হাজী ফারুক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম বেঙ্গালুরু, ইন্ডিয়া।।
মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী রহমতুল্লাহি আলাইহির সময় থেকেই পুরো পৃথিবীতে শুধুমাত্র দুটি বিশ্ব ইজতেমা হত। একটা রাইবেন্ডের ইজতিমা আর অপরটি বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমা। পুরো পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের শুরার সদস্যরা সমবেত হয়ে এ ইজতেমাগুলোতে মশওয়ারা করতেন।
এই বছরও রাইবেন্ডে ৬,৭,৮, এই তিন তারিখে ইজতিমা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাইবেন্ড মারকাজের মুরুব্বীরা মহামারীর কারণে এবার ইজতিমা হওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাই পরামর্শের ভিত্তিতে সেখানকার শুরার মুরুব্বিগণ সরকারের কাছে আবেদন জানান যে, “অনেক বছর ধরে আমাদের রাইবেন্ডে ইজতেমা হচ্ছে , এ বছরও আমরা সেখানে ইজতেমা করতে চাচ্ছি।” পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে বলা হলো যে, “অবশ্যই আপনারা ইজতেমা করুন, তবে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি লক্ষ্য রেখে করুন।”
দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে, “এটা তো শুধু আপনাদের ইজতেমা নয়, এটা আমাদের সবার ইজতেমা।” স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দেয়া হলো যে, ইজতেমা অবশ্যই হবে, তবে সমাবেশ যেন কম হয় এবং সবাই যেন অবশ্যই মাস্ক পরিধান করে।
রাইবেন্ড এর মুরুব্বিগণ এ বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন যে, মানুষের সমাগম কিভাবে কম করা যায়? কারণ, সাধারণত প্রতি বছর যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ একত্রিত হতো, সেখানে এবার মাত্র ৫০ হাজারে কিভাবে সীমাবদ্ধ করা যায়? অতঃপর পরামর্শ হলো যে, ইজতেমায় যে জামাতগুলো শরিক হবে, সেখানে জামাতের সাথীদের সংখ্যা শুধু ১২ জন হতে হবে এবং প্রত্যেকে জামাতবদ্ধ হয়ে ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হবেন। এ ছাড়াও প্রত্যেক জামাতের কাছে মারকাজের পক্ষ থেকে দেয়া অনুমতিপত্র অবশ্যই থাকতে হবে।
এ কারণেই এবছর রাইবেন্ড ইজতেমায় প্রত্যেক হালকা থেকে ১২ জন সাথী জামাত নিয়ে পৌঁছেছেন এবং কিছু কিছু মসজিদে চিঠি পাঠিয়েও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আপনাদের মসজিদ থেকে কোন্ দুইজন সাথী ইজতেমায় যাবেন, তা যেন নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়। এই কারণেই এবছর সবাই জামাতবদ্ধ হয়ে এসেছেন এবং অনুমতিপত্র দেখিয়ে তারপরে ময়দানের ভিতরে প্রবেশ করেছেন।
কারণ, এবছর পুরো ময়দানকে কাপড় দিয়ে আড়াল করে ফেলা হয়েছিল, যাতে কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে না পারে। এবার রাইবেন্ড ইজতেমায় শরিক হওয়া আমাদের কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছিল; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সম্ভব করে দিলেন এবং ইজতেমা শুরু হওয়ার মাত্র একদিন আগে ভিসা পেয়ে গেলাম।
কিন্তু তারপরও টিকিট পাচ্ছিলাম না। যে কারণে আমরা দুবাই চলে গেলাম এবং ১৫ ঘণ্টা ট্রানজিটে অপেক্ষা করে সেখান থেকে ফ্লাইটে দুবাই হয়ে রাইবেন্ড ইজতেমার তৃতীয় দিন সকালে আমরা সেখানে পৌঁছলাম। এভাবে মাত্র দুই ঘণ্টার সফর দুই দিনে গিয়ে সমাপ্ত হলো।
রাইবেন্ড মারকাজের সাথীরা আমাদের জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। অথচ পাকিস্তানে বয়ান করার মত অনেক হযরত রয়েছেন। কিন্তু তারা আমাদের বিলম্ব দেখে প্রথম এবং দ্বিতীয় দিন কারা কারা বয়ান করবেন তা নির্দিষ্ট করে নিলেন। তবে শেষ দিনের সকল বয়ান মাওলানা নযরুর রহমান সাহেব আমাদের জিম্মায় রেখে দিলেন। যে কারণে আখেরি দোয়া পর্যন্ত সব বয়ান আমাদেরকেই করতে হলো।
অনুবাদ: মাওলানা শাহাদাত হুসাইন
এম এস আই