মুফতি মুহাম্মদ রফি উসমানি।।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ইসলামী খেলাফতের পতন হয়ে গেল তখন কামাল পাশা (আতাতুর্ক) তুরস্কে এমন বদদ্বীনী শাসন প্রতিষ্ঠা করল যার নজির ইতিহাসে পাওয়া যায় না। ইস্তাম্বুল যা ছিল ইসলামী বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র এবং দারুল খিলাফা, এই খোদাদ্রোহী সেখানে দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করেছে। আরবি ভাষায় আজান দেওয়ার অনুমতি দেয়নি। কোরআন শরীফ পড়া-পড়ানো অনেক দূরের কথা কোরআন শরীফ ছাপানো পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে ইসলামের এই দুশমন কামাল আতাতুর্ক।
এই খোদাদ্রোহী তুরস্ককে পুরো দুনিয়া থেকে বিশেষ করে মুসলিমবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এই বিচ্ছিন্ন করার জন্য যে অস্ত্র সে ব্যবহার করেছে তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
সে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এর মধ্যে একটি হচ্ছে তুর্কি ভাষা যা আরবি বর্ণে লিখিত হত। ফার্সি উর্দু এর মত তুর্কি ভাষাও ছিল একসময় ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের ভাষা। তুর্কী ভাষা তখন মধ্য এশিয়ার বিশাল এলাকায় প্রচলিত ছিল, যার শুরু ছিল তুরস্ক থেকে এবং উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান, কাযাকিস্তান ও তুর্কমেনেস্তিান হয়ে শেষ হত জিনজিয়াং প্রদেশে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রদেশ। সেখানে মুসলমানরা আজ চীনাদের হাতে নির্যাতিত। এ সবগুলো দেশ নিয়ে ছিল তুর্কিস্তান,যার বড় একটা অংশ দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। এই বিশাল এলাকায় প্রচলিত ছিল তুর্কীভাষা। আরবদেশগুলোতে ছিল আরবী। ইরানে, আফগানিস্তানে প্রচলিত ছিল ফার্সি আর আমাদের হিন্দুস্তানে প্রচলিত ছিল উর্দূ। কিন্তু এসব ভাষার বর্ণ বা লেখার শৈলি ছিল এক।
কিন্তু কামাল পাশা এই ঘৃণ্য কাজটি করেছে যে সে মুসলিম বিশ্ব থেকে তুরস্ককে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সে তুর্কী ভাষার অক্ষর পরিবর্তন করে দিয়েছে। পরিবর্তন করে এমন বর্ণ ব্যবহার করেছে যা আংশিকভাবে ইংরেজি। কিন্তু সে তার মূর্খতাবশত পুরো ইংরেজি লেখার শৈলিও গ্রহণ করেনি। যার ফলে যারা ইংরেজি জানত তারাও তুর্কী ভাষা বুঝতে পারে না।
এদিকে জার্মানির লিপিশৈলি ইউরোপের অন্যান্য দেশের লিপি শৈলি কাছাকাছি। কিন্তু তুর্কী লিপি শৈলি জার্মানির মতও না। রাশিয়ার লিপি শৈলির মতও না। অবশেষে না ইংরেজির সাথে মিলে, না ইউরোপের কোনো দেশের সাথে। এর ফলাফল এটা হয়েছে যে তুর্কি জাতি গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুধু ইসলামী বিশ্ব থেকে নয়, গোটা দুনিয়া থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মোটকথা সে তুর্কি জাতিকে গোটা মুসলিম বিশ্ব থেকে বরং দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।
এবার চিন্তা করুন সে ও তার তৈরি সেনাবাহিনী ইসলাম ও মুসলমানদের কত ক্ষতি করেছে। তার সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশীর ভাগ ছিল সেকুলার। শুধু সেকুলার নয়, তারা ছিল ইসলামের দুশমন। সেকুলার বলা হয় কোনো ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিবে না। এটাও জায়েয নয়। কিন্তু তাদের অবস্থা এরচেয়ে আরও মারাত্মক। তার তৈরি সেনাবাহিনী, তার তৈরি নীতি সবই ছিল ইসলামের দুশমনীর উপর ভিত্তিশীল।
দুনিয়াতে আল্লাহ তার কাজের পরিণতি কিছু দেখিয়েছেন। আমার তুরস্কে যাওয়া হয়েছে অনেকবার। আমি তার রাজমহল দেখেছি। সেটি নদীর পাশে সাধারণ বাড়িঘর থেকে দূরে। কিন্তু মরার সময় তার এমন দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছিল যে অনেক দূর থেকে তার চিৎকার শোনা যেত।
আর তার কুশাসনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে দেশের অবস্থা ছিল এতই শোচনীয় যে এক ডলার সমান ছিল এক লাখ লিরা, তুর্কী মুদ্রা। আমি একটা সুয়েটার কিনেছিলাম। সেটা পাকিস্তানের ছয় শরুপিয়া ছিল। কিন্তু সেখানে এটা দাম ছিল ১২ হাজার লিরা। এটা ছিল আরও চৌদ্দ পনের বছর আগের কথা ছিল।
কিন্তু এ কয় বছরে তাদের অবস্থা এত উন্নত হয়েছে যে বিশ্ব ব্যাংকে তাদের কোনো ঋণ নেই। এবং এখন ডলার ও লিরার দাম কাছাকাছি চলে এসেছে। কারণ তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে আমরা আইএমএফের ঋণ নিব না। আমরা সুদ দেব না।
অনুবাদ: এনাম হাসান জুনাইদ