ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বিদেশ সম্পর্কের বিষয়গুলোকে বলে কূটনীতি। কূটনীতির একটা নিজস্ব ভাষা আছে, যেটা যথেষ্ট সংযত, নিয়ন্ত্রিত, আশাব্যঞ্জক, ধূসর, দ্ব্যর্থবোধক এবং নিরাপদ। এসব ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কজাত, জটিল, ঝামেলাপূর্ণ বাক্য ও শব্দের ব্যবহার মন্ত্রী তো দূরে, কোনো কূটনীতিকের জন্যও শোভা পায় না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মেহেরপুরের মুজিবনগর পরিদর্শনকালে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। আর চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আগামী বছর আমরা ভারতকে নিয়ে ৫০ বছর পূর্তি উৎসব করবো। কেননা আমাদের বিজয় মানে ভারতের বিজয়। আবার ভারতের বিজয় মানে আমাদের বিজয়। ভারতের উন্নতি মানে আমাদের উন্নতি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের এই বক্তব্যকে দেশের আত্মমর্যাদাশীল বুদ্ধিজীবী মহল বেশ লজ্জাজনক আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, এধরণের বক্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, যা একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে কখনো কাম্য নয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য সম্পর্কে খোদ আওয়ামীলিগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা মন্ত্রীই দিতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুনির্দিষ্ট পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে গেছেন-সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। প্রতিবেশীসহ সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।’
ভারতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অকূটনীতি সুলভ বলে আখ্যায়িত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড: আকমল হোসেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন “ভারতের উন্নতি মানে আমাদের উন্নতি”-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলে কী তিনি বাংলাদেশকে ভারতের অংশ বোঝাতে চাইছেন?
বাংলাদেশর বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ভারতের অন্যায্য আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে বাংলাদেশের মুক্তি নেই। ভারত প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশীদের মারলেও আমাদের সরকারের কোনো আওয়াজ নেই। অথচ নেপাল এ বিষয়ে সংসদে আইন করে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
রোববার (৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদ ‘খরাকালে পোড়াও, বর্ষাকালে ভাসাও’ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এই নীতি প্রয়োগের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের কোনো কোনা মন্ত্রী বলছেন ভারতে সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু এ রক্ত তো দূষিত রক্ত। দূষিত রক্ত দিয়ে কি হবে? পরিচ্ছন্ন রক্ত দরকার।’ ‘দুষিত রক্ত থেকে আমাদের মুক্তি দরকার।’
ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে এবং ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা: জাফরুল্লাহ প্রতিবাদ সমাবেশে বলেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখে আছি। সম্প্রতি ঈদ গেলো। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তীদেশে ২৫ কোটি মানুষ তাদের নিজের ধর্ম পালন করতে পারেনি। তারা গরুর মাংস খেতে পারলো না। চোখ অন্ধ ভারত ২৫ কোটি মুসলমানকে ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘একটা কাল্পনিক কাহিনীকে ভিত্তি করে তারা রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের গল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করেই ৫০০ বছরের পুরোনা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে সেখানে আজগুবি রাম মন্দির নির্মাণ করেছে ভারত। এটা জাতির জন্য একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা বাংলাদেশ এটার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলিনি।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের হাইকোর্টের রায় ছিলো মন্দির যেমন হবে তার চেয়েও বড় করে অযোধ্যায় মসজিদ করতে হবে। রাম মন্দির তৈরি হলেও মসজিদ তৈরির কোনো খবর নেই, এটাই হচ্ছে ভারত।’
প্রবীণ এ মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক বলেন, ‘১৯৭১ সালে রমনার কালি মন্দির পাকিস্তানীরা ভেঙ্গে দিয়েছিলো। শেখ সাহেব (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এটাকে ঢাকার বাইরে নিয়ে বড় আকারে এ মন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের আপত্তিতে সরানো হয়নি। এটা ঢাকার মুলমান নওয়াবদের দান করা জায়গা।’
তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের এ সব সহনশীলতা থেকে ভারতের কিছুটা হলেও শিখা উচিত। কিন্তু তারা শিখবে না, তাদের শেখাতে হবে। শেখাতে হলে আজকে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য আজকে আমাদের সব রাজনৈতিক দল শুধু সমবেত হওয়ার কথা বলে কিন্তু প্রতিবাদ যেভাবে করার তা হচ্ছে না। আমাদের উচিত ছিলো যে দিন রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হলো সেদিন ভারতীয় হাইকমিশন ঘোরাও করা। এইরকম প্রতিবাদ না করাটা হচ্ছে আমাদের ব্যর্থতা।’