ জানানোর অংশ।

আরো পড়ুন: ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভে রাজধানীজুড়ে নবীপ্রেমীদের বাঁধ ভাঙা জোয়ার

মুফতি হিফযুর রহমানের ভাষায়, সরকারি ঘোষণা ছাড়াও নবীপ্রেমের দাবি থেকে জনগণের অবশ্য কর্তব্য হলো নিজ থেকেই অবমাননাকারী দেশের পণ্য বর্জন করা।

এসব ঘটনায় মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানরা নিরব ভূমিকা পালন করলে জনগণ আন্দোলন ও বিক্ষোভের মাধ্যমে সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানাতে বাধ্য করতে পারেন, যেন বিভিন্ন কারণে চুপ থাকা রাষ্ট্র প্রধানরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে পারেন নিজ দেশের জনগণের আবেগ ও চাপের বিষয়টি।

গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের দাবি-দাওয়া মানা সরকারের জন্য অবশ্য কর্তব্য, তাই জনগনের বিক্ষোভ-আন্দোলনই সরকানিভাবে নিন্দা জানানো ও উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণের কাজকে সহজ করতে পারে বলছিলেন জামিয়া রাহমানিয়ার মুফতি মাওলানা হিফযুর রহমান।

আরো পড়ুন: চৌদ্দশ বছর আগে, যখন মানবভুবনটি ছিল অন্ধকার সমুদ্রে..

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদস্ত্রীর সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ককে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ ও অপরাধ’ গণ্য করতে আইনি নোটিশ
পরবর্তি সংবাদচাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহবান শিল্পমন্ত্রীর