ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখার বিরুদ্ধে করোনা রোগীর সাথে প্রতারণার অভিযোগ

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সাড়ে ৪ হাজার টাকা ফি নিয়েও রোগীর বাড়ি না গিয়ে তাদের বুথে ডাকিয়ে এনে নমুনা সংগ্রহ করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল মঙ্গলবার এমন একটি ঘটনা প্রকাশ হলে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ তাৎক্ষণিক তদন্তে নামেন। এ সময় তার সঙ্গে জেলার করোনা ফোকাল পারসন ডা. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন। তারা প্রতিষ্ঠানটির এ অনিয়মের প্রমাণ পান।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। পরে গতকাল বিকেলে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখাকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখতে চিঠি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, নগরের কালীরবাজার মোড় এলাকায় অবস্থিত নবনির্মিত সিজিএম (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবন) ভবনের নিচ তলায় করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি বুথ রয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক সেখানে দুইশ টাকা ফি দিয়ে নমুনা দেয় রোগীরা। এ বুথে ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখার টেকনিশিয়ান জনি পর্যায়ক্রমে সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জনির দায়িত্ব না থাকলেও তিনি বুথে আসেন। ল্যাবএইড থেকে কোনো রোগী এসেছেন কিনা জানতে চাইলে এক যুবক তার সামনে এসে হাসপাতাল থেকে আনা একটি রিসিট তার কাছে জমা দেয়। জনি তাৎক্ষণিক ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।

জাহিদুল ইসলাম নামে ওই যুবক জানান, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডের বাসিন্দা। সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ল্যাবএইডে পরীক্ষা করাচ্ছেন। এই টাকায় বাসা থেকে গিয়ে নমুনা নিয়ে আসার কথা থাকলেও বুথে আসছেন কেন জানতে চাইলে জাহিদুল বলেন, ‘ল্যাবএইড থেকে আমাকে এখানে এসে নমুনা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বলা হয়েছে এটিও তাদের নমুনা সংগ্রহের বুথ।’

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ল্যাবএইড কর্মী জনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘ভাই এতে আপনার কোনো সমস্যা? বৃষ্টির কারণে আমরা রোগীর বাসায় যেতে পারিনি। তাই তাকে বুথে আসতে বলেছি।’

সরকারি বুথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কোনো অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে জানা গেছে, মঙ্গলবার ওই বুথে জনির কোনো দায়িত্বই ছিল না। তিনি শুধু ল্যাবএইডের ওই রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্যই সেখানে যান।

বিষয়টি সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিক জেলার করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে তারা ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে জনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং কর্মকর্তা রিপনকে অভিযুক্ত করেন।

পরে রিপনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি ল্যাবএইড অফিসের অনুমতি নিয়েই রোগীকে কালীরবাজার বুথে যেতে বলেছেন বলে জানান। পরে ডা. জাহিদুল ইসলাম ওই রোগীকে (জাহিদুল ইসলাম) ফোন করে পুরো ঘটনা জেনে নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ল্যাবএইডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার অভিযোগে জনি ও রিপনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ল্যাবএইড শাখার ব্যবস্থাপক সোহেল বলেন, ‘ওই দুইজন আমাদের অগোচরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

ল্যাবএইডে গিয়ে সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ ও ডা. জাহিদ দেখতে পান সেখানে ২ জন পুরুষ এবং এক নারীর নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে একটি সরকারি বুথে নেওয়া জাহিদের নমুনা।

এ ব্যাপারে জেলার করোনা ফোকাল পারসন ডা. জাহিদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির এমন কাজ সরকারের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়েছে, ল্যাবএইডের এ শাখার কর্মকর্তারা তাদের কর্মচারীদের কর্মকাণ্ডের খোঁজ খবর সঠিকভাবে রাখেন না।’

সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখাকে নতুনভাবে আর যেন নমুনা সংগ্রহ করা না হয় সে জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

পূর্ববর্তি সংবাদকরোনায় আমাদের মৃত্যুহার মাত্র দেড় পারসেন্ট: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদদ্বীনদার পরিবারের সাথে আত্মীয়তা: প্রয়োজন প্রস্তুতি ও সংকল্প