ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: দেশে লাগামহীন বিচারহীনতার এক ভয়ংকর নমুনা

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় পুরো দেশ। আদর্শ জাতি নিমার্ণের কেন্দ্র শিক্ষাঙ্গনে এমন রোমহর্ষক ঘটনায় শঙ্কিত শিক্ষার্থীদের বাবা-মা। একটি জাতীয় বিদ্যালয়ে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নতুন করে।

জাতীয় পর্যায়ের একটি বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এমন গর্হীত ঘটনাকে দেশে লাগামহীন বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তারই এক ভয়ংকর নমুনা বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রামের ওমর গণি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

এই দুর্ঘটনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে কোনভাবে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

তার ভাষায়, দেশের জাতীয় পর্যায়ের একটি কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো কঠোর হওয়া উচিত। এতো বড় দুর্ঘটনার সময় নিরাপত্তা রক্ষীরা কোথায় ছিল এমন প্রশ্নের সাথে কলেজ বন্ধের সময় ছাত্রাবাস কেন খোলা থাকবে এ প্রশ্নটিও তিনি বড় করে তুলছেন। এছাড়া বড় বড় অপরাধ করে বিভিন্ন ফাকফোকর ও মারপ্যাচে সাত খুন মাফ পাওয়ার যে মানসিকতা তার কারণেই এসব অপরাধ বেড়ে চলছে বলছিলেন এই শিক্ষাবিদ।

পাথর মেরে হত্যার যে শাস্তি ইসলাম নির্ধারণ করেছে তা চালু থাকলে ধর্ষণের মতো অভিশপ্ত অপরাধ কল্পনাও করা যেত না উল্লেখ করে তিনি দেশের প্রচলিত আইনে এসব নরপিচাশের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

বিচারহীনতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়াই এসব অঘটনের মূলে কাজ করছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ড. আফম খালিদ হোসেন। তিনি বলছেন, শুধু এমসি নয়, সম্প্রতি স্বামীর জন্য রক্ত আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন এক নারী। ধর্ষণের ঘটনার বাইরেও কিশোর গ্যাং নামে যেসব উদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে দেশে সবই বিচারহীনতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ঘটছে। তাই ড. আফম খালিদ হোসেনের মতে বিচারহীনতার নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে সবার আগে।

এদিকে এসব দুর্ঘটনার জন্য সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োগের অভাব ও সঠিক বিচার না হওয়াকে মূল কারণ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী। একই সাথে অবাধে চরিত্র বিধ্বংসী ভিডিও ছড়িয়ে পড়াকেও দায়ী করছেন তিনি।

তার ভাষায়, বিভিন্ন অশালীন ভিডিও ফুটেজ তরুণ ও যুবকদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাই এসব বন্ধ করাটা অবশ্যক মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলছেন ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী। এছাড়া এসব অপরাধ বন্ধ না হওয়ার পেছনে এই শিক্ষাবিদও বিচারহীনতাকেই বড় করে দেখছেন।

অপরাধ বন্ধে ব্যক্তি পর্যায়ে সমাজে বসবাসকারীদের কোন দায়িত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজের মুরব্বী ও সচেতন ব্যক্তিরা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে নৈতিকতার প্রচার-প্রসার বাড়িয়ে দিতে পারেন।

অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়ে আশপাশের লোকেরা অপরাধীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেও অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকাল দুর্ঘটনার সময় কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। অনেকেই ঘটনার ভিডিও করলেও কেউ  রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন না।

প্রতক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষীর নামে অনেক সময় প্রহসনের শিকার হতে হওয়াকে এর একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও  ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলছেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় রাসূল সাঃ তা প্রতিরোধ করার জন্য যে তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন, বর্তমানে আমাদের মাঝে কোন স্তরই বিদ্যমান নেই। এ জন্য অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এই হাদীসের ওপর সমাজের মানুষের আমল হয়তো এসব ন্যক্কারজনক দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

পর্দার মূল উদ্দেশ্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। যেখানে গেলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে সেখানে না যাওয়াই কর্তব্য। তাই ব্যক্তি পর্যায়েও সবাইকে সচেতন থাকা এবং নিজেদের সন্তানদের গতিবিধি লক্ষ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী।

আরো পড়ুন: ‘শুধু উচ্চারণ নয়, শিক্ষকের আচরণ থেকেও শিক্ষার্থী আহরণ করেন জীবনের পাথেয়’

‘বোরকা শুধু মুসলিম নয়, অভিজাত বাঙালি নারীর সংস্কৃতিরও অংশ’

পূর্ববর্তি সংবাদমারা গেলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
পরবর্তি সংবাদ৪ অক্টোবর ওমরা শুরু, প্রতি ধাপে করবেন ১ হাজার জন