যিলহজ্বের প্রথম ১৩ দিন: আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলুন তাকবীর ধ্বনীতে

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ এই তাকবীরে তাশরীক ৯ যিলহজ্ব থেকে ১৩ যিলহজ্ব পর্যন্ত প্রত্যেক নামাজের পর উঁচু আওয়াজে পড়া ওয়াজিব। তবে যিলহজ্বের প্রথম দিন থেকেই  চলতে ফিরতে উঠতে বসতে পড়তে থাকা মুস্তহাব। হাদীস শরীফে এ বিষয়ে তাকীদ  করা হয়েছে এবং কোনো কোনো সাহাবা বাজারে গিয়ে উঁচু আওয়াজে এই তাকবীর পড়তেন।

তাকবীরে বিষয়ে আজ এক টুইট বার্তায় মুসলিম উম্মাহকে এই আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দেন বিখ্যাত আলেম মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি।

আশরায়ে যিলহজ্বের পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ এগার, বার ও তের তারিখকে পরিভাষায় ‘আইয়ামে তাশরীক’ বলে। আশরায়ে যিলহজ্বের দশ দিন ও আইয়ামে তাশরীকের তিনদিন সর্বমোট যিলহজ্বের এই প্রথম তের দিনের একটি আমল হচ্ছে বেশি বেশি আল্লাহর যিকির ও তাকবীর পাঠ।

আল্লাহ তাআলার যিকির এবং তাওহীদের চেতনায় সর্বদা উজ্জীবিত থাকা এবং শিরকের পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত তাওহীদের শিক্ষায় উদ্ভাসিত ঈমানী যিন্দেগী গঠনের লক্ষ্যে সম্ভব সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করা প্রত্যেক মুমিনের সার্বক্ষণিক কর্তব্য। কারণ দ্বীন-ধর্ম ও আমল আখলাক সবকিছুর মূল হল, নির্ভেজাল তাওহীদ। আল্লাহর একত্ব ও মহত্বের উপর সকল মুমিনের বিশ্বাস হতে হবে সুদৃঢ় ও মজবুত। এই বিশ্বাসে খুঁত থাকলে পর্বতসম আমলেরও কোনো মূল্য নেই।

তাইতো মুমিনের দিলে তাওহীদের শিক্ষাকে আরো মজবুত আরো শাণিত করতেই এই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করতে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাসের সবটুকু মিশিয়ে মুমিন বলবে আল্লাহু আকবার, ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন- (তরজমা) তোমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহকে (বেশি বেশি) স্মরণ কর।-সূরা বাকারা : ২০৩ অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন- (তরজমা) ‘যাতে তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।’-সূরা হজ্ব : ২৮ এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলির দ্বারা প্রায় সকলের মতে আশরায়ে যিলহজ্ব ও আইয়ামে তাশরীকের এই তেরটি দিনই উদ্দেশ্য।

বিশেষ করে এই দিনগুলোতে আল্লাহর যিকিরের প্রতি আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ সম্পর্কে আল্লামা খাত্তাবী রাহ. বলেন, জাহেলী যুগের লোকেরা যুগ যুগ ধরে তাদের কথিত প্রভুদের নামে পশু-প্রাণী উৎসর্গ করত। এর প্রতি উত্তরে মুমিনদের প্রতি আদেশ করা হয়েছে তারা যেন আল্লাহর যিকির ও তাকবীরের মাধ্যমে তাওহীদ ও আনুগত্যের ঘোষণা দান করে। আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি ছাড়া কারো নামে প্রাণী উৎসর্গ করা যাবে না। কারণ তা সুস্পষ্ট শিরক।-ফাতহুল বারী ২/৫৩৫

সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবারের ধ্বনি তুলতেন। হযরত ইবনে উমর রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বাজারে গিয়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীরের সুর তুলত। ইবনে ওমর রা. পথে-ঘাটে, হাঁটা-বসায়, বাজারে-ঘরে এবং নামাযের পরে শুধুই তাকবীর বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোতো তার তাকবীরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবীরে মিনার পুরো অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠত। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন।-বুখারী-ফাতহুল বারী ২/৫৩০-৫৩৬

সার্বক্ষণিক যিকির ও তাকবীরের আমল ছাড়াও এই তের দিনের প্রায় প্রতিটি ইবাদত ও আমলের সাথে যিকির ও তাকবীরকে এমনভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেন সব আমল-ইবাদতের মূল কথা হল যিকরুল্লাহ, তাকবীর ও তাওহীদ। বাস্তবেও তাই। এজন্য সকল ইবাদতের পরতে পরতে রয়েছে তাওহীদে খালেসের উপস্থিতি।

এই তাকবীর সংক্রান- যে কয়েকটি গাফলতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় তন্মধ্যে একটি হল মহিলাদের এই আমলের প্রতি যত্নবান না হওয়া। হয়তোবা এর কারণ এও হতে পারে যে, তাদের এই তাকবীরের কথা স্মরণ থাকে না। তা স্বাভাবিকও বটে। কারণ পুরুষরা মসজিদে জামাতে নামায আদায় করে বিধায় খেয়াল না থাকলেও অন্যের দেখাদেখি এই আমল করতে পারে। কিন্তু মহিলাদের তো এই সুযোগ নেই। তাই মহিলাদের উচিত ঘরের যে স্থানে তারা নামায আদায় করে সেখানে পাঁচ দিনের জন্য একটি কাগজ লিখে ঝুলিয়ে রাখা। যাতে জায়নামাযে এলেই তা নজরে পড়ে।

দ্বিতীয় যে গাফলতিটি নজরে পড়ে তা এই যে, ঈদুল আযহার ঈদগাহে যাওয়ার পথে ও পাঁচ দিনের ফরজ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক আদায় করলেও অনেক পুরুষ তা পড়ে থাকেন মনে মনে বা খুব নিচু স্বরে। অথচ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরামের এই তাকবীর ধ্বনিতে পুরো আশপাশ কেঁপে উঠত। আর এই তাকবীর উচ্চ স্বরে বলার একটি হিকমত তো এও যে, এর দ্বারা ইসলামের তাওহীদের ঘোষণা প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে দেওয়া হবে। গুনগুন শব্দে এর বহিঃপ্রকাশ কি সম্ভব?-ইসলাহী খুতবাত ২/১২৬-১২৯ পরিশেষে আসুন নির্ভেজাল তাওহীদ, দৃঢ় আক্বীদা ও আল্লাহর মহত্ত্বের উপর অটুট আস্থা স্থাপনের মাধ্যমে গড়ে তুলি একটি আদর্শ সমাজ, যা হবে শিরকের পঙ্কিলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত তাওহীদের সমাজ। পুণ্যময় তেরটি দিনের এটিই মৌলিক বাণী। তাকবীরে তাশরীকের এটিই মহান শিক্ষা।

পূর্ববর্তি সংবাদজামেয়া আজহারে ফতোয়া বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছেন সিসি
পরবর্তি সংবাদপম্পেও আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী : সিএনএন