মেয়ের প্রতি মায়ের ১০টি উপদেশ

মেরাজুল ইসলাম ।।

উমামা বিনতে হারেছ। যেসকল মহীয়সী নারীদের গৌরবগাঁথা আজও ইতিহাসের পাতায় ঝলমল করে তিনি তাদের অন্যতম। সাহিত্যের জগতে ছিল তার পূর্ণ পদচারণা। বিদ্যা-বুদ্ধিতেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়।

তার মেয়ে উম্মে ইয়াস। অত্যন্ত রূপবতী, গুণবতী ও বুদ্ধিমতী মেয়ে। তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্দার বাদশা হারেছ বিন আমরের পক্ষ থেকে। মা-বাবা এ প্রস্তাবটি সাদরেই গ্রহণ করেন এবং তার হাতেই নিজেদের আদরের কন্যাকে তুলে দেন।

বিদায় বেলায় উমামা বিনতে হারেছ অশ্রুসিক্ত নয়নে পরম মমতায় মেয়েকে কাছে টেনে বলেন, আদব-কায়দাসম্পন্ন, শিষ্টাচারী, সদাচারীকে যদি উপদেশ দেয়ার প্রয়োজন না হত আমি তোমাকে কোনো উপদেশ দিতাম না। তবুও তোমাকে কিছু উপদেশ দিচ্ছি। কারণ, উপদেশ বা নসীহত গাফেলদের জন্য হয় স্মারক, তাদের পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়। আর জ্ঞানীদের জন্য হয় সহায়ক। তারা নসীহতের মধ্যে পাথেয় খুঁজে পায়।

মাতা-পিতার স্নেহ-মমতা ও অর্থ-ঐশ্বর্যের কারণে যদি মেয়েদের স্বামীর ঘরে যাবার প্রয়োজন না হত, তাহলে তোমারও প্রয়োজন ছিল না আজ স্বামীর ঘরে যাবার। কিন্তু মেয়েদের স্বামীর ঘরে যেতেই হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা নারীদের সৃষ্টি করেছেন পুরুষের জন্য। আর পুরুষদের সৃষ্টি করেছেন নারীদের জন্য।

শোনো! যে ঘরে, যে পরিবেশে ছোট থেকে এই পর্যন্ত তোমার বেড়ে ওঠা, আজ সেই ঘর ও সেই পরিবেশকে ছেড়ে তুমি চলে যাচ্ছ সম্পূর্ণ এক অচেনা-অজানা পরিবেশে। পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের ছেড়ে তুমি পাড়ি জমাচ্ছ এমন একজন মানুষের কাছে, যার সঙ্গে তোমার পূর্ব পরিচয় নেই। আজ থেকে তোমার ওপর তারই পূর্ণ অধিকার। সে-ই তোমার অভিভাবক। তুমি নিজের সর্বস্ব তার জন্য বিলিয়ে দাও, তাহলে সেও তার সবকিছু তোমার জন্য উজাড় করে দেবে।

প্রিয় মেয়ে আমার! তোমাকে আমি দশটি নসিহত করছি। এগুলো তুমি খুব ভালোকরে স্মরণ রাখবে।

এক. অল্পতেই তুমি সন্তুষ্ট থাকবে! অল্পেতুষ্টি ও পরিতৃপ্তিকে সবর্দা নিজের সঙ্গী বানিয়ে নেবে।

দুই. যে কোনো আদেশ পালন করার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখবে।

তিন. যেসকল স্থানে সচরাচর চোখ যায় সেদিকে তুমি সতর্ক দৃষ্টি রাখবে! এবং দুর্গন্ধযুক্ত স্থানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে! যেন তোমার অপ্রীতিকর কোনো কিছু তার চোখে না পড়ে এবং কোনো দুর্গন্ধ যেন তার নাকে না যায়।

চার. সে যখন খেতে বসবে, তুমি যত্মসহকারে তার তদারকি করবে। আর তার ঘুমের সময় যথাসম্ভব শান্তভাব ও নীরবতা বজায় রাখবে। কারণ, ক্ষুধা মেযাজের মধ্যে উষ্ণতা সৃষ্টি করে আর ঘুমের অভাব ক্রোধের উদ্রেক করে।

পাঁচ. তার ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ আন্তরিকভাবে সংরক্ষণ করবে। এবং নিজের ও পরিবারের প্রতি খুব যতœশীল হবে। কারণ, ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করতে পারা উত্তম ব্যবস্থাপনার পরিচায়ক। আর নিজের ও পরিবারের প্রতি যত্ম নিলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় হয়।

ছয়. সে হয়ত তোমার কাছে তার একান্ত গোপন কথা বলবে। তুমি কখনও কোনো অবস্থাতেই তার সে গোপন কথাগুলো কারো কাছে প্রকাশ করবে না। যদি প্রকাশ কর, নিজের বিশ্বস্ততা হারাবে।

সাত. যদি সে তোমাকে কোনো কাজের আদেশ করে তৎক্ষণাৎ সেটা পালন করার চেষ্টা করবে। তার কোনো আদেশ অমান্য করো না এবং তার কোনো হুকুমের অবাধ্য হয়ো না। যদি তার অবাধ্য হও, সে ক্রোধান্বিত হয়ে তোমার সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে।

আট. তার যখন হৃদয় ভগ্ন থাকবে, সে যখন বিষণœ থাকবে তখন তুমি তার সামনে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করো না। এটা খুবই গর্হিত একটা অভ্যাস।

আবার সে যখন আনন্দিত ও খুশি থাকবে, তখন তুমি তার সামনে গোমরামুখ ও বিষণœ থেকো না। কেননা এতে সে ভীষণ বিরক্তি বোধ করবে।

নয়. তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এমন কাজগুলোর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিবে। তাহলে সেও এমন কাজগুলো করবে, যেগুলোর মাধ্যমে তোমার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

দশ. আর যেভাবে চললে সে খুশি হবে, যেভাবে চললে তার মর্জি মাফিক হবে তুমি সেভাবেই চলার চেষ্টা করবে। তাহলে সেও এমনভাবে চলবে, যেভাবে চললে তুমি খুশি হবে।

মনে রাখবে! নিজের পছন্দের উপর অন্যের পছন্দকে এবং নিজের বাসনার উপর অন্যের বাসনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া কেউ কখনো কারো প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র হতে পারে না। অন্যের কাছে নিজেকে প্রিয় ও আপন করার জন্য অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়।

এই নেককার রমণী স্বামীর ঘরে গিয়ে মায়ের প্রতিটি উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। এরই বরকতে আল্লাহ তাআলা তাদের সাংসারিক জীবনকে করেছিলেন সুখময়। তার গর্ভে জন্ম নিয়েছিল সাতটি পুত্র সন্তান। তারা সকলেই পর্যাক্রমেয় ইয়েমেনের বাদশা হয়েছিল।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরও এই উপদেশগুলো মেনে চলে শান্তিময় জীবন লাভ করার তাওফীক দান করুনÑ আমীন।

তথ্যসূত্র : আ‘লামুন নীসা ১/৭৪

পূর্ববর্তি সংবাদইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২
পরবর্তি সংবাদকুমিল্লায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, একজনকে কুপিয়ে জখম