যে বাবাই ছিল পরিবারের সবার ঠাঁই, আজ তাকেই ঠাঁই দেয়ার কেউ নেই

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: যে বাবাই ছিল এক সময় ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সবার ঠাঁই আজ তাকেই ঠাঁই দেয়ার কেউ নেই। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ৭৫ বছর বয়সী আব্দুস সালাম। কিন্তু এই বৃদ্ধের প্রতি খেয়াল নেই চার সন্তানের কারো। সন্তানদের সংসারে দু-বেলা দু-মুঠো খাবারও জোটেনি। তবে ছেলের বউদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ঠিকই জুটেছে। তাই কষ্ট বুকে চেপে ছয় মাস আগে বাড়ি ছাড়েন দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম। এ ছয় মাস রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ভবঘুরে জীবনযাপন করছেন তিনি। তীব্র শীতেও খোলা আকাশের নিচে কাটছে তার রাত। নেই খাবারের সংস্থান। পথচারীদের অনুগ্রহ নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে শুয়ে ছিলেন আব্দুস সালাম। ময়লার আস্তরণ জমেছে শরীরে। তার চারপাশে ভনভন করছে মাছি। কাশছেন মাঝে মাঝেই। অধিকাংশ পথচারীর নজর নেই তার দিকে। ক্ষীণকণ্ঠে আব্দুস সালাম বলেন, দুই দিন ধরে তিনি কারো সাহায্য পাননি। তাই দুই দিন তার পেটে খাবারও জোটেনি। শীতে খোলা আকাশের নিচে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বৃদ্ধ জানান, ভাত খেতে তার সমস্যা হচ্ছে। হাতে রুটি-কলা পেয়ে শোয়া থেকে উঠে বসেন। এরপর শোনান তার জীবনে ঘটে যাওয়া করুণ কাহিনীর বর্ণনা।

আব্দুস সালাম জানান, তার বড় ছেলে বিপুল ফুলবাড়ি বাজারের কসমেটিক্সের দোকান এবং ছোট ছেলে বিপ্লব একই বাজারে ওষুধের দোকান চালান। কিন্তু আজ তার অসুখেই ওষুধ নেই। পেটে খাবারও নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তারাও স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে আছেন। কেবল কারো সংসারে ঠাঁই নেই আব্দুস সালামের।

অতীত স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, চার ছেলে ও মেয়ে এবং স্ত্রী লাইলা বেগমকে নিয়ে তারও ছিল সুখের সংসার। এলাকায় মুদিখানার দোকান ছিল। বিভিন্ন কৃষিপণ্য কেনাবেচাও করতেন। ঢাকা ও রাজশাহীতে যাতায়াত ছিল তার। রাজশাহীতেও ব্যবসা করেছেন। পৈত্রিক সূত্রে পেয়েছিলেন বসতভিটা। ব্যবসার আয় থেকে চার বিঘা ধানি জমিও কেনেন। ঐ জমি এখনো তার নামেই আছে। কিন্তু ফসল ভোগ করতে পারেন না।

আব্দুস সালাম বলেন, বছর দশেক আগে স্ত্রী লাইলা বেগম মারা যান। এরপর থেকেই তার ওপর বাড়তে থাকে সন্তানদের অবহেলা। এক পর্যায়ে তা চরমে পৌঁছায়। দিনে এক বেলাও খাবার জুটত না। কথায় কথায় খোটা দিতেন ছেলের বউয়েরা। কষ্ট-অভিমান বুকে চেপে সবার অজান্তে বাড়ি ছাড়েন তিনি। ওঠেন রাজশাহীর ট্রেনে। সেই থেকেই তিনি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় আছেন।

বাড়ি ফিরতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সালাম বলেন, তারা মানুষ না। তাদের কাছে গিয়ে কী লাভ? আর কয়েক দিন রাজশাহীতে থাকবেন। তারপর অন্য কোথাও চলে যাবেন। আল্লাহই তার দিন পার করবেন। এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই।

ইজে

পূর্ববর্তি সংবাদভারতের মহারাষ্ট্রে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, দম বন্ধ হয়ে ১০ শিশুর মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদইংলিশ মিডিয়াম ছাত্রী অনুশকার দাফন সম্পন্ন