পূর্বাচলে নামাজের সময় মাদরাসার উস্তাদ, ছাত্র ও মুসল্লীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: রাজধানীর পূর্বাচলে মারকাযুস সুনান মাদরাসার মসজিদে নামাজরত অবস্থায় মাদরাসার উস্তাদ, ছাত্র ও মুসল্লীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। মসজিদে নামাজের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মাদরাসাটিতে এই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এতে মাদরাসার ৩ জন উস্তাদ ও ৬ জন ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন।

গতকাল শনিবার (১৬ জানুয়ারি) মাগরিবের নামাজের সময় মাদরাসায় এ হামলা চালানো হয় বলে ইসলাম টাইমসকে জানিয়েছেন মাদরাসার মুহতামিম মুফতি শফিকুল ইসলাম আবদুল্লাহ।

এঘটনায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করতে গেলে এখনো পুলিশ মামলা গ্রহণ করেননি।

মাদরাসার মুহতামিম মুফতি শফিকুল ইসলাম আবদুল্লাহ ইসলাম টাইমসকে জানান, গতকাল শনিবার মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলা চালানোর আগে গত পরশু শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) পূর্বাচলে একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং এলাকায় মাদরাসার মাদানী নেসাব ১ম বর্ষের এক শিশু শিক্ষার্থীকে মারধর করে সেখানকার কর্তব্যরত একজন সিকিউরিটি গার্ড।

সূত্র জানিয়েছে, গত পরশু শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) পূর্বাচলে নির্মাণাধীন একশো বিয়াল্লিশ তলা বহুতল ভবন এলাকায় ছাত্ররা খেলার সময় মাদানী নেসাব ১ম বর্ষের এক শিশু শিক্ষার্থী একটি পাখিকে লক্ষ্য করে ছোট্ট একটি ঢিল ছুঁড়ে মারে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঢিলটি বিল্ডিং-এর কর্তব্যরত একজন সিকিউরিটি গার্ডের শরীরে লাগে।

অনাকাঙ্খিত ভুলের জন্য শিশু শিক্ষার্থীটি গার্ডের কাছে ক্ষমা চাইলেও তিনি ক্ষমা না করে সেই শিশু শিক্ষার্থীকে উপর্যুপুরি কিল, ঘুষি ও থাপ্পর মারেন। এসময় শিশুটি নিজেকে রক্ষা করতে দৌড় দিলে সিকিউরিটি গার্ড তার কোমরে লাথি মারে। শিশুটি পড়ে গিয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করলে সেই গার্ড শিশুটিকে লক্ষ্য করে ইট মারে যা শিশুটির কোমরে লেগে সে প্রচণ্ড ব্যথা পায়।

সূত্র জানায়, এসময় পাশে থাকা আরো এক শিশু শিক্ষার্থীকে কোন অপরাধ ছাড়া মারধর করে তার পাঞ্জাবির কলার ছিঁড়ে দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে সেই গার্ড। অন্যান্য ছাত্ররা শিশুটিকে রক্ষা করতে এলে তাদেরকেও রড দিয়ে মারার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে কোনো সময় তার সামনে দেখলে হাত পা ভেঙে হত্যা করার হুমকি দেন সেই গার্ড।

ঘটনাটি ছাত্ররা মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে পরদিন (গতকাল ১৬ জানুয়ারি শনিবার) বিকালে সেই এলাকার অন্য রাস্তায় হাটতে গেলে মারধরের শিকার শিশু শিক্ষার্থীকে দেখে তার দিকে তেড়ে এসে গালাগাল শুরু করেন সেই গার্ড। এসময় অন্যান্য ছাত্ররা প্রতিবাদ করে মাদরাসায় ফিরে আসে।

সুত্র জানায়, ছাত্ররা মাঠের ঘটনা কোন শিক্ষককে না জানিয়ে মাদরাসার মসজিদে নামাজে অংশ নেন। এদিকে মাগরিবের নামায চলাকালীন সময়ে সেই গার্ড মাদরাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে ১০-১২ জন লোকসহ রড, লাঠি-সোঠা নিয়ে মাদরাসার উপর হামলা করে।

হামলাকারীরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় মাদরাসা, এতে ৩ উস্তাদ ও ৬ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি করানো হয়।

নামাজরত অবস্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন করে মাদরাসায় হামলার ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করতে গেলে মাদরাসায় জি এম বি আছে বলে থানায় পাল্টা অভিযোগ আনে হামলাকারীরা।

হামলাকারীদের অভিযোগের কারণে পুলিশ কারো মামলা গ্রহণ করেননি। মাদরাসায় তদন্ত করে পরবর্তীতে মামলা নেওয়া হবে বলে থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মাদরাসার মুহতামিম ইসলাম টাইমসকে জানান, হামলাকারীরা হামলার পর ৯৯৯ নাইনে ফোন করে মাদরাসায় অস্ত্র বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে। অভিযোগের ভিত্তিতে মাদরাসায় র‌্যাব এসে ভিন্ন চিত্র দেখতে পেয়ে চলে যান এবং মাদরাসার উপর কোনো হামলা হলে তা প্রতিরোধ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

আজ পুলিশের পক্ষ থেকে মাদরাসায় তদন্ত করতে আসার কথা বলা হয়েছে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ মাদরাসায় তদন্ত করতে আসেননি।

-এনটি

পূর্ববর্তি সংবাদপ্যারিসে ৯টি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ম্যাক্রোঁ সরকার
পরবর্তি সংবাদমা-ছেলে হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, বিচারকের মুখে কোরআনের আয়াত!