বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা, স্বজনদের আহাজারিতে ভারি তল্লা মাঠ

রায়হান মুহাম্মদ।।

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা বায়তুল সালাত জামে মসজিদে গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। মসজিদের মুয়াজ্জিন, সাত বছরের শিশুসহ এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চিকিৎসাধীন কেউ শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা।

১৮ জনের মধ্যে ১৬ জনের লাশ ইতোমধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিবারের কাছে। এরপর থেকেই একের পর এক খাটিয়া নিয়ে আসা হয় তল্লা মাঠে। আহাজারি, আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে তল্লা মাঠ। দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা কোনভাবে সামলাতে পারছেন না নিজেদের।

শুক্রবার রাতে এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কেউ কেউ। কেউবা মগ্ন ছিলেন বিতিরে। শেষ রাতে তাহাজ্জুদে উঠতে পারেন না এমন অনেকেই হয়তোবা দু’রাকাত অতিরিক্ত নফল আদায় করছিলেন।  এমন সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দের বিস্ফোরণে কেপে ওঠে মসজিদ। শোনা যায় মুসল্লিদের আহাজারি, আত্মচিৎকার, গড়াগড়ি খেতে থাকেন অনেকেই মজজিদের ভেতর, আগুনের তাপ সইতে না পেরে কেউ কেউ মসজিদের সামনে জমে থাকা পানিতেও গড়াগড়ি করেন। মাত্রই মসজিদের প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করা ফাহিম কিছু বুঝতে না পেরে ঢোকেন মসজিদের ভেতর। চেহারায় আগুনের হালকা আচ লাগলেও বেঁচে যান বড় রকমের দুর্ঘটনা  থেকে। এরপর এলাকাবাসীর সাহায্যে ভেঙে ফেলেন মসজিদের থাই গ্লাস। এতে অনেকেই বের হতে পারেন মসজিদ থেকে।কিন্তু আধা ঘন্টা আগেও নামাজ পড়তে আসা অতিপরিচিতজনকেও কোনোভাবে চেনা যাচ্ছিল না বিভৎসভাবে চেহারা পুড়ে যাওয়ায়। এভাবেই বলছিলেন মসজিদের উপর তলায় মেসে ভাড়া থাকা প্রতক্ষদর্শী ফাহিম।

দুর্ঘটনার কবলে পড়া কোন এক হতভাগ্য মুসল্লির পড়ে থাকা টুপি

মুহূর্তেই  শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত মজজিদটি পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় জলাবদ্ধতা ও মসজিদের আশপাশের রাস্তাগুলো সংকীর্ণ হওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় দগ্ধদের উদ্ধারে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারেনি ঘটনাস্থলে।

স্থানীরা দাবি করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের লাইনের লিকেজের বিষয়টি তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসলেও আমলে নেয়নি তারা। বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ স্থানীদের। তবে এমন অভিযোগ  অস্বীকার করেছেন তিতাস কর্তৃপক্ষ।

আগুন নেভানোর সময় মসজিদের ভেতরে পানি দিলে তাতে বুদ বুদ দেখা যায়। ছবি-সংগৃহীত

প্রাথমিকভাবে এসির বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও  ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছেন গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকেই থেকেই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। শনিবার দুপুরে দগ্ধদের দেখতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও এমন মন্তব্য করেছেন।

পূর্ববর্তি সংবাদপাঠদান পদ্ধতি ও কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তনের কথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদদিনাজপুরের ইউএনওর ওপর হামলাকারীরা ৭ দিনের রিমান্ডে