ইসরাইলের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী?

আল আকসার সামনে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে একেবারে শুরু থেকেই।

বাংলাদেশের এই অবস্থানে যে অদূর ভবিষ্যতেও কোন পরিবর্তন আসবে, তেমন সম্ভাবনা একেবারেই দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর কারণ যতটা না আন্তর্জাতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের জনমত এবং আভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তারমধ্যে ছিল ইসরায়েল।

১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল।

তখন স্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিল।

সেই অবস্থানের পিছনে মূল বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন।

৫০ বছর পরেও ইসরায়েল প্রশ্নে বাংলাদেশের সেই অবস্থানে কোন পরিবর্তন আসেনি।

গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের রাজনীতি যেদিকে গড়িয়েছে, সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে পরিস্থিতি এখন আরও বেশি প্রতিকূল হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে যে কোন সরকারের জন্য ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দু’টি ধারা আছে। একটি ডান এবং দক্ষিণপন্থী ধারা, আরেকটি হচ্ছে বামপন্থী ধারা-যেটি অপেক্ষাকৃত অনেক দুর্বল। দু’টো ধারাই আসলে চায় না যে বাংলাদেশ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করুক।”

“ডান এবং দক্ষিণপন্থী যে ধারা, তারা চাচ্ছে না, যেহেতু ইসরায়েলে ৭০ শতাংশের বেশি ইহুদী জনগোষ্ঠী। সুতরাং এখানে একটি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির জায়গা থেকে তারা ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক চায় না।”

তিনি বলছেন, “অন্যদিকে যারা বামপন্থী ধারা বা এরসাথে যদি আমরা মধ্যপন্থী ধারা ধরি, তাদের অবস্থানের পিছনে মূল কারণটা হচ্ছে রাজনৈতিক। আর এই রাজনৈতিক কারণটা হচ্ছে, প্যালেস্টাইনকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি না দেয়া এবং তারা মনে করছে, ইসরায়েল সেখানে অবৈধভাবে প্যালেস্টাইনের ভূমি দখল করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।”

“এর পাশাপাশি আরেকটি কারণ হচ্ছে, যেহেতু ইসরায়েল একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র, ফলে বামপন্থীরা এবং যারা সেক্যুলার রাজনীীতি করে বাংলাদেশে তারাও চায় না যে এধরণের একটি রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ কোন সম্পর্ক স্থাপন করুক। সমস্ত কিছু মিলে যে যেই রাজনৈতিক বৃত্তেই অবস্থান করুক না কেন, কোন সরকারই বাংলাদেশে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়নি। এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে।”

বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের বিশ্বের একটি দেশেই যাওয়া নিষেধ, সেটি ইসরায়েল। পাসপোর্টে সেটি স্পষ্ট করে লেখা আছে।

সত্তুরের শেষে এবং আশির দশকে বাংলাদেশের অনেক তরুণ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও গিয়েছিল।

সে সময় ঢাকার রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল বা সংগঠনের মিছিল ছিল নিয়মিত ঘটনা।

বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ইসরায়েল বিরোধী আবেগ খুবই জোরালো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশে কখনও ঐকমত্য না হলে একক কোন নেতৃত্ব ইসরায়েলের সাথে কোন সম্পর্ক করতে চাইলে সেই নেতৃত্বকে বড় রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে।

“আমাদের সকলের একটা সেন্টিমেন্ট আছে প্যালেস্টাইনের প্রতি। সেজন্য আমি মনে করি, ইসরায়েলে সাথে কিছু করতে হলে একটা জাতীয় ঐকমত্য দরকার। আর কোন একক নেতৃত্ব যখন এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা কিন্তু সেই নেতৃত্বের জন্য দেশের অভ্যন্তরে খারাপ হতে পারে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ এখন সরকারে রয়েছে। এই সরকার এখনও ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়তে নারাজ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কোন রাজনৈতিক ঝুঁকি বা সমস্যা তাদের সরকারের বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের সরকার নৈতিকতার জায়গা থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পক্ষে রয়েছে এবং থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

“বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বা তার অব্যহিত পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুব পরিস্কারভাবেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একথাটি বলেছেন যে, আমরা প্যালেস্টাইনের জনগণের পক্ষে আছি, আমরা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আছি। এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। সেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্কবিহীন যে পথ চলা, সেটা অব্যাহত থাকবে।”

আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকটি বড় দল বিএনপি বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ শাসন করেছে।

এই দুই প্রধান দলের বাইরে রয়েছে অনেক ইসলামপন্থী দল, যারা বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত।

তবে ইসরায়েল ইস্যুতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বিভিন্ন বামপন্থী দল বা এই ইসলামপন্থীদের অবস্থানে কোন পার্থক্য নেই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের কোন দলই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক চাইবে না বলে তিনি মনে করেন।

“প্যালেস্টাইনকে নিয়ে বাংলাদেশের যে কমিটমেন্ট, সেটা হচ্ছে, প্যালেস্টাইনের যে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাদীনতা সংগ্রাম, তাকে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সব সময়ই সমর্থন করে এসেছে। সেখানে ইসরায়েলের যে ভূমিকা ছিল, সেই ভূমিকাকে সব দলই সব সময় নিন্দা জানিয়েছে। এখানে কোন দল বা কোন সরকার আলাদা কোন অবস্থান নেয়নি।”

বিবিসি

পূর্ববর্তি সংবাদআলমডাঙ্গায় বট গাছ থেকে অজ্ঞাত যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
পরবর্তি সংবাদপূজার উপহার হিসেবে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ