পুরো কুরআন খতম দেয়া আর ৩ বার সূরা ইখলাস পড়ার মধ্যে কী পার্থক্য

প্রশ্ন: প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা ইয়াসিনের ফযীলত বর্ণণা করতে গিয়ে বলেছেন, একবার সূরা ইয়াসীন পাঠ করা ১০ বার কুরআন খতমের সমান সাওয়াব রাখে। এমনিভাবে ৩ বার সূরা ইখলাস পড়া ১ বার কুরআন খতমের সাওয়াব রাখে। জানার বিষয় হল, তাহলে কি সূরা ফাতেহা থেকে নাস পর্যন্ত  পড়া আর ৩ বার সূরা ইখলাস পড়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই? বিস্তারিত উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

 উত্তর: দেখুন সওয়াব লাভ করা তিলাওয়াতের একটি ফায়েদা, একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের ঈমানী, ইলমী, আমলী এবং হেদায়েতী বহুবিধ উদ্দেশ্য ও উপকারিতা রয়েছে। এরপর যে কোনো নেক আমল ও ইবাদতের সওয়াব দু’ধরনের হয়ে থাকে। এক. আমলের মূল সওয়াব। দুই. আমলের তাযয়ীফ বা বর্ধিত সওয়াব, যা আল্লাহ তাআলা অতিরিক্ত পুরস্কার হিসেবে মূল সওয়াব থেকে বাড়িয়ে দেন। তো আপনি প্রশ্নে সূরা ইয়াসীন এবং সূরা ইখলাসের ফযীলত সংক্রান্ত যে হাদীস দুটির প্রতি ইশারা করেছেন তার মধ্যে সূরা ইখলাসের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসটির সনদ সহীহ, যা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ অন্য অনেক কিতাবে রয়েছে। আর সূরা ইয়াসীনের ফযীলত সংক্রান্ত হাদীসটির সনদ জয়ীফ, সুনানে তিরমিযীতে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

তবে সূরা ইখলাস সংক্রান্ত হাদীসটি আপনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন সেভাবে মূলত বর্ণিত হয়নি।

قل هو الله أحد تعدل ثلث القرآن    অর্থ ‘কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ এই সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের বরাবর’ এই শব্দে বা এর সমার্থক শব্দে বর্ণিত হয়েছে। ‘তিনবার সূরা ইখলাস পড়ার সওয়াব একবার পূর্ণ কুরআন খতমের সওয়াবের বরারব’ সরাসরি এভাবে নয়।

যা হোক সূরা ইখলাসের তিলাওয়াতকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলওয়াতের বরাবর এবং সূরা ইয়াসীনের  তিলাওয়াতকে দশবার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের বরাবর বলার উদ্দেশ্য সর্বদিক থেকে সম্পূর্ণ বরাবর হওয়া নয়। কোন্ দিক থেকে বরাবর সে বিষয়ে একাধিক ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা অনুসারে সওয়াবের দিকটি ধরা হলে তার উদ্দেশ্য হবে- সূরা ইখলাস তিলাওয়াতের মূল সওয়াব ও বর্ধিত সওয়াব মিলে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতের মূল সওয়াবের বরাবর। সুতরাং এখন যদি কুরআনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ তিলওয়াতের সাথে তার বর্ধিত সওয়াবকে যোগ করা হয় তবে তো তা সূরা ইখলাস তিলাওয়াতের মূল সওয়াব থেকে অনেক বেশি হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কুরআনে কারীমের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াতের রয়েছে নিজস্ব হেদায়েত, শিক্ষা, বিধান এবং ঈমানী ও আমলী বহু ফায়দা। তাই এসব ফায়েদা অর্জনের জন্য কুরআনের সব সূরা ও আয়াত তিলাওয়াত করা অত্যাবশ্যক।

শিক্ষা পরামর্শ বিভাগ, মাসিক আল কাউসার

 

পূর্ববর্তি সংবাদ“অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ছিল, এখনো বাবরি মসজিদ আছে এবং ভবিষ্যতে বাবরি মসজিদই থাকবে”
পরবর্তি সংবাদগাম্বিয়াকে রোহিঙ্গা গণহত্যার তথ্য দিতে অস্বীকৃতি: ফেসবুক কি মিয়ানমারের পক্ষে