‘মানবিক ইস্যুর বিপরীতে ভাস্কর্য নিয়ে আলেমদের সাথে সরকার-বামদের বিরুদ্ধাচারণ দুঃখজনক’

ছবি: টাইমস গ্রাফিক্স

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

রাজধানী ঢাকার ধোলাইপাড়ে রাস্তার পাশে দুটি মসজিদের মাঝখানে ভাস্কর্য নিমার্ণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে। শরয়ী বৈধতা না থাকার পাশাপাশি দুটি মসজিদের মাঝখানে ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশব্যাপী। এনিয়ে ইসলামের বিধান জানিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মানুষের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ইসলামী সংগঠন ও ব্যক্তিরা। তাওহীদ-শিরকের মতপার্থক্যে ইসলামী সংগঠন ও ব্যক্তিত্বদের পক্ষেই রয়েছে জনতার সমর্থন ও ঈমানী আওয়াজ- অবস্থাদৃষ্টে অন্তত তাই মনে হয়েছে।

তবে ভাস্কর্য নিয়ে আলেম সমাজের অবস্থানের বিপরীতে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে সরকারের দায়িত্বশীল অনেককে। এনিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাও বলেছেন বাম চিহ্নিত মহল। ভাস্কর্য নিয়ে আলেমদের সাথে বামদের বিরূপ আচরণ ও সরকারের দায়িত্বশীলদের কথায় মনে হয়েছে দেশে তৌহিদী জনতার ঈমানী দাবিকে বিতর্কিত করা ছাড়া বর্তমানে কথা বলার মতো আর কোন ইস্যুই যেন নেই।

চট্টগ্রামের ওমর গণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আফম খালিদ হোসেন ইসলাম টাইমসকে বলেছেন, দেশে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আসছে, প্রায় গত সপ্তাহ থেকেই প্রতিদিন বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এমন পরিস্থিতিতে ভাস্কর্য নিয়ে আলেমদের সাথে সরকার ও বামদের এমন বিরুদ্ধাচারণ দুঃজনক।

এই শিক্ষাবিদের ভাষায়, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় আমাদের চিকিৎসাখাতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েছে, প্রয়োজনীয় আইসিইউ সেবা না পেয়ে অনেক রোগীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর আমরা সবাই জানি, তাই শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে সুরক্ষা পেতে সরকারের দায়িত্বশীলরা আরো সচেতনতার পরিচয় দিতে পারতেন। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আরো বেশি ফোকাস দিতে পারতেন।

ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে শিক্ষাবিদ ড. আফম খালিদ হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ইরাকে সাদ্দাম, রাশিয়ায় কমিউনিস্ট নেতা লেলিন, তাদের ক্ষমতার সময়কালে নিজেদের ভাস্কর্য তৈরি করেন, কিন্তু তারা ক্ষমতা হারানোর পর সেই ভাস্কর্যগুলো গুড়িয়ে দেয় পরবর্তী ক্ষমতাসীনরা। তাই এই শিক্ষাবিদের পরামর্শ হলো, যেসব কীর্তি ক্ষমতার পালাবদলে পরবর্তীরা চাইলেই নষ্ট করতে পারেন, এমন কিছু না করে মানবিক কোন কাজ করা উচিত যা আগামী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরবে।

এদিকে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির প্রফেসর জনাব শাহেদ হারুন বলছেন, দেশে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানহীনতা, শীতে দরিদ্র মানুষের কষ্টসহ আরো অনেক মানবিক ইস্যু রয়েছে, যেগুলোতে ফোকাস দেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলছেন, সবসময়ের মতো এবারো ঢাকা বায়ু দূষণের শহরের তালিকায় এক নম্বরে উঠে এসেছে, কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, একটি মহল সরকারের তোষামোদী ও আনুকুল্য পেতে সরকারের কাছে ভাস্কর্য ইস্যুটাকে বড় করে তুলছে।

তার ভাষায়, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, নিজের নামে স্বর্ণের মূর্তি বা ভাস্কর্য নিমার্ণ বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছে ছিল- এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ যেন অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে শিরকের সাথে মিলিয়ে মহান নেতার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করা-বলছিলেন প্রফেসর জনাব শাহেদ হারুন।

ভার্স্কয ইস্যুতে বর্তমানে কেউ কেউ উমাইয়া শাসনামলকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন- এক্ষেত্রে প্রফেসর শাহেদ হারুন বলছেন, – উমাইয়া খেলাফতকাল; যাকে মুসলিম শাসনামলের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সোনালী যুগ বলা হয়, ইতিহাস ঘেটে সে যুগে গান চর্চার কথা পাওয়া গেলেও সে যুগে কোন খলিফা ভাস্কর্য বা মূর্তি তৈরি করেছেন এমন কোন নজির নেই।

উমাইয়া শাসনামলের অনেক নির্দশন রয়ে গেছে এখনো, সেসবের মাঝে বিখ্যাত অনেক মসজিদ পাওয়া গেলেও কোন ভাস্কর্য পাওয়া গেছে বলে কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি- বলছেন প্রফেসর জনাব শাহেদ হারুন বলছেন।

ভার্স্কয ইস্যুতে কিছু তোষামোদী মহল সরকারের কান ভারি করায় বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, অচিরেই তার অবসান ঘটবে, সরকার প্রধান দেশের আপামর জনতার প্রাণের আওয়াজ বুঝতে পারবেন এবং সঠিক ব্যবস্থা নিবেন বলে প্রত্যাশা প্রফেসর জনাব শাহেদ হারুনের।

-আরএম

পূর্ববর্তি সংবাদরাজশাহীতে পুলিশ কর্মকর্তার প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ভাইরাল
পরবর্তি সংবাদএকদিনে সুস্থ আরো ২৫৭২ রোগী, মৃত্যু ২৪, শনাক্ত ২২৫২