ধামরাইয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বেসরকারি বিজয় টেলিভিশনের সাংবাদিক জুলহাস উদ্দিনকে (৩৫) ঢাকার ধামরাইয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবারিয়া গ্রামের কালী মন্দিরের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

ধামরাই থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে জনতার হাতে আটক ছুরিকাঘাতকারী শাহিন ও মোয়াজ্জেম নামে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত জুলহাস উদ্দিন উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাতকোরা গ্রামের মৃত রইস উদ্দিনের ছেলে।এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে স্থানীয় জনতা। তারা হলেন- সাংবাদিক জুলহাসের দ্বিতীয় স্ত্রী সোমা আক্তারের সাবেক স্বামী শাহিন (৩৫) ও তার সহযোগী মোয়াজ্জেম (৩২)।

গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রবিউল আওয়াল হাসু জানান, দুপুরের দিকে এক ব্যক্তি তার জুলহাস উদ্দিনের পেটে ছুরিকাঘাত করে। পরে মানিকগঞ্জের সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, ‘ওই সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।’

নিহত জুলহাস উদ্দিন ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ হাতকোরা গ্রামের মৃত রইস উদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার হাতকোরা গ্রামের বাসিন্দা ও সাংবাদিক জুলহাস উদ্দিন কয়েক বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন তোরা মিয়ার মেয়ে সোমা আক্তারের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় সোমার বাবা মামলা মোকদ্দমা করে মেয়েকে অন্যত্র পাত্রস্থ করেন।

সেখানেও মেয়ে ঘর সংসার না করায় ফের মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার বাররারচর গ্রামের বিশু মিয়ার প্রবাসী ছেলে শাহীন আলমের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। স্বামী প্রবাসে থাকায় সোমা আক্তার ফের সাংবাদিক জুলহাস উদ্দিনের সঙ্গে ঘর বাঁধেন প্রবাসী স্বামীর এক কন্যা সন্তান নিয়ে এসে। এরপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদে তাদের সংসার আবার ভেঙে গেলে সোমা আক্তার নিরুপায় হয়ে ফের পিত্রালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে আবার প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে ঘর বাঁধেন।

সোমার স্বামী প্রবাস থেকে ফিরে তার এসব অপকর্মের কথা শুনে ক্ষিপ্ত হন। এরপর থেকে সাংবাদিক জুলহাস উদ্দিনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন এবং প্রকাশ্যে হুমকিও প্রদান করে বলে এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে মানিকগঞ্জে একটি গ্যারেজে জুলহাস তার প্রাইভেটকার মেরামতের জন্য যান। গাড়ির মেরামত কাজ শেষ না হওয়ায় দুপুর আড়াইটার দিকে গণপরিবহণে করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই উপজেলার বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে নামেন। একই গাড়িতে আসেন জুলহাসের দ্বিতীয় স্ত্রীর স্বামী প্রবাসী শাহীন আলম ও তার অন্য সহযোগীরা।

এসময় পেছন থেকে তারা সাংবাদিক জুলহাস উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে এবং গলা কেটে জখম করে। এ সময় স্থানীয়রা ঘাতকদের মধ্যে দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। অন্যরা পালিয়ে যায়।

আহত সাংবাদিককে গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক আরিফুর রহমান এই মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ওই রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।

ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে জুলহাসের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাবেক স্বামী শাহিন ও তার সহযোগী মোয়াজ্জেম জুলহাসের গলা কেটে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই হত্যাকারী দুজনকে হাতেনাতে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করে।

ঘটনাস্থল বাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তি সংবাদলাখো মানুষের উপস্থিতিতে ধামতীর পীরের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন
পরবর্তি সংবাদফ্রান্স ও ইউরোপের বর্ণবাদীরা মুক্তচিন্তার নামে অন্যদের অধিকার লঙ্ঘন করছে: তুরস্ক