ঋণ পরিশোধে আরো সময় চাইলেন পোশাকশিল্প মালিকরা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বৈশ্বিক করোনা মহামারীকালে মুখথুবড়ে পড়া পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রণোদনার অর্থ পরিশোধে ৫ বছর সময় চেয়েছেন শিল্পমালিকরা। মহামারীর মধ্যে শ্রমিকদের এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই- এই চার মাসের বেতনভাতা দিতে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে নামমাত্র সুদে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। যদিও ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ দুই বছরে ১৮টি সমান কিস্তিতে এই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু ওই অর্থ পরিশোধ করতে পাঁচ বছর সময় চেয়ে সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর ‘একান্ত সহযোগিতা’ ও ‘সদয় দৃষ্টি’ চেয়েছেন।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হচ্ছে- কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পোশাক খাত গভীর সংকটময় সময় পার করছে। এ সংকট উত্তরণের জন্যই ঋণ পরিশোধের সময় পাঁচ বছর করার অনুরোধ করা হয়েছে।

বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে পোশাক খাত ‘গভীর সংকটময়’ সময় পার করছে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ‘ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। ক্রেতারা যেসব আদেশ দিচ্ছেন এবং আগের ক্রয় আদেশের বিপরীতে যেসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, সেগুলোর অর্থ পেতে ৮ থেকে ৯ মাসের বেশি সময় লাগবে। ফলে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করা ‘দুরূহ’ হবে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার এ পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকার মোট ২০টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রথম প্যাকেজটি ছিল রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন দেওয়ার জন্য। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসের জন্য এ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয় গত ১ এপ্রিল। ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে কারখানার মালিকরা বেতন-মজুরি দেন। কিন্তু জুন মাসের বেতন-মজুরি দেওয়ার আগেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তখন তহবিলের আকার আরও ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়।

মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও তিন মাসের (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বেতনভাতা দিতে প্রণোদনা চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শিল্প ও সেবা খাতের জন্য যে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করেছিল, সেখান থেকে শুধু জুলাই মাসের বেতনভাতা দিতে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। সেজন্য ওই তহবিলের আকার ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই মাসের বেতন পরিশোধে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে যে চিঠি দিয়েছিল, তাতে বলা হয় শেষবারের মতো জুলাই মাসের মজুরি দিতে এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন পোশাকশিল্প মালিকরা। গত জুনে যেসব উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছিলেন, এর বাইরে নতুন কেউ পাবেন না।

তবে ওই তহবিলের ঋণের সুদের হার হবে ৯ শতাংশ, যার অর্ধেক বা সাড়ে ৪ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে। বাকিটা ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন।

এর পর তৈরি পোশাকশিল্পের সংকটের কথা তুলে ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতনভাতা দিতে ২০ আগস্ট সরকারের কাছে আবার প্রণোদনা চান পোশাকশিল্প মালিকরা। কিন্তু সরকার তাতে আর সাড়া দেয়নি।

পূর্ববর্তি সংবাদবঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ: অনেক জায়গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা
পরবর্তি সংবাদগুলশানে থাই স্পা সেন্টারে অভিযান: অসামাজিক কার্যকলাপে গ্রেফতার ২৮