কতদিন পর এরকম সন্ধ্যা এলো!

মুহাম্মাদ আদম আলী ।।

আজ মাগরিবের পর একটা প্রোগ্রাম আছে। প্রফেসর হযরত (মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান সাহেব দা.বা.) সেখানে ‎যাবেন বলেছেন। উত্তরার কাছেই। অনেকদিন তাকে কোনো প্রোগ্রামে ‎‎যেতে দেখি না। সঙ্গে যেতেও পারি না। আজও যাবেন কিনা, সন্দেহ ‎বাড়ছেই।

মাদরাসায় গেলাম। দপ্তরে বসে আছি। ভেতরের খবর কিছু ‎জানার সুযোগ নেই। সময় গড়াচ্ছে। হয়তো শেষ পর্যন্ত কেউ এসে ‎বলবে, হযরত আজ যেতে পারবেন না। এরকম কোনো খবর নিয়েও ‎‎কেউ আসছে না। একটু পর হযরত নিজেই হুইল চেয়ারে বেরিয়ে ‎এলেন। তিনি প্রোগ্রামে যাবেন। ‎একজন দ্বীনদার মানুষ তার বাড়ির একটা ফ্লোর দ্বীনী কাজের জন্য ‎বরাদ্দ করেছেন। খবুই সুন্দর স্পেস। যত্ন করে সাজানো হয়েছে ‎‎ফ্লোরটি। ঘরে ঢুকলে আলাদা জগত মনে হয়। সেখানে বয়স্কদের ‎কুরআনের ভাষা শিক্ষার ক্লাস হবে। আরও হয়তো অনেক কাজ হবে। ‎পরিচালনা করবেন মাওলানা জালালুদ্দীন সাহেব। আহলিয়া মসজিদের ‎ইমাম ও খতীব। প্রফেসর হযরতের খুবই প্রিয় একজন খলীফা। ‎অনেক কষ্টে হযরতকে রাজি করিয়েছেন। ‎

হযরতের কথা কিছুই বোঝা যায় না। শ্রোতারা অস্বস্তিবোধ করেন। এটা কি ‎‎কেবলই শ্রোতাদের কষ্ট? আপনি কিছু বলছেন―সেটা কেউ বুঝতে ‎পারছে না, লিখে জানাবেন―তাও পারছেন না, তখন আপনার কেমন ‎লাগবে? অন্তরের ভাষা ব্যক্ত করতে না পারলে অন্তর ফেটে যায়। ‎মানুষ তখন মরে যেতে চায়। সবর করতে পারে না। প্রফেসর হযরত ‎এ কষ্ট নীরবে সহ্য করছেন। কোনো অভিযোগ নেই। কত কিছু বলার ছিল তার! নিজেকে যেমন গোপন করেছেন, তেমনি জ্ঞানের ভাণ্ডারও লুকিয়ে রেখেছেন।

কুরআন মাজীদের একটা ইংরেজি অনুবাদ করার কথা ছিল। আমি অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রাজিও হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘এ কাজের জন্য আমাদের শহর থেকে নাই হয়ে যেতে হবে।’ সে সুযোগ আর মিলেনি। মিলবেও না কোনো দিন। এখন তার ‎‎চোখে কেবলই কান্নার ঢল। কথা বলতেও কাঁদেন, কথা শুনলেও ‎কাঁদেন। মাহফিলে গিয়ে এ দৃশ্যই দেখা গেল। উলামায়ে কেরাম বয়ান ‎করছেন। তিনি কেবলই কাঁদছেন। মানুষের অন্তরে গুনাহের কালিমা ‎যত বাড়ে, চোখের পানি তত শুকিয়ে যায়। হযরতের চোখে ‎অনিঃশেষ পানি। তার মতো স্বচ্ছ জীবন খুব কমই দেখা যায়। ‎

মাহফিল শেষে হযরত দুআ করলেন। নীরব দুআ। একটা শব্দও ‎মাইকে শোনা গেল না। দুআ যে শেষ হয়ে গেছে, টের পাইনি। ‎মাইকের ঘোষণা শুনে টের পেলাম। এশার নামাযের সময় হয়ে গেছে। ‎ নামাযের পরেও দীর্ঘক্ষণ হযরত সেখানে ছিলেন। তাকে কাছে পাওয়া ‎মানেই নক্ষত্রকে ছুঁয়ে দেখা―ঐশী আলোয় উদ্ভাসিত এক সত্তার ‎সান্নিধ্য পাওয়া। এ আলো ছড়িয়েছে অনেক, ছাড়িয়েছে বহু তেপান্তর। ‎আমি তার দিকে অপলক চেয়ে থাকি। নিজের অন্তরে কেবলই ‎অন্ধকার। খুব আশা, ভালোবাসার এ দৃষ্টিও তো বাঁচাতে পারে ‎একদিন!‎ ‎৩/৯/২০২০‎

পূর্ববর্তি সংবাদদিনাজপুরের ইউএনও’র ওপর হামলাকারীদের যুবলীগ থেকে বহিষ্কার
পরবর্তি সংবাদচীন-ভারতের উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তে নেপালের সামরিক তৎপরতা