সৌদিতে বিলুপ্ত হচ্ছে সাত দশকের বিতর্কিত ’কাফালা’ প্রথা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে সাত দশকের বিতর্কিত ‘কফিল’ বা ’কাফালা’ প্রথা। যা কার্যকর হবে আগামী বছরের প্রথম ছয় মাসেই। এতে সুফল পবেন সৌদিতে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি প্রবাসী শ্রমিক। দীর্ঘ সমালোচিত এই কর্মসংস্থান ব্যবস্থা বাতিলের পর কোনো ব্যক্তি নয়, প্রবাসীদের অভিভাবক হবে সেদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়। বিলুপ্তি ঘটবে শ্রমিক নিয়োগে স্পন্সরশিপ প্রদানকারী মালিকদের অঘোষিত ‘দাস প্রথা’। স্বাধীনতা ভোগ করবেন শ্রমিকরা। পছন্দমত জায়গায় চাকরি করতে পারবেন। তাদের আয়ও বাড়বে। তারা অবারিত হতে পারবেন।

মঙ্গলবার সৌদি আরবের শ্রম এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে কাফালা ও কফিল প্রথা বাতিলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই এ ঘোষণা কার্যকর করা হবে। এই প্রথা বাতিলের পর প্রবাসীরা সরাসরি শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবেন। ফলে প্রবাসীর অর্থ লোপাট এবং অবৈধ হবার সম্ভাবনা কমে আসবে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ১৪ মে সৌদি মন্ত্রিসভায় কাফালা পদ্ধতি বাতিলসংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকদের মধ্যে নতুন ধরনের চুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে। কোনো একজন ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের বিতর্কিত পদ্ধতি (কাফালা) বাতিল করার কথা জানিয়েছে সৌদি আরব। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কাফালা পদ্ধতিতে একজন কফিল কিংবা নিয়োগকর্তা কোনো বিদেশি কর্মীকে স্পন্সর করলে সে কর্মী সৌদি আরবে যেতে পারেন এবং সেখানে যাওয়ার পর ঐ নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয় তাকে। এক্ষেত্রে ঐ কর্মীর কাজ পরিবর্তনসহ সার্বিক সব বিষয় নির্ভর করে নিয়োগকর্তার ওপর। প্রায় সাত দশক ধরে সৌদিতে চালু থাকা এই পদ্ধতির কারণে সেখানে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা কোনো ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। তাদেরকে নিয়োগকর্তার ইচ্ছামত চলতে হয়। যা এক ধরনের দাসত্ব প্রথার মতো।

রয়টার্স বলছে, সৌদি কফিলরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আইনের মারপ্যাঁচে প্রবাসীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে থাকেন। এটি বাতিল হলে প্রবাসীরা তাদের কর্মজীবনে অনেকটা স্বাধীন হবেন এবং ইচ্ছামতো কাজ নির্বাচন করতে পারবেন। নিয়োগকারী এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে। সৌদি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবে নির্দিষ্ট কোনো স্থানীয় মোয়াচ্ছাছা বা নামে থেকে বাইরে কাজ করা, বা তার নামে ব্যবসা করা, বিনিময়ে ঐ সৌদি নাগরিক মাসে মাসে একটা লভ্যাংশ নেওয়া, এ প্রথাটি বিলুপ্ত করবে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। সৌদি গেজেট জানিয়েছে, শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বহু বছরের বিতর্কের জেরে কর্মীদের কাফালা বা স্পন্সরশিপ ব্যবস্থা বাতিল করতে যাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। এসব শ্রমিকের বেশির ভাগই দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক। এ ব্যবস্থায় সৌদি নিয়োগ কর্তাদের হাতে শ্রমিকদের পুরো দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে। কিন্তু এর সুযোগ নিয়ে সৌদি আরবে শ্রমিকদের নির্যাতনের অভিযোগ আছে তাদের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে। ১৯৫০-এর দশকে প্রবর্তিত এ ব্যবস্থায় প্রবাসী শ্রমিকদের তাদের নিয়োগকর্তা ও স্পন্সরের নির্দেশে চলতে হয়। এমনকি তাদের অনুমতি ছাড়া সৌদি আরবে আসা-যাওয়া করা যায় না। এককথায়, নিয়োগকর্তা শ্রমিকদের ভিসা ও আইনি অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ব্যবস্থা শুধু সৌদি আরব নয়, পুরো উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রচলিত রয়েছে।

 

পূর্ববর্তি সংবাদনবী-জীবনে সত্যবাদিতা
পরবর্তি সংবাদবিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ : র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটরদের চিঠি