পাকিস্তানের মাওলানা আদিল খানের শাহাদাতে দ্বীনী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শোকবার্তা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম, জামিয়া ফারুকিয়া করাচির মুহতামিম, পাকিস্তানের বেফাকুল মাদারিসিলি আরাবিয়ার মজলিসে আমেলার সদস্য, মরহুম মাওলানা সালীমুল্লাহ খান সাহেবের পুত্র ড. মাওলানা আদিল খান সাহেব গতকাল রবিবার (১০ আগস্ট) অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে করাচির শাহ ফায়সাল কলোনিতে নিজ ড্রাইভারসহ শাহাদাত বরণ করেন।

মুফতী তকী উসমানীর শোক

এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির দ্বীনী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এবং অবিলম্বে ঘাতকদের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন।

শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তকী উসমানী তার টুইটবার্তায় অবিলম্বে পাকিস্তান সরকারকে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

তিনি তার টুইটে বলেন, ‘মাওলানা ড. আদিল খান সাহেবের শাহাদাত জাতীর জন্য হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি। জালেমরা আমাদেরকে এমন এক ব্যক্তিত্ব থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে, যার দ্বারা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ছিল। তিনি একদিকে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা রক্ষার জন্য একজন আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন নেতার দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নিয়মতান্ত্রিক জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন।… সরকারের কর্তব্য হলো, ঘাতকদেরকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করে সাজা দেওয়া।’

যেভাবে মাওলানা আদিলকে শহীদ করা হয়

ঘটনাটি গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে ঘটে। করাচির ফয়সাল কলোনির পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী মাওলানা আদিলের গাড়ি শাহ ফায়সাল কলোনিতে সামা শপিং প্লাজার কাছে এসে থামে। সেখানে মোটরসাইকেল আরোহী হামলাকারীরা অতর্কিতে তার ওপর গুলি বর্ষণ করলে মাওলানা আদিল এবং তার ড্রাইভার মাকসুদ আক্রান্ত হন।

মাওলানা আদিলকে তক্ষুনি লিয়াকত ন্যাশনাল হাসপাতালে আর তার ড্রাইভারকে জিন্নাহ হাসপাতালে নেওয়া হয়। জানা যায়, মাওলানা আঘাত সইতে না পেরে শাহাদাত বরণ করেন। অন্যদিকে জিন্নাহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ড্রাইভারকে মৃত অবস্থায় সেখানে আনা হয়েছিল।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী মোটরসাইকেল আরোহী সন্ত্রাসীরা তিনজন ছিল। মোটরসাইকেল চালক তার দুই সঙ্গীকে মাওলানা আদিলের গাড়ির পেছনে নামিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল বিপরীত সাইডের রাস্তায় নিয়ে দাঁড় করায়। হামলাকারীরা নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়ে তৎক্ষণাত পালিয়ে যায়। এঘটনায় আরো তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারা।

জানা যায়,শনিবার পাকিস্তানের জামিয়া দারুল উলুম করাচিতে মাগরিবের নামাজ আদায় করে একটি দীনি মজলিসে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আদিল। জামিয়া দারুল উলুম করাচির সেই মজলিসে  উপস্থিত ছিলেন, মুফতি মুহাম্মদ রফি উসমানি ও মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি হাফি.। মজলিস শেষে মাদরাসার ফেরার সময়ই তাকে শহীদ করে ফেলা হয়।

জানাযা ও দাফন সম্পন্ন

আজ রবিবার সকালে করাচির জামিয়া ফারুকিয়ায় ড. মাওলানা মুহাম্মদ আদিল খান ও তার চালক মকসুদের জানাযার নামাজ আদায় করা হয়। এতে ওলামায়ে কেরামের পাশাপাশি সর্বস্তরের মুসলমানগণ অংশগ্রহণ করেছেন।

মাওলানা আদিল খানের ভাই মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খালিদ জানাজার নামাজ পড়ান। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন, শায়খুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানী,  দারুল উলুম করাচির মুহতামিম মাওলানা রফি উসমানী, পাকিস্তান বেফাক বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা ক্বারী মুহাম্মদ হানিফ জলন্ধরী, মাওলানা আবদুল গাফুর হায়দারী, ও মাওলানা রশিদ মাহমুদ প্রমুখ।

মাওলানা আদিল খানকে তার বাবা মাওলানা সালিমুল্লাহ খানের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও সেনাপ্রধানের শোক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এঘটনায় ভারতের ইন্ধন থাকার ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানে আলেমদের শহীদ করে শিয়া-সুন্নি মতবিরোধকে উস্কানি দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার জানে এবং ইতিপূর্ বারবার বলে এসেছে যে, সরকার বিগত কয়েক মাসে এধরনের একাধিক ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেছে।

ইমরান খান আরো বলেন, ‘ইন্টালিজেন্স এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধীদের গ্রেফতার করবে। আলেমগণ ভারতের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিন।’

পাকিস্তানের বিরোধী দলীয় নেতা, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘মাওলানা আদিল খান শীর্ষ আলেমে দ্বীন ছিলেন। তার শাহাদাতে একজন দেশপ্রেমিক পাকিস্তানী, উন্নত আখলাকের অধিকারী অমায়িক বন্ধুকে আমরা হারালাম।’

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর বাজোয়া মাওলানা আদিলের হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাওলানা আদিলের হত্যা পাকিস্তানের শত্রুদের পক্ষ থেকে শান্তি বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টার অংশ।’

এছাড়া এঘটনায় নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

মাওলানা আদিলের পরিচয়

সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ জামিয়া ফারুকিয়া করাচির মুহতামিম মাওলানা আদিল খান। ছবি: সামা নিউজ

ড. মাওলানা আদিল জামিয়া ফারুকিয়ার প্রিন্সিপাল ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের প্রতিষ্ঠান জামিয়া ফারুকিয়ায় আরবি এবং ইসলামিয়াতের ওপর এম এর পাশাপাশি পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষাদান করা হয়।

ইতিপূর্বে মাওলানা জামিয়া ফারুকিয়ার সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে গমন করেন। মালয়েশিয়ায় তিনি মাআরিফুল ওহী এবং ইলমে ইনসান অনুষদে সম্পৃক্ত ছিলেন।

মাওলানা আদিলের পিতা মরহুম মাওলানা সলীমুল্লাহ খান সাহেব দেওবন্দী ঘরানার বরেণ্য আলেম এবং উস্তাদ ছিলেন। দীর্ঘ সময় তিনি পাকিস্তানের বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি তাহরীকে সাওয়াদে আযমের প্রতিষ্ঠাতা নেতৃবৃন্দের অন্যতম।

২০১৭সালে পিতার ইন্তেকালের পর মাওলানা আদিল মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত আসেন এবং জামিয়া ফারুকিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সূত্র: বিবিসি উর্দু, ডেইলি জং

পূর্ববর্তি সংবাদফেনীতে ট্রেন দুর্ঘটনা: ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ
পরবর্তি সংবাদতুরস্কে মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, দুই চালক নিহত