সিনহা হত্যায় সত্য উদ‌ঘাটনে এবার গণশুনানির ডাক তদন্ত কমিটির

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের খুনের ঘটনায় গণশুনানির ডাক দিয়েছে তদন্ত কমিটি। ১৬ আগস্ট সকাল ১০টায় এ গণশুনানি হবে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে।

তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলী গতকাল একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এতে তিনি বলেন, ৩১ জুলাই আনুমানিক রাত ৯টায় পুলিশের গুলিবর্ষণে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে কমিটি গণশুনানির আয়োজন করেছে। এতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী মো. নুর খান বলেন, সত্য উদ্‌ঘাটনের জন্য যদি গণশুনানির আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং এতে স্বাধীনভাবে মানুষের মত প্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, তাহলে এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। এর ফলে প্রকৃত তথ্য জানার পাশাপাশি পুলিশের ভেতর ত্রুটি-বিচ্যুতিও বেরিয়ে আসবে। দীর্ঘদিন পর হলেও এ ধরনের উদ্যোগ মানুষের মনে আস্থা ফিরে আনবে।

এদিকে সিনহা হত্যা মামলায় চার পুলিশসহ সাতজনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এ আদেশ দেন। এই সাতজন হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সিনহা হত্যা মামলায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়ার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও মোহাম্মদ আইয়াস।

এর আগে চার পুলিশ সদস্যকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। সেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দফায় তাঁদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে র‌্যাব। আদালত এই চার পুলিশ সদস্যকে সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

শুনানি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জাকারিয়া বলেন, র‌্যাব চার পুলিশ সদস্যের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীরও সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

আইনজীবী মো. জাকারিয়া আদালতকে বলেন, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষীকে (নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও মো. আইয়াস) রিমান্ডে নেওয়ার মতো কোনো যুক্তি ছিল না। আদালতের কাছে র‌্যাবের দাবি ছিল, ঘটনার দিন তাঁরা (আসামিরা) চিৎকার–চেঁচামেচি করেছিলেন। র‌্যাবের সন্দেহ, তিন সাক্ষী ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন। তাই অধিকতর তদন্ত ও তথ্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে র‌্যাব। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানি চলাকালে উভয় মামলার সাত আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষীতকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ার পরই প্রধান আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রধান তিন আসামি এখনো কক্সবাজার কারাগারে আছেন।

গত ৩ জুলাই সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও তাসসিন রিফাত নুর কক্সবাজার আসেন ভ্রমণবিষয়ক ভিডিওচিত্র ধারণ করতে। ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দুজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত।

পূর্ববর্তি সংবাদআজ রাজধানীর যে সব এলাকায় গ্যাস থাকবে না
পরবর্তি সংবাদদ্বিতীয় দিনের মত দুদকের মুখোমুখি স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদ