আজ ঈদুল আযহা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: আজ ১০ যিলহজ ১৪৪১হিজরী রোজ শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিন। মুসলিম জীবনে ঈদুল ফিতরের ন্যায় আরেকটি মহা খুশির দিন। এদিন ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা সকলেই ঈদগাহে সমবেত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দু’রাকাত নামায আদায় করবে। আর সামর্থ্যবান মুমিন বান্দারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য তাদের কুরবানীর পশু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করবে। এরপর তাঁর মেহমানদারী গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করবে।

বছর ঘুরে আবারো উপস্থিত এ মহিমান্বিত দিবস। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ গতকাল শুক্রবার ঈদুল আযহা উদযাপন করেছে। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ি পশু কোরবানি করবেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। তারা চিরবিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন।

আজ কুরবানির দিন। কুরবানী বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন আত্মত্যাগের ঘটনা। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম আ. এর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল আ. আল্লাহর রাহে কুরবানীর স্মৃতিচারণে মুসলিম উম্মাহ শতাব্দীর পর শতাব্দী কুরবানীর মহান ব্রত পালন করে আসছে। বিশ্বমুসলিম ত্যাগের নিদর্শন স্বরূপ আল্লাহর হুকুম মোতাবেক, তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু জবেহের মাধ্যমে কুরবানীর যে আনন্দ-উৎসব পালন করে থাকে, তা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তিনি প্রিয় পুত্র ইসমাঈল আ. কে মহান আল্লাহর হুকুমে কুরবানি দেয়ার উদ্দেশ্য সাধন করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা মুহাম্মাদী উম্মতের জন্য পালনীয় বিধানে পরিণত করা হয়েছে।

কুরবানী হলো, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করা। যা ইবরাহীম আ. করে দেখিয়েছেন। কেবল গোশত খাওয়ার নাম কুরবানী নয়। আল্লাহর রাহে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেওয়া, তাকওয়া হাসিলের লক্ষ্যে পশুর গলায় নয় বরং সকল প্রবৃত্তির গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহর প্রেমে পাগলপরা হওয়া হলো কুরবানীর তাৎপর্য।

সংকট-দুর্যোগের মধ্যদিয়ে ঈদুল আযহা আমাদের মাঝে সমাগত। বিগত এক শতকে দেশে এমন পরিস্থিতিতে ঈদ উদযাপন হবার কোন নজির নেই। একদিকে করোনা সংকটে দিশেহারা মানুষ। বিপর্যন্ত জনজীবন। অর্থনীতির চাকা মন্থর। অন্যদিকে আমফান ও বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বন্যায় আক্রান্ত পরিবারে ঈদের আনন্দের পরিবর্তে বিরাজ করছে বুকভরা বেদনা। এবারের ঈদুল আযহায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ, ঈদুল আযহা আমাদেরকে ত্যাগ ও কুরবানীর আদর্শে উজ্জীবিত করে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে সবকিছু বিলীন করে দেয়ার চেতনা জাগ্রত করে ঈদুল আযহা।

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতাসহ দেশের ইসলামি দল ও সংগঠনসমূহ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এবার ঈদের ছুটি ৩ দিন ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদ উপলক্ষে ৩১ জুলাই, ১ আগস্ট শনিবার ঈদের দিন এবং ২ আগস্ট রোববার ছুটি থাকবে। ছুটির সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বাধ্যতামূলক কর্মস্থলে থাকতে হবে। তারা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।

করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদেও সরকারের নির্দেশনায় খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ঈদ জামাত হবে এলাকার মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা যাবে; কোলাকোলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ধর্মমন্ত্রণালয় জারিকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবার পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজের জামায়াতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লীরা প্রত্যেকে নিজ-নিজ দায়িত্বে বাসা থেকে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ-নিজ বাসা থেকে ওযু করে মসজিদে আসবেন এবং ওযু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে ওযুর স্থানে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে। জামায়াতে আসা মুসল্লীকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মুসল্লীরা মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করতে পারবেন না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।

ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে আরো জানানো হয়েছে যে, শিশু, বৃদ্ধ, যে কোন ধরণের অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামায়াতে অংশগ্রহণ করবেন না। এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৬টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে ছয়টি ঈদ জামাত। সকাল ৭টায় হবে প্রথম জামাত। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭টা ৫০, ৮টা ৪৫, ৯টা ৩৫, ১০টা ৩০ এবং ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈদুল আযহা’র জামাত সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ- মসজিদুল জামিআয় অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের এই জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এই ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতীব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল ৮ টায় ঈদ-উল-আযহা’র জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এবারের ঈদ জামাত আয়োজনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, এবারের ঈদে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনের কোনো উদ্যোগ থাকছে না। তবে সরকারের নির্দেশনা মেনে মসজিদগুলোতে ঈদ জামাত আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকায় খোলা মাঠে কোনো ধরনের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মেয়র আতিকুল ইসলামও নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কুরবানীকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। ঈদুল আযহার পূর্ববর্তী জুমার খুৎবায় এ বিষয়ে মুসল্লীদের সচেতন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য আল্লাহ কোরবানি ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করাই এ দিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় শনিবার দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। তবে এবার করোনা ও বন্যার মতো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কুরবানীর ঈদ হওয়ায় অন্যান্য বারের চেয়ে পশু কোরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দু:স্থরাও বঞ্চিত হবেন না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। সূত্র: বাসস

পূর্ববর্তি সংবাদপ্রিয়নবীর কোরবানি
পরবর্তি সংবাদবৃষ্টি হতে পারে ঈদের দিন