এনাম হাসান জুনাইদ ।।
সেদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব মসজিদে একটি ঘটনা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। এক আল্লাহওয়ালাকে মৃত্যুর ফেরেশতা এসে বলল, আপনার তো যাওয়ার সময় হয়েছে। তিনি জবাব দিলেন, হ্যা, আমাকে নিয়ে যাও। তার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্যই তো অপেক্ষা করছি জীবনভর। ফেরেশতা বললেন, না, আপনার কোনো শেষ ইচ্ছা থাকলে সেটা পূরণ করুন। বুজুর্গ বললেন, তাহলে আমাকে দু রাকাত নামাজের সুযোগ দাও।যখন সেজদায় যাব তখন জান কবয কর।
আমার নানীকে মৃত্যু শয্যায় দেখেছি। তার জীবনের অন্তিম ইচ্ছা ছিল আরেকবার আল্লাহর ঘর দেখতে যাবেন। যখন হুঁশ হত তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম, আপনি আবার সুস্থ হবেন। আবার আল্লাহর ঘর দেখতে যাবেন।
ইসলামের অনেক মনীষীদের জীবনী থেকেই জানা যায়, তারা ইলমী বিভিন্ন কাজ সমাপ্ত করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই কবরে যেতেন।
আমাদের ইসলামী দেশগুলোতে মুসলমানদের অন্তিম ইচ্ছা অনেক দামী অনেক পবিত্র থাকে। এই দামী হওয়ার কারণ জীবন তাদের কাছে এ পৃথিবীতেই শেষ নয়। ইসলাম মুসলমানদের চিন্তাকে এমনই পবিত্রতা ও উচ্চতা দান করেছে। তাদের দৃষ্টি এই দুনিয়ার পর্দাকে ভেদ করে দেখতে পায় আখেরাতের চিরসত্যকে।
আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পড়ে ইসলামের এই অবদান সেদিন বেশ পরিস্কারভাবে আমার সামনে ফুটে ওঠল। প্রতিবেদনে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন লোকের শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে মৃত্যুপথযাত্রীদের শেষ ইচ্ছা পূরণে সহায়তাকারী একজনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে তিনি অনেক রোগীর অনেক অদ্ভুত ইচ্ছা পূরণ করেছেন। বেলভোর নামক সেই লোকটি একবার একজন রোগীকে তার ঘোড়ার আস্তাবলে নিয়ে যান, যাতে তিনি তার প্রিয় প্রাণীটিকে শেষ দেখা দেখতে পারেন।
এরকম পোষা প্রাণীকে শেষ দেখা দেখার আরো অনেক ঘটনার কথা জানিয়েছেন বেলভোর । পশ্চিমা দেশে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের আরেকটা কমন ইচ্ছা হচ্ছে শেষবারের মতো কোন খেলা দেখা, জাদুঘরে যাওয়া বা চিড়িয়াখানায় ভ্রমণ।একবার বেলভোর অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে দেখেন যে, স্ট্রেচারে বাঁধা থাকা সত্ত্বেও একজন ব্যক্তি বড়শি দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন।
মৃত্যু শয্যায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখে বেশ ব্যথিত হলাম। মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে যায়, তখন আল্লাহও মানুষকে ভুলে যান। মানুষ তখন হারিয়ে ফেলে জীবনের ঠিকানা। সে জানে না, কোথায় এসেছে, কেন এসেছে, কেনই বা চলে যাচ্ছে।