একজন পথচারীর দৃষ্টিতে ধানমন্ডির ভেঙে দেওয়া সেই মসজিদ  

কাপ্তান মুসাফির ।।

সব কথা কুরআন হাদীস দিয়ে সাব্যস্ত করতে হয় না। সব কথার স্বীকৃতি নিতে বুদ্ধিজীবীদের দ্বারস্থও হতে হয় না। আল্লাহ তাআলা মানুষকে যে আকল দিয়েছেন, বিচার-বুদ্ধি দিয়েছেন, জ্ঞান ও উপলব্ধিশক্তি দিয়েছেন, সেগুলো দিয়েই অনেক কিছু বুঝা যায়। চেনা যায়। উপলব্ধি করা যায়। এই বিচারবুদ্ধির কাছে কখনো কোন বিষয় স্পষ্ট না হলে অন্য কারও সাহায্য নিতে হয়। অন্যকোন জ্ঞান-বিদ্যার প্রয়োজন হয়।

আকল-বুদ্ধি ও জ্ঞান-বিদ্যা দিয়ে অনেককিছু বুঝার পরও যখন কেউ না বুঝার ভান করে, সত্যিই সেটা অনেক বড় অন্যায় হয়। জেনেও না জানা, বুঝেও না বুঝা, চিনেও না চেনা এমন এক অন্যায়, যাকে ব্যক্ত করার ভদ্র অভদ্র অনেক শব্দ আছে। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ করতে সেই শব্দগুলোও প্রয়োজন হয় না। সবকিছু সবার কাছে এমনিতেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

বিখ্যাত একটি কথা আছে। যা সবাই জানে, বিশ্বাস করে এবং অকপটে স্বীকারও করে। কথাটা হল- “ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়”। এর অর্থ, মর্ম, ব্যাখ্যা এবং অন্তর্নিহিত বক্তব্য পর্যন্ত সবার কাছে স্পষ্ট। অর্থাৎ আজকে যার যেটুকু ক্ষমতা আছে, মৃত্যু পর্যন্ত তার এই ক্ষমতা বহাল থাকবে, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই! আজকে যার যে পরিমাণ শক্তি ও দাপট আছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা অক্ষুণ্ণ থাকবে, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই!! মানুষ বুঝেও তবু না বুঝার ভান করে। জেনেও কিছু না জানার ভান করে। কেন করে সেটাও বলার প্রয়োজন পড়ে না।

এই পৃথিবীতে এমন ঘটনা কি একটি দুটি যে, একসময় অনেক ক্ষমতা ছিল। এখন তার কিছুই নেই। এমনকি আত্মরক্ষার ব্যবস্থাটুকুও নেই। একসময় তার দাপটে কতজন থরথর করে কাঁপত। আজকে তারাই তাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেছে। চরম হেনস্তা করছে। এজাতীয় ঘটনা পৃথিবীতে হাজারো বার ঘটেছে, ঘটছে এবং হয়তো আরও ঘটবে। তারপরও আমরা বুঝতে চাইনা। অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করি। কিংবা বুঝেও স্বীকার করি না। অথবা স্বীকার করি ঠিকই, কিন্তু মনে করি সেটা আমার ক্ষেত্রে ঘটবে না।

এ যে কত হীনতর বোকামী, সেকথা বোধহয় কারো কাছেই অস্পষ্ট নয়।

সম্প্রতি ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে অবস্থিত একটি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। মসজিদটি একেবারেই নতুন। এক বছর বয়সও হয়নি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, জায়গাটা খালি দেখেছি। লকডাউনের পরও। এরপর একদিন দেখলাম, সেখানে কী যেন হচ্ছে! মনে হল কোনও ভবন তৈরি হচ্ছে। কিংবা পাশে থাকা রেস্টুরেন্টের মত আরেকটি রেস্টুরেন্ট! কিংবা অন্যকিছু! হঠাৎ যখন দেখতে পেলাম সুদৃশ্য একটি মসজিদ, এত ভালো লাগলো যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

একদিন বিকেলবেলা গেলাম ওদিকে। অথবা ফজরের পর। দেখলাম কিছু মানুষ মসজিদে বসে আছে। হয়তো ইশরাক কিংবা মাগরিব নামাযের অপেক্ষা করছে। সেদিনের অনুভূতি ছিল আরও অন্যরকম।

এরপর পরশু রাতে দেখলাম মসজিদটি ভাঙার অনেকগুলো ছবি সোস্যাল মিডিয়ায়! কী ঘটনা কিছুই জানি না। শুধু জানি, আমার হৃদয়েরও গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। বারবার প্রশ্ন জাগছে, কেন এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল? কে করেছিল? কী নিয়তে করেছিল? এরপর আজ কেন ভাঙা হলো? কে ভাঙলো? কী উদ্দেশ্যে ভাঙলো?

নির্মাণ ও ভাঙনের কোন তথ্যই আমার কাছে নেই। আমি একজন পথিকমাত্র। এই পথ ধরে মাঝেমধ্যেই হেঁটে যাই। ব্যস্ এতটুকুই।

প্রথমে তো রীতিমতো সন্দেহ হয়েছিল যে, ছবির মসজিদটি এই মসজিদই কি না? পরে যখন নিশ্চিত হলাম, কষ্টটা আরও তীব্র হলো। এবং তার স্ফুলিঙ্গগুলো যেন হৃদয়ের আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ল।

কী নিদারুণ একটি ঘটনা!

লেকের পাড়ে, ডাল ছাড়ানো কতগুলো গাছের ছায়ায়, ছোট্ট একটি ফুল বাগানের সামনে অবস্থিত শিশু মসজিদ। না জানি কার ক্ষমতায়, কার ইশারায়, কার যেন কী হিসাবে আজ শাহাদাত বরণ করল। তা দেখে সাধারণ একজন পথচারীর অবস্থাই যদি এমন হয়ে থাকে, মসজিদটির অবস্থা না জানি কেমন? তার হৃদয়ের অবস্থা তো কোন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে নিশ্চয় একজন সেটা জানেন। এবং তাঁর হাতেই পৃথিবীর সকল ক্ষমতা!

-এমএসআই

পূর্ববর্তি সংবাদট্যানারিসহ ৬ শিল্পখাতকে ‘শিশুশ্রম মুক্ত’ ঘোষণা
পরবর্তি সংবাদতেলবাহী ট্রেন লাইচ্যুত, সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ