ভারতে রামমন্দিরের চাঁদা সংগ্রহ করতে মুসলমানদের বাড়িঘর লুট

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা সংগ্রহকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের  বাড়িঘর লুট করা হচ্ছে বলে  অভিযোগ উঠছে।

ইন্দোর, মান্দসৌর, উজ্জয়িনী-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মুসলিম সমাজের নেতারা অভিযোগ করছেন, রামমন্দিরের চাঁদা তোলার মিছিল ইচ্ছে করে তাদের মহল্লা দিয়ে নিয়ে গিয়ে হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে এবং মসজিদেও ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা হচ্ছে।

রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধেও এই সব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাত দেখানোর অভিযোগ উঠেছে, তবে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার তা জোরালোভাবে অস্বীকার করছে।

বস্তুত সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত হওয়ার পর গত আগস্টেই সেই মন্দিরের ভূমিপূজা সম্পন্ন হয়েছে, এখন চলছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেই মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থসংগ্রহের কাজ।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো বিভিন্ন সংগঠন বাইক মিছিলের আয়োজন করে মন্দিরের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেও শুরু করেছে।

মধ্যপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এই সব মিছিল যখন মুসলিম মহল্লা দিয়ে যাচ্ছিল তখন এলাকাবাসী মিছিল লক্ষ্য করে পাথর বা ইট-পাটকেল ছুঁড়েছে বলে হিন্দুত্ববাদীরা অভিযোগ করছেন।

মুসলিম সমাজের নেতারা পাল্টা বলছেন, মিছিল থেকেই হিংসায় প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে, এমন কী মসজিদের মাথায় উঠে মিনার ভাঙার চেষ্টা পর্যন্ত হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর এই ধরনেরই তীব্র সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সাক্ষী ছিল ইন্দোরের কাছে চন্দন খেড়ি গ্রাম।

ওই গ্রামের সরপঞ্চ বা মোড়ল দিলনওয়াজ প্যাটেল বলছিলেন, “রামমন্দিরের নামে চাঁদা তোলার মিছিল বের করে আসলে গোটা রাজ্যেই সাম্প্রদায়িক পরিবেশকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এই সব মিছিলের উদ্দেশ্যই হল মুসলিমদের ভয় দেখানো।”

“বিভিন্ন মুসলিম পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে, অথচ পুলিশ এই সব ঘটনায় শুধু মুসলিমদেরই আটক করছে – হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।”

“প্রত্যক্ষদর্শীদের তোলা ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা গেছে মসজিদের মাথায় চড়ে মিনার ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা হচ্ছে না।”

একই সময়ে অবিকল প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটার অভিযোগ এসেছে মান্দসৌর বা উজ্জয়িনী জেলা থেকেও।

পুলিশের কাছে ধরনা দিতে আসা মুসলিম নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজনকে ও অন্য সম্প্রদায়ে আপনাদের বন্ধুদের কাছে গিয়েও বলুন পুলিশ বিন্দুমাত্র পক্ষপাত দেখাবে না।”

“দোষীরা সবাই গ্রেপ্তার হবে। আমাদের চোখে সবাই সমান এবং এটাও মনে রাখতে হবে সম্প্রীতি বজায় রাখার দায়িত্বও সব ধর্মের লোকেদের, সব নাগরিকের।”

কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং, দলের এমএলএ আরিফ মাসুদরা অবশ্য অভিযোগ করছেন, বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের উসকানিমূলক বক্তব্যেই পরিস্থিতি আরও বিষিয়ে উঠছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান যদিও আশ্বাস দিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে – ‘তারা যে-ই হোক না কেন’!

তবে রামমন্দিরের জন্য চাঁদা সংগ্রহে যে কোনও বাধা দেওয়া হবে না, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ক্যাবিনেট মন্ত্রী বিশ্বাস সারং।

বিবিসি

পূর্ববর্তি সংবাদওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দিতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘কড়াকড়ির’ অভিযোগ
পরবর্তি সংবাদস্বাধীন অঞ্চল পুনর্গঠনে পাকিস্তান ও তুরস্ককে আমন্ত্রণ জানাল আজারবাইজান