৪ এপ্রিল মুফতি আমিনী রহঃ-এর ডাকা ঐতিহাসিক হরতাল

নুরুদ্দীন তাসলিম ।।

বাংলাদেশ। ৭১-এ স্বাধীনতা লাভ করা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের  দ্বিতীয়  বৃহত্তম  মুসলিম এ ভূখন্ডে বিভিন্ন মহল কর্তৃক  ইসলাম বিদ্বেষ নতুন কিছু নয়।  সময় বারবার সাক্ষী হয়েছে এমন অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার।

নারীনীতিমালা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে  ইসলাম বিদ্বেষীদের কুরাআন সুন্নাহ বিরোধী আগ্রাসনের এক কঠিন সময়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছিল খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জীর ২০১১ সাল। আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত আইন নিয়ে এমন ধৃষ্টতা এদেশের ৯৫ ভাগ মুসলমানকে শুধু হতবাক করেনি ,তাদের ধর্মীয় আবেগকে করেছিল ক্ষতবিক্ষত। এসময় ১৬ কোটি জনগনের হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কুরাআন সুন্নাহ বিরোধীদের বিপক্ষে গর্জে উঠেছিলেন বাংলার সিংহ শার্দূল মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহঃ) ।

কুরাআন সুন্নাহ বিরোধীদের রুখে দিতে ২০১১’র ৪ঠা এপ্রিল ডাক দিয়েছিলেন তিনি ঐতিহাসিক এক হরতালের। সে সময় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া দেশব্যাপী এক অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছিল মুফতি ফজলুল হক আমিনী(রহঃ)’র নেতৃত্বে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে আহূত সে হরতালে।

২০১১-এর ৪ঠা এপ্রিল  কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলের দাবিতে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন পরিষদ এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম সমর্থিত হরতালে রাজধানী ঢাকাসহ  দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগ ছিল বন্ধ।

আরো পড়ুন: ৬ এপ্রিল: শাপলায় আঁছড়ে পড়া নবী প্রেমের ঢেউ

রাজধানীর ভিআইপি সড়কে পুলিশ পাহারায় সীমিতসংখ্যক যানবাহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার যানবাহন চলেনি। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছিল প্রায় যানবাহনশূন্য।

সেদিন ফজর নামাজের পর  কাফনের কাপড় পরে কোরআন শরিফ হাতে কুরআন সুন্নাহের পক্ষে রাজপথে নেমে পড়েন এদেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা।  দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকরা  ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন বাংলার  রাজপথ ও আকাশ বাতাস। দেশের রাস্তাগুলোয় সেদিন চোখে পড়েছিল জিকির ও নামাজ আদায়ের নয়ানাভিরাম দৃশ্য।

আরো পড়ুন: বালাকোট থেকে মতিঝিল: মিল-অমিল

ভাংচুর জ্বালাও পোড়াওহীন শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের অনন্য দৃষ্টান্ত ছিল ২০১১ সালের ৪ঠা এপ্রিল। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ  আন্দোলনের উপমা হয়ে থাকবে  ধর্মীয়  ইস্যুতে দেশব্যাপী সাড়া ফেলানো এ শান্তিপূর্ণ হরতাল।

শান্তিপূর্ণ এ হরতালে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কওমী শিক্ষার্থী ও ধর্ম প্রাণ মানুষেরা।এ আন্দোলনের পরে গৃহবন্দী হয়েছিল মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহঃ)। তবে ইসলামের স্বার্থ  রক্ষায় অকুতোভয় এই বীর সেনানী  সব সময় ছিলেন অনড়। তার জ্বালাময়ী বক্তব্য এখনো উজ্জীবিত করে এদেশের ধর্মপ্রাণদের। তার  সেই অনড় অবস্থান এবং তাওহীদি জনতার বাঁধভাঙ্গা প্রতিরোধের মুখে সরকার নারী উন্নয়ন নীতিমালা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল।

বর্ষপঞ্জীর  প্রতিটি ৪ঠা এপ্রিল  ইসলামের পক্ষে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত  লড়ে যাওয়া মহান এ নেতার অসামান্য ত্যাগ ও অবদানের কথা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।

আরো পড়ুন: শাপলায় ঘটে যাওয়া এক আবেগময় অধ্যায়

পূর্ববর্তি সংবাদকরোনা: পরিবহন বন্ধ ও গার্মেন্টস খোলার অদ্ভুত উল্টোযাত্রা
পরবর্তি সংবাদরবিবার থেকে রাজধানীর কর্মহীন বস্তিবাসী পাবেন ১০ টাকা কেজিতে চাল