সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা বিবেকের ছোট ভাই হিসেবে আবির্ভূত হয়েছন। রাজনৈতিক অসততা, নির্বাচনী জালিয়াতি এবং দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা পদ-পদবীধারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। নোয়াখালীতে বিভিন্ন পথসভা ও জনসংযোগে তিনি একের পর এক ‘বেফাঁস’ কথা বলেই চলেছেন। দলের উর্ধ্বতন নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হলেও স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কাউকেই মানছেন না। গত কয়েকদিন ধরেই চলছে এ অবস্থা।
গতকাল রোববারও বন্ধ ছিল না তার স্পষ্ট বক্তব্য। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এই আবদুল কাদের মির্জা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আল্লাহর গজব পড়বে। আমি ঈমানদার।’
তিনি বলেন, ‘তাদেরকে (কেন্দ্রীয় নেতাদের) তোষামোদ করতে হবে। এগুলোর আমার দরকার নেই। আমি স্পষ্ট কথা বলি। আমি বেঈমানের চেহারা একটু দেখব। আমি ওয়াদা রক্ষা করি।… কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত যারা এগুলো করতেছে, আল্লাহর গজব পড়বে। আমি ঈমানদার।’
রোববার সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে দলের নানা কারসাজির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় অনেকেই তার ওপর চটেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল বলেন, ‘নোয়াখালী আওয়ামী লীগ ও ফেনী আওয়ামী লীগ নেতারা আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র-শস্ত্র পাঠিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই। পৌরসভা আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই। ডিসি, এসপি, নির্বাচন কর্মকর্তা আমার সঙ্গে নেই।’
কাদের মির্জা আরো বলেন, ‘আমি সত্য কথা বলতেছি। আমি সত্য কথা বলব। এরা কেউ আমার সঙ্গে নেই। আমার এখানে যারা আসেন, তারা চেহারা দেখানোর জন্য আসেন।’
তার মতে, বসুরহাট লোকজন ওবায়দুল কাদেরকে ভয় পান। তারা একরাম চৌধুরী ও নিজাম হাজারীকেও ভয় পান। এর আগে তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নোয়াখালীর বেশিরভাগ নেতা পালিয়ে যাওয়ার দরজা খুঁজে পাবেন না।
আরো পড়ুন: লাখ লাখ তরুণ-তরুণী জীবদ্দশায় থেকেও ‘মরে যাচ্ছে’
তার এসব বক্তব্য দলের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মির্জা আব্দুল কাদেরের বক্তব্যকে সরকারের ভোট কারচুপি নানারকম অনৈতিকতার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। অপরদিকে বড় ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও তার এসব ‘সাহসী’ বক্তব্য পছন্দ করছেন না। আব্দুল কাদের মির্জার বক্তব্যে বড় ভাইয়ের এই অসন্তোষের কথা ফুটে উঠেছে।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে বড় নেতা হতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন বলেও গতকাল মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ছাত্র জীবনে আমি ঢাকায় ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি আমাকে চট্টগ্রামে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।… ওবায়দুল কাদেরের ধারণা ছিল আমি ঢাকায় পড়াশোনা করে রাজনীতি করলে হয়তো তার চেয়ে বড় নেতা হয়ে যাব। তাই তিনি চাননি আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি।’
‘আমি ৪৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি যখন নোয়াখালী ও ফেনীর অপরাজনীতি নিয়ে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি তখন দলের এক শ্রেণির চাটুকার আমার বক্তব্যকে এডিট ও বিকৃত করে তার অডিও-ভিডিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার ভাই ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠায়। নেতাদের হিংসা আমার মিটিংয়ে কেন এতো লোক হয়।’
আরো পড়ুন: পেঁয়াজ জাগরণ: খাদ্যপণ্যে দরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণ
বড়ভাই ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ লোক আমাকে পাগল-উন্মাদ বলে। আমি কি পাগল-উন্মাদ? আমি যখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, নোয়াখালী, ফেনীর অপরাজনীতির কথা প্রতিবাদ করি, ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, আমি আমার এলাকার মানুষের ন্যায্য অধিকার, গ্যাসের অধিকারের জন্য আমি কথা বলি, আমার এলাকার যেখানে গ্যাস পাওয়া গিয়েছে সেটার নাম শাহজাদপুর, হাবিবপুর। আজ সেখানে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র লেখা হয়। আমি এর প্রতিবাদ করি।’
‘আমি যখন প্রতিবাদ করি তখন বলে আমি নাকি পাগল, আমি উন্মাদ।’
ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ‘সত্যভাষী’ এই ছোট ভাই বিবেকের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে থাকলেও বাস্তবে নানারকম হুমকি ও আতঙ্ক তাকে তাড়া করছে। তিনি জানান, মোবাইল ফোনে তাকে এক নারী যুব মহিলা লীগের পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন। গালমন্দের এই ঘটনা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বিষয়টি তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আরো পড়ুন: ইমামের গায়ে হাত তোলা এই নরপশুদের কে থামাবে?
রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদেরকে নিয়ে স্থির কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না। কেউ ধারণা করছেন, বড় ভাই মন্ত্রীর জ্ঞাতসারেই ছোট ভাই এসব পাগলামো বক্তব্য দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, দেশজুড়ে ক্ষমতাসীন দলের নানা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে কামড়াকামড়ি, দখল ও দোষারোপের খেলা চলছে। ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইয়ের খেলাটা একটু প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু তীব্র অসুস্থতায় বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে এসে এই ‘স্পষ্টভাষী মুখখোলা’র বাস্তব কারনটা যে আসলে কি, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
আরো পড়ুন: ‘সত্যবচনে’র জন্য সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাইকে ড. আসিফ নজরুলের অভিনন্দন
-এনটি