‘বোরকা শুধু মুসলিম নয়, অভিজাত বাঙালি নারীর সংস্কৃতিরও অংশ’

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

সম্প্রতি পল্টনের একটি মাঠে ছেলের সাথে বোরকা পরা এক মায়ের খেলাধুলার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ও মিডিয়াতে। বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ছবিটি নিয়ে অনেকেই প্রকাশ করেছেন তাদের ভাল লাগার কথা। তবে ভাইরাল হওয়া ছবির মা ঝর্ণা আক্তার বোরকা পরিহিত হওয়ার কারণে তাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন প্রগতিশীল দাবিদার কিছু মানুষ। কারো কারো কাছে নাকি তাকে বাঙালি মা মনে হয়নি, কেউ আবার মন্তব্য করেছেন, এটা পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের ছবি।

বোরকা পরার কারণে একজন বাঙালি নারীকে নিজ দেশের সংস্কৃতি থেকে বের করে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? বিশেষ করে যখন এই দাবি তোলেন এমন মানুষেরা, যারা সবসময় নারীর পোশাক ও স্বাধীনতা নিয়ে আওয়াজ তোলেন ঘর ও ঘরের বাইরে।

এ নিয়ে ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় দৈনিক নয়া দিগন্তের সাব-এডিটর ও দারুর রাশাদ মাদরাসার শিক্ষাসচিব মাওলানা লিয়াকত আলীর সাথে। তিনি বলেন, দেশে সবসময় চিহ্নিত একটা শ্রেণী ধর্ম ও ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে বিদ্বেষমূলক কথা বলে। তবে মজার বিষয় হলো এখন আর তাদের কথা হালে পানি পায় না। তাই তাদের কথা এখন একটা বৃত্তের মধ্যেই আটকে থাকে।

মাওলানা লিয়াকত আলীর ভাষায়, সংস্কৃতি যুগে যুগে পাল্টায়, তা কখনো এক বৃত্তে আটকে থাকে না, আর বাঙালির আদি সংস্কৃতি বলতে যা বোঝায় তা এখন নেই বললেই চলে। আগে যেভাবে শাড়ি-লুঙ্গি পরা হতো এখন সেই আদলে কেউ কাপর পরেন না। তিনি বলেন, হিন্দু নারী, পুরুষরাও এখন আগের নিয়মে ধুতি ও শাড়ি পরেন না।

সময়ের প্রয়োজনেই সব পরিবর্তন হয় উল্লেখ করে মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, বোরকাও এখন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। তাই বোরকাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কোন সুযোগ নেই তার মতে।

এদিকে বোরকা নিয়ে কথিত প্রগতিশীলদের এমন মন্তব্যকে পুরোই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্রফেসর শাহেদ হারুন প্রতিবেদককে বলেন, বোরকা কখনোই পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের সংস্কুতি নয়, বোরকা বাঙালি এবং বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি। তিনি বলেন, এক সময় কলকাতায় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে হিন্দু নারীরাও বোরকা পরতেন, এইদিক বিবেচনায় একে শুধু মুসলিম সংস্কৃতি না বলে অভিজাত বাঙালির সংস্কুতিও বলা যায়।

ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বিবেচনায় বোরকা নিয়ে বিতির্কিত মন্তব্য করার কোন অধিকার নেই উল্লেখ করে শাহেদ হারুন বলেন, বর্তমানে পশ্চিমাপূজারী যেসব নারীবাদী বোরকা নিয়ে আপত্তি তুলছেন, তাদের অবশ্যই জানা থাকার কথা, আমেরিকায় ব্যক্তির পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করার কোন সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে আমেরিকায় সে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং এমন ব্যক্তি মামলা ও জরিমানার আওতায় পড়েন। তাই নারীবাদী হিসেবেও তারা বোরকা নিয়ে কটাক্ষ করতে পারেন না।

তার ভাষায়, বাঙালির আবহমানকালের পোশাকই হল শালীনতা, মাঝে এই শালিনতা কিছুটা হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ, এখন আবারো তা ফিরে আসছে এটাকে স্বস্তিদায়ক বলছিলেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্রফেসর শাহেদ ।

পূর্ববর্তি সংবাদ‘বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়ের সময় থেকেই তুরস্কের সাথে আমাদের সম্পর্কের সূচনা’
পরবর্তি সংবাদসীমান্তে মিয়ানমারের সৈন্য সমাবেশ যে কারণে উদ্বেগের