শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি ১২৫৮ কারখানা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: দেশের ছয় শিল্প এলাকা তথা আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ঈদুল আজহার ভাতা বাবদ বোনাস পরিশোধ করেনি ১ হাজার ২৫৮ কারখানা।

শিল্প পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শিল্প কেন্দ্রীভবনের কারণেই ছয় শিল্প এলাকায় একক খাতভিত্তিক কারখানার সংখ্যা বেশি। ছয় শিল্প এলাকায় শুধু পোশাক খাতের কারখানা আছে ২ হাজার ৮৯৩টি। এ খাতেরই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র শিল্পের কারখানা আছে ৩৮৯টি। এছাড়া বেপজার আওতায়ও আছে বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানা। এভাবে ছয় শিল্প এলাকায় মোট ৭ হাজার ৬০২টির মধ্যে পোশাক খাত কেন্দ্রিক মোট কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৭২। বোনাস পরিশোধের চিত্রেও এ কেন্দ্রীভবনের প্রতিফলন দেখা যায়।

ছয় শিল্প এলাকায় বোনাস পরিশোধ হয়নি বিজিএমইএর সদস্য কারখানা ৪৭৬টিতে। শিল্প এলাকাগুলোয় বিজিএমইএর সদস্য মোট কারখানা ১ হাজার ৮৮২টি। বিকেএমইএর সদস্য মোট ১ হাজার ১০১টি কারখানার মধ্যে বোনাস পরিশোধ হয়নি ১২২টির। বস্ত্র খাতের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ৩৮৯ কারখানার মধ্যে বোনাস পরিশোধ হয়নি ৫৮টিতে।

বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত মোট ৩৬৪টি কারখানার মধ্যে বোনাস পরিশোধ হয়নি ৫৮টিতে।

ছয় শিল্প এলাকায় বস্ত্র ও পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বেপজার আওতার বাইরে চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধসহ সব খাত মিলিয়ে অন্যান্য কারখানা আছে ৩ হাজার ৮৬৬টি। এর মধ্যে বোনাস পরিশোধ হয়নি ৯৫৬ কারখানার।

বোনাস পরিশোধের শতকরা হার বিশ্লেষণে শিল্প পুলিশ বলছে, মোট ৭ হাজার ৬০২টি কারখানা ৭৮ শতাংশ বোনাস দিয়েছে। অন্যান্য খাতে বোনাস পরিশোধের হার ৭৫ শতাংশ। বিটিএমএর সদস্য কারখানার ৭৬ শতাংশ, বিকেএমইএর সদস্য কারখানার ৮৯ শতাংশ ও বিজিএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর ৭৫ শতাংশতে বোনাস পরিশোধ হয়েছে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, সক্রিয় সদস্যদের ৯৬ শতাংশতে বোনাস পরিশোধ হয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, তাদের সক্রিয় কারখানা সংখ্যা ১ হাজার ৮৯৮টি। এর মধ্যে বোনাস পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ৮২১টিতে। মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত এসব তথ্য গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত সময়ের।

তবে ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের বেতন -বোনাসের বিষয়ে গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প খাতের শ্রম পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের চেয়ে সন্তোষজনক বলে জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি ঈদের আগের নির্দিষ্ট সময়ে শ্রমিকদের প্রতিশ্রুত বেতন-বোনাস প্রদান করায় মালিকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি করোনা দুর্যোগময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজেদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে কর্মস্থল ত্যাগ না করতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কেএম আব্দুস সালাম বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের দুটি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং মালিক -শ্রমিকদের সমন্বয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। সারা দেশে গঠিত ২৩টি কমিটি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে মালিক-শ্রমিক সবাই আন্তরিক।

ঈদের আগে বেতন-বোনাস বিষয়ে শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় জানান, অন্য যেকোনো ঈদের চেয়ে এবারের ঈদুল আজহার আগে বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রম অসন্তোষ নেই বললেই চলে। সারা দেশে বিশেষ করে শ্রমঘন শিল্প এলাকা ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে দু-চারটি কারখানায় শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কা থাকলেও আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছেন এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে তিনটি কারখানার বেতন-বোনাসের সমস্যা নিয়ে তিন আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শকরা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পূর্ববর্তি সংবাদপশুর হাটে মাস্ক না পরায় ১ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তি সংবাদচামড়া সংরক্ষণ ও বেচাকেনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কন্ট্রোল সেল