প্রেমিকের বাসায় ‘ধর্ষণে’র শিকার স্কুলছাত্রীর মৃত্যু: সামাজিক মাধ্যমে নানামাত্রিক পর্যালোচনা

জুলফিকার জাহিদ ।।

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে প্রেমিকের বাসায় গিয়ে ‘ধর্ষণে’র শিকার হন ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন। জানাজা শেষে শনিবার সকাল ৭টায় তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরের গোপালপুরে তাকে দাফন করা হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ধর্ষণে’র ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই আনুশকা নুর আমিনের মৃত্যু হয়েছে।’

এদিকে, ওই স্কুলছাত্রীর দাফন শেষে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহানের শাস্তিসহ এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে তদন্তপূর্বক তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানান তারা।

শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে দেশের সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। সমাজের অবক্ষয়, তারুণ্যের অধঃপতন, সন্তানের অনৈতিকতা রোধে অভিভাবকের ভূমিকা, রাষ্ট্র ও দায়িত্বশীলদের দায়বদ্ধতাসহ অনেকগুলো বিষয় একসাথে উঠে এসেছে এই ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে। সব থেকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে যেই প্রশ্নটি তাহলো- এই ঘটনা এবং এজাতীয় পরিস্থিতিতে আমরা প্রকৃত দোষী সাব্যস্ত করবো কাকে?

এনিয়ে নানামূখী পর্যালেচনার মধ্যে দিহানের বিরুদ্ধে করা আনুশকার বাবা মো. আল আমিনের মামলার এজহারের দিকে তাকালে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় যখন আনুশকা তার মাকে ফোন করে জানায় সে নোট আনতে বন্ধুর বাসায় যাচ্ছে, কোন রকম আপত্তি ছাড়াই তার মা অনুমতি দেন তাকে।

পরবর্তীতে দুর্ঘটনার পর হাহুতাশ এবং অভিযোগ তোলা হয় দিহানের দিকে। অভিযুক্ত দিহানকে গ্রেপ্তার করে ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তি নিয়েছেন পুলিশ। দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত সমাজের কিছু মানুষ এবং আনুশকার বাবা মায়ের কাছে তাদের সম্পর্ক মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল; কিন্তু দুর্ঘনার পরই তুলকালাম কাণ্ড।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন আজ যদি আনুশকার কিছু না হতো তাহলে কি দিহানের প্রতি অভিযোগ তুলতেন তার মা। বলতেন আমার মেয়েকে ফুঁসলিয়ে অত্যাচার করেছে দিহান! দুর্ঘটনা না ঘটলে এমন কোন অভিযোগই তোলা হতো না। হয়তোবা লিভ টু গেদারের নামে চলতেই থাকতো তাদের এইসব অনৈতিকতা।

আনুশকাদের সাথে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে সবার টনক নড়ে। এর আগে সবাইকে দেখা যায় বেখবর। বর্তমান সমাজে আত্মীয়ের ছেলের সাথে মেয়েদের মোটরসাইকেলে ঘোরাফেরা; কিংবা মেয়ে একলা বন্ধুদের বাসায় গ্রুপ স্টাডি করতে যাওয়া এক রকম স্বাভাবিক ব্যাপার। ধর্মীয় অনুশাসন ছেড়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ করতে গিয়ে অবাধ মেলামেশার নামে এইসব গর্হিত দুর্ঘটনার জন্য শুধু ছেলে কিংবা মেয়ে নয় অভিভাবকরাও সমানভাবে দায়ী বলছেন সমাজচিন্তকগণ।

বর্তমান সমাজে ১৮ বছরের আগে ছেলে মেয়েদের বিয়ে করা নিষেধ। ১৮ বছরের আগে বালেগ  সন্তানকে বিয়ে করাতে গেলে বাবা মাকে প্রসাশনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ১৮ বছরের নিচের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের বিয়ে পড়াতে গিয়ে মসজিদের ইমামকে জেল-জরিমানার মতো ঘটনারও সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে। অথচ এই ১৮ বছরের নিচের ছেলে মেয়েদের থেকে চারিত্রিক স্খলন জাতীয় ঘটনা নিয়ে কথা নেই দেশের কথিত সুশীল শ্রেণী ও প্রসাশনের। আশ্চর্য এক সমাজ ব্যবস্থা চালু হতে শুরু করেছে দেশে। বিয়েকে কঠিন করে বিবাহ বর্হিভূত শারীরিক সম্পর্ক এই সমাজে এখন ডালভাত, তার ভয়াবহ বিস্ফোরণ আনুস্কা ও দিহানের মতো ঘটনাগুলো।

বর্তমানে দেশে ধর্মীয় অনুশাসনের কথা বললেই সর্বনাশ! তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এক শ্রেণীর কথিত প্রগতিশীল পশ্চিমাপ্রেমী। পশ্চাদপদতা, সেকেলে আরো কথা! আর ধর্মীয় বিধি-বিধান জানিয়ে আলেম সমাজ কোন কথা বললেই হয়েছে! আলেম সমাজ এখন তাদের চক্ষুশূল! বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ পেছনে পড়ে থাকছে নাকি হুজুরদের কারনে। ধর্মীয় অনুশাসন ও আলেম সমাজকে থোড়াই কেয়ার করার এই প্রবণতা আজ কোথায় দাঁড় করাচ্ছে দেশকে।

আনুশকার দুর্ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি চান সবাই। কিন্তু লোক চক্ষুর আড়ালে আরো কতজনই না দিহানদের ঘরে নির্জন সময় কাটাচ্ছে। দুর্ঘটনা না ঘটলে সবই তরুণ্যের উদ্দিপনার নামে এক রকম ঢাকা পড়ছে। দুর্ঘটনা, দুজনের বনিবনা না হওয়া, পরস্পরের অসন্তোষের ক্ষেত্রেই ফেঁসে যাচ্ছেন দিহানরা। কালিমা লেপ্টে যাচ্ছে তাদের মুখে। এমন চারিত্রিক অবক্ষয়ের শিকার দিহানদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিই কাম্য। কিন্তু তারুণ্যকে এমন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পশ্চিমাপ্রেমী মিডিয়া ও কথিত সুশিলদেরই দায়ী করতে দেখা গেছে পর্যক্ষেকদের।বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা তোষামোদী মিডিয়া ও কথিত সুশিলদের বরাবরই দেখা যায় তরুণদের ঘর থেকে বের করে বেলেল্লপনায় মাতিয়ে তোলার আয়োজন করতে। তরুণ সমাজকে ধ্বংস করতে তাই এই পশ্চিমা তোষামোদী মিডিয়া ও কথিত সুশিলরা কোনভাবে দায় এড়াতে পারেন না বিশ্লেষকদের মতে।

ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী বিকৃত দৈহিক সম্পর্কের কারনেই মৃত্যু হয়েছে আনুশকার। বর্তমানে অবাধে অশ্লীল বিভিন্ন ভিডিওর ছড়াছড়িও এর জন্য প্রধানভাবে দায়ী। যুব সমাজের চারিত্রিক স্খলন রোধে এইসব সাইড ও ভিপিএনের ব্যবহার বন্ধ করতে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের একান্ত মনোযোগ কাম্য বলে পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

সর্বোপরি অনুশকার ঘটনা বর্তমান সমাজের হাজারো তরুণ-তরুণীর জন্য শিক্ষার উপকরণ। এমন অবৈধ সম্পর্কে কেউ জড়িয়ে থাকলে এখনো ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা প্রয়োজন। মৃত্যু যেকোন সময় কড়া নাড়তে পারে দরজায়। এমন পরিস্থিতিতে আনুশকার মৃত্যূু সবার জন্য ব্যথার। কোনভাবেই এমন মৃত্যু কাম্য নয়। কিন্তু আনুশকাদের এমন মৃত্যুর পরও অভিভাবকদের টনক না নড়লে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটানার জন্য আফসোস করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

ইজে

পূর্ববর্তি সংবাদভারতে বার্ড ফ্লু আতঙ্ক: চিড়িয়াখানাসহ ১০ দিনের জন্য বন্ধ হাস-মুরগির বাজার
পরবর্তি সংবাদভারতে মোদিকে নিয়ে টুইট করে চাকরি হারালেন সিনিয়র পাইলট