“ম্যারিটাল রেপ”: আমাদের কবে বোধোদয় হবে!

মুহাম্মদ হাসান মুরাদ ।।

সকাল গড়িয়ে দুপুর।একটু বিশ্রামের জন্য কাত হলাম। শুয়ে একটি  জাতীয় দৈনিক ওপেন করলাম।একটি শিরোনাম নজর কাড়ল। বৈবাহিক ধর্ষণঅপরাধ হিসেবে গণ্য করতে আইনি নোটিশ।অদ্ভুত শিরনাম। কিছুটা স্তম্ভিত হলাম।ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধষর্ণ আবার কেমন করে হয়? আরো কয়েকটি নিউজ দেখলাম।সেখানে তথ্য দেয়া হয়েছে ২৭টি জেলাতে বৈবাহিক ধর্ষণ ঘটেছে। জাতিসংঘ থেকে নাকি ১৯৯৩ সালে এটাকে মানবাধিকার লংঘন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।প্রায় ১৫০টি দেশে এটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।আমাদের দেশে এটাকে এখনো অপরাধ হিসাবে গণ্য কারা হয়নি, তাই এক নারী সাংবাদিক বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের কাছে নোটিশ করেছেন।অবশ্য সে সংবাদে বৈবাহিক ধর্ষণের কোন বিবরণ দেয়া হয়নি। তবে অন্য আরেকটি নিউজ মারফতে জানতে পেলাম,স্ত্রীর অমতে স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ককেবৈবাহিক ধর্ষণবলা হয়েছে।স্ত্রী হল স্বামীর জন্য ইন্দ্রিয় চাহিদা পূরণের হালাল ক্ষেত্র।এটা স্বামীর অধিকার।বিবাহের অন্যতম উদ্দেশ্যের এটাও একটি।বিবাহের পর স্বামীস্ত্রীর মিলন এটা তাদের একান্ত ব্যাপার।তবে স্বামীর অধিকার আছে স্ত্রীকে আহবান করলে স্ত্রী তার ডাকে সাড়া দেবে।সেখানে স্ত্রীর কিছুটা অমত থাকলেও না করার ইখতিয়ার নেই।

হযরত আবু হুরাইরা রা. বলেন রাসুল . বলেছেন: কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহবান করে,কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নি:সন্দেহে আসমানবাসী তার প্রতি অসুন্তষ্ট থাকে যাবত না স্বামী সে স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়। মুসিলম শরীফ৩৪০৯। আরেক বর্ণনায় এসেছে আবুহুরাইরা রা. বর্ণনা করেন নবী . বলেছেন যদি কোন পুুরুষ তার স্ত্রীকে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে আর তার স্ত্রী অস্বীকার করে তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা স্ত্রী ওপর লানত বর্ষণ করতে থাকে। বুখারী শরীফ৪৮১৪) ইবনু আবি জামরাহ রহ. বলেন, এখানে বিছানায় ডাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল মিলন করা। যেমন বলা হয়আলওলাদু লিল ফারাশ’। ইমাম নববী রহ.বলেন সে স্ত্রী অপরাধ থেকে তাওবা অথবা স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়া পর্যন্ত গুনাহগার হবে। এটা হারাম।শরুহু নববী আলা মুসলিম৮/১০.

বিবাহের মাধ্যমে স্বামীস্ত্রী বৈধ মিলামিশার অনুমদন পায়।তাছাড়া হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায় স্বামী যদি স্ত্রীকে আহবান করে তবে স্ত্রীকে সে আহবানে সাড়া দেয়া জরুরি।সুতরাং স্ত্রীর অমতে তার সাথে দৈহিক মিলনকেধর্ষণবলা ইসলামের বিধানকে বিকৃত করার নমান্তর। সমাজে কিছু পুরুষ অবিবেচক। তাদের হাতে স্ত্রী জুলুমের স্বীকার হয়।এটা বাস্তব।তবে সংকট নিরসনের জন্য পারিবারি,সামাজিক,ইসলামিক নীতিমালা আছে।দেশেরও আইন ব্যবস্থা আছে।প্রয়োজনে সে আইনের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। স্বামীস্ত্রীর জীবন ব্যবস্থা আল্লাহর এক অপার নিয়ামত।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছেআর তোমরা নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করসুরা নিসা১৯আরো ইরশাদ হচ্ছে, আয়াতের অর্থ: আর এক নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন,যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী আছে।(সুরা রুম২১)

স্বামীস্ত্রী উভয়ে  স্বচ্ছন্দে জীবন যাবন করবে। তবে কখনো তার কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে। সংকট তৈরি হলে সেটা নিরসনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। এটা না করে মস্তিষ্কপ্রসূত বুদ্ধিদ্বারা একটি অভিনব দাবি উত্থাপন করলে সংকট আরো শক্ত হবে।তাছাড়া ধর্ষণতো একটি জঘন্য অপরাধ।এর জন্য ইসলামি শরিয়ত কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছে।তাহলে কি বৈধ মেলামেশাতেও শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে? এটাকেও জঘন্য পাপ বলে স্বীকার করতে হবে? একজন মুমিন হিসাবে সব বিষয়ে ইসলামের নিদেশনা জানা এবং মানা অপরিহার্য। ইসলাম ছেড়ে  মানবাধিকারের নামে ভিন্ন ধর্মদর্শন অনুসরণ করা অনুচিত। ইসলামই মানুষকে প্রকৃত মানবাধিকারের শিক্ষাদেয়। আমাদের আর কবে বোধদয় হবে!

পূর্ববর্তি সংবাদসিলেটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আ.লীগ নেতা নিহত
পরবর্তি সংবাদফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. মোমেনের চিঠি: বাকস্বাধীনতা দায়বদ্ধতার সাথে ব্যবহার করা উচিত