ফিরে দেখা: তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান: ক্ষমতাসীনরা কী শিক্ষা নিতে পারেন

সেনাবাহিনীর ট্যাংক দখল করে নেয় জনতা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: ১৫জুলাই ২০১৮ সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে  তুর্কী জনগণের বিজয় বিশ্বব্যাপী অনেক দেশের জন্যে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। জনতার প্রতিরোধের মুখে সেনা শাসকরা দেশের ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রক হতে পারে না-সেদিন এ কথাই প্রমাণ করেছিল তুরস্কের জনগণ।

তুরস্ক ১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০, ১৯৯৭ সনে সেনা অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছিল। ঠুনকো কারণেই এসব সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছিল। কিন্তু চার বছর আগে তুরস্কের জনগণ যখন রাস্তায় সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক কামান দেখল, এবার তারা সেনা অভ্যুত্থান মেনে নিল না। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ রাস্তায় নেমে এল এবং ট্যাঙ্কের সামনে শুয়ে পড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলল।

কী ঘটেছিল সেদিন

২০১৮ সালে ১৫ জুলাই শুক্রবার রাতে যখন প্রথম তুরস্কে অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন কয়েক ঘন্টা ধরে দেশটির নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই মনে হচ্ছিল।  রাজধানী আংকারা আর সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলের প্রধান স্থাপনাগুলোতে ছিল তাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দখল করে নেয় সেনাবাহিনী এবং তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। এত ঘটনার মধ্যে কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের।

আরো পড়ুন: খ্রীস্টানদের মধ্যে ব্যাপকভাবেই রয়েছে উপাসনালয় বিক্রি করে দেওয়ার চর্চা

অভ্যুত্থানকারীদের সেই মূহুর্তে দরকার ছিল সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশের এবং জনগণের সমর্থন।কিন্তু অভ্যুত্থানের চেষ্টা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলডিরিম তা প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু করেছেন। তবে তুরস্কের বেশিরভাগ মানুষ জানে, প্রকৃত ক্ষমতা আসলে রজব তাইয়্যেব এরদোগানের হাতে, এবং কিছু করতে হলে তাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

এরদোগানের ডাকে রাতেই রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ

অভ্যুত্থান সফল হতে হলে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে পুরো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানকারীদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। কোন কোন খবরে বলা হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট এরদোগান  এক অবকাশ কেন্দ্রের যে হোটেলে ছিলেন সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। ফলে সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

যেভাবে পরিস্থিতি পাল্টে গেল

শুরুতে বোঝা যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোথায় আছেন। কোন কোন খবরে বলা হচ্ছিল তিনি তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে আছেন।

কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাকে দেখা গেল সিএনএন এর তুর্কী ভাষার নিউজ চ্যানেলে। মোবাইল ফোনে ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান প্রতিহত করার ডাক দিলেন।

আরো পড়ুন: যুগে যুগে দেশ দখলের পর খৃস্টানরা অন্যদের ইবাদতখানা কী করত!

প্রেসিডেন্ট এরদোগান যখন ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এসে নামেন, হাওয়া পুরো ঘুরে গেলো। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কড়া ভাষায় অভ্যুত্থানকারীদের দেখে নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন, বললেন, তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। অনেকের কাছেই পরিস্কার হয়ে গেল যে, অভ্যুত্থানকারীরা ব্যর্থ হয়েছে, সিনিয়র সেনা অধিনায়করা সরকারের পক্ষেই আছে।

টেলিভিশনে এরদোগানের ভিডিও কল: সবাইকে রাস্তায় নামার ডাক দেন

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ তখন ইস্তাম্বুল আর আংকারার রাস্তায় নেমে এসেছে। বিমানবন্দরে যে সেনারা অবস্থান নিয়েছিল, তাদের ঘেরাও করে জনতা, পুরো বিমানবন্দর দখল করে নেয় তারা।

কী শিক্ষা নেওয়া যায়

জনগণ যে শাসকের সাথে থাকে বিজয় তারই হয়। এরদোগান জনগণের জন্য কাজ করেছেন। তাদের মনের ভাষা বুঝেছেন। তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। অর্থনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নতি করেছেন। জনগণ তার প্রতিদান দিয়েছে। জীবনবাজি রেখেও অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। দেশে দেশে ক্ষমতাসীনদের এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।

আরো পড়ুন: আয়া সোফিয়ার মসজিদে প্রত্যাবর্তন, ইতিহাস ও ইসলামের আয়না

এ যুগের নাগরিকরা তাদের সাধারণ নাগরিক পাওনার সামান্য পেলেই অনেক খুশি হয়ে যায়। তাদের ধর্মীয় বোধ ও অধিকারের জায়গার প্রতি শাসকদের সম্মান দেখলে আপ্লুত হয়। ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়ে, বক্তৃতার কথামালা দিয়ে জনগণের মনের উপর রাজত্ব করার ব্যর্থ চেষ্টা আসলে কোনো সুফল দেয় না। জনগণের পক্ষে কাজ করলে নাগরিকরা নিজেদের পক্ষ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তম প্রতিদান দিয়ে থাকে। বিশ্বের সকল দেশের শাসকগণ এ সত্য যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন ততই তাদের নিজের ও তাদের জনগণের মঙ্গল তরান্বিত হবে।

পূর্ববর্তি সংবাদআমেরিকায় পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর টুকরা টুকরা লাশ উদ্ধার
পরবর্তি সংবাদভারতের লক্ষ কোটি টাকার গুপ্তধনের মন্দির, একটি কুঠুরি আজো খোলা হয়নি