চলন্ত ট্রেনে নামায আদায়ের বিধান

প্রশ্ন: চলন্ত লঞ্চ, জাহাজ, বিমান, বাস, ট্রেনে নামায আদায় করার বিধান কী ও তার পন্থা কী?

উত্তর: চলন্ত লঞ্চ, জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে ফরয নামায সম্ভব হলে কেবলামূখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু সিজদাসহ আদায় করবে। দাঁড়ানো যদি কষ্টকর হয় তাহলে বসে স্বাভাবিক রুকু-সিজদা করে নামায আদায় করবে। এভাবে নামায আদায় করতে পারলে পরবর্তীতে তা পুনরায় পড়তে হবে না। আর যদি কেবলামুখী হয়ে রুকু-সিজদার সাথে নামায আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামায পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে সতর্কতামূলক ঐ ফরয নামায পরবর্তীতে আবার পড়ে নিবে।

আর বাসে যেহেতু সাধারণত দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে নামায পড়া যায় না তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে গন্তব্যে পৌঁছে নামায আদায় করা সম্ভব হবে না বলে মনে হলে এবং নেমে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অসুবিধাজনক না হলে পথিমধ্যে নেমে ফরয নামায পড়ে নিবে। আর দূরের যাত্রা হলে অথবা যে ক্ষেত্রে নেমে গেলে ঝুঁকি অথবা সমস্যায় পড়ার আশংকা থাকে সেক্ষেত্রে বাস না থামলে সিটেই যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামায আদায় করে নিবে এবং সতর্কতামূলক পরবর্তীতে এর কাযা করে নিবে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘযাত্রায় বাস চালকগণের উচিত, ফরয নামায আদায়ের সুবিধার্থে কোনো মসজিদে যাত্রা বিরতি করা। এ বিষয়ে বাস মালিকদেরও ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়ে রাখা উচিত। এক্ষেত্রে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতিগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যাত্রীগণের কর্তব্য হল, বাসের একজন মুসল্লি নামায পড়তে চাইলেও তার জন্য বাস থামাতে চালককে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।

প্রশ্ন: বর্তমানে অধিকাংশ ট্রেনেই নামায আদায়ের ব্যবস্থা থাকে। তবে ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া বেশ কষ্টকর। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাছাড়া নামায পড়া অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে কেবলা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় সফরকালে ট্রেনে নামায পড়ব কীভাবে? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর: ফরয নামায যথাসাধ্য দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয। তাই ট্রেনে সফরকালেও যথাসম্ভব দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে। দাঁড়িয়ে নামায পড়া বেশি কষ্টকর হলে কিংবা সম্ভবই না হলে বসে পড়ার অবকাশ আছে। আর নামাযে কেবলার দিক ঠিক রাখা ফরয। তাই ট্রেনে নামায শুরু করার পূর্বে কেবলার দিক সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারপর নামায পড়বে।

নামায পড়া অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে নামাযী তা বোঝা মাত্রই কেবলার দিকে ঘুরে যাবে। কেননা কেবলার দিক পরিবর্তনের কথা জানা সত্ত্বেও নামাযী যদি কেবলার দিকে না ঘুরে তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে শুরুতে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর যদি নামায পড়া অবস্থায় ট্রেন কেবলার দিক থেকে ঘুরে যায় এবং নামাযী তা জানতে না পারার কারণে সেভাবেই নামায পড়ে নেয় তাহলে নামায হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: বেশিরভাগ আন্তনগর ট্রেনে বেশিরভাগ নামাযের কক্ষ আছে। তবে ট্রেন চলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে নামায পড়া কঠিন হয়। কারণ ঝাঁকুনির দরুণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় বা পড়েও যাই। আবার নামায অবস্থায় ট্রেন দিক পরিবর্তন করলে কেবলা ঠিক রাখা মুশকিল হয়। এমতাবস্থায় কিভাবে নামায আদায় করব জানা প্রয়োজন।

উত্তর: সম্ভব হলে ফরয নামায দাঁড়িয়ে আদায় করা ফরয। তাই ট্রেনেও ভ্রমণকালে যথাসম্ভব দাঁড়িয়ে নামায পড়তে চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে কিছু ধরেও দাঁড়াতে পারবে। অবশ্য যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে বসে নামায পড়তে পারবে।

আর ট্রেনেও নামায শুরু করার সময় কেবলার দিক নিশ্চিত করে সেদিকে ফিরে নামায পড়তে হবে। অতপর নামায অবস্থায় ট্রেন ঘুরে যাওয়ার কারণে কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেলে নামাযী তা বুঝামাত্র কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। কিবলার দিক পরিবর্তন হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও নামাযে কিবলার দিকে না ঘুরলে ঐ নামায পুনরায় পড়ে নিতে হবে। তবে শুরুতে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর পর নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে না পারার কারণে যদি ঐভাবেই নামায শেষ করে তার নামায আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য যে, চলন্ত ট্রেনে ঐ সময় নামাযে দাঁড়ানো উচিত যখন ট্রেনটি একদিকে চলতে থাকে তাহলে নামাযের ভিতর কিবলা পরিবর্তন করতে হবে না।

-ফতোয়া বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

পূর্ববর্তি সংবাদশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা
পরবর্তি সংবাদসমুদ্রবন্দরে ৩ নং সতর্ক সংকেত