গ্যাস উত্তোলন বন্ধ দেশে, সীমান্তে তুলছে শুধু ভারত-মিয়ানমার!

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: প্রতি মাসেই একটু একটু করে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। আর সেই জায়গা দখল করছে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। দেশে গত কয়েক বছরে বড় কোনও গ্যাসের মজুত যেমন আবিষ্কৃত হয়নি, ঠিক একইভাবে আগামী কয়েক বছরেও তার কোনও সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলো ঠিকই গ্যাস উত্তোলন করে চলেছে। ভারত তার কৃষ্ণা গোদাগাড়ি বেসিন এবং মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ব্লকে চারটি গ্যাসক্ষেত্র পেয়েছে। সেগুলো থেকে তারা গ্যাস উত্তোলনও করছে।

ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘যদি বলা হয় দেশে গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে গেছে, তাহলে এই কথাটি একজন ভূতাত্ত্বিক হিসেবে আমি অন্তত মানতে পারি না। আমাদের সম্ভাবনাময় অনেক স্থান রয়েছে। সেখানে আমরা এখনও অনুসন্ধান কার্যক্রমই চালাইনি। অবিলম্বে আমাদের উচিত সাগরে অনুসন্ধান চালানো। ভারত তার কৃষ্ণা গোদাগাড়ি বেসিন এবং মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ব্লকে চারটি গ্যাসক্ষেত্র পেয়েছে। সেগুলো থেকে তারা গ্যাস উত্তোলনও করছে। কিন্তু আমরা সেখানে যেতে পারছি না।’

গত জানুয়ারিতে দেশে মোট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে গড়ে তিন হাজার ১৬৭ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এরমধ্যে ৫৯২ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। বাকি দুই হাজার ৫৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাস। অন্যদিকে ২৮ জুলাই গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে তিন হাজার ১১৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এখানে এলএনজি ৫৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট, আর দেশীয় গ্যাস দুই হাজার ৫৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে দুই হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর পরে ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে।

মিয়ানমার বাংলাদেশের সমুদ্রের সীমানায় থাকা তাদের ব্লকে ২০১৭ সালে দুটি, ২০১৮ সালে একটি এবং ২০১৯ সালে একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার যেভাবে সেখানে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিকে আকৃষ্ট করেছে, একই প্রক্রিয়ায় আমাদের এখানেও করা যেতে পারে। তাহলে ওই এলাকায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ সুফল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকলেও বৃদ্ধির কোনও উদ্যোগ নেয়নি পেট্রোবাংলা। দেশের স্থলভাগে কয়েকটি খনন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর অভ্যন্তরে আর খনন কাজ চালায়নি বাপেক্স। আর সাগরে অনেক দিন থেকেই সব ধরনের কাজ থমকে আছে। অন্যদিকে চলতি বছর সাগরে নতুন পিএসসি আহ্বানের কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছর করোনার প্রভাবে নতুন পিএসসি আহ্বান না করার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো।

 জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানির পরিকল্পনাতেই সমস্যা রয়ে গেছে। আজ আমরা বেসামাল হয়ে আছি। কয়লার ক্ষেত্রেও আমাদের অবহেলা হয়েছে। দুর্নীতি হচ্ছে। পুরো জাতীয় সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। যে পরিস্থিতিতে যাচ্ছি তাতে আগামীতে আমাদের সবই আমদানি করে চলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পলিসি পরিবর্তন করতে হবে। সরকারি কোম্পানিগুলোর কাজে নজরদারি বাড়াতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।’

পূর্ববর্তি সংবাদভারতে গ্রেফতার সিরিয়াল কিলার: ‘৫০টা খুনের কথা মনে আছে, এরপর হিসাব রাখি নি’
পরবর্তি সংবাদছবিটি দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হলাম