বসনিয়া গণহত্যার পঁচিশ বছর: মুসলিম নিধনের বিভীষিকাময় ট্র্যাজেডি

ওলিউর রহমান ।।

বসনিয়ায় ১৯৯৫ সালের জুলায়ের প্রাথমিক দিনগুলো বড় ভয়াবহ ছিল। তিন বছর ধরে শুরু হওয়া গণহত্যা যেন এ সময়টাতে সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। প্রতিদিন অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর জানিয়ে সূর্যোদয় হতো। চলতি বছর গণহত্যার ২৫ বছর পূর্ণ হলো।

সেবছরের জুলায়ের প্রথমার্ধেই ঘটেছিল মানবেতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা। বসনিয়ার সেব্রেনিসা শহরে মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ৮ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল অসংখ্য নারী। এমনকি শিশু এবং বৃদ্ধরাও রক্ষা পায়নি সার্বিয়ান সেনাদের পৈশাচিক নির্যাতন থেকে।

পনের শতকে সুলতান মুহাম্মদ ফাতেহ এই বসনিয়াকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। উনিশ শতকের শেষদিকে রাশিয়ার সাথে উসমানীয়দের যুদ্ধের ফলে দেশটি উসমানী সাম্রাজ্য হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে অস্ট্রিয়হাঙ্গেরি রাজ্যের অধীনে চলে যায় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ শতকের নব্বয়ের দশকে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে থাকে।

১৯৯০ সালে যুগোস্লাভিয়ার পতনের পর বসনিয়ানদের স্বাধীনতা দাবির প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অন্যায় শর্ত জুড়ে দেওয়া গণভোট কার্যক্রমের পর ১৯৯২ সালের ১ মার্চ যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় বসনিয়া। মে মাস নাগাদ জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় কমিউনিটি বাহ্যত বসনিয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতিও দেয়।

গণহত্যায় নিহতদের স্তূপাকার লাশ

কিন্তু সার্বরা বসনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী বা ইসলামী মনোভাবের বিস্তার- কোনোটাকেই সহ্য করতে পারছিল না। ফলে মুসলমানদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে বসনিয়ায় জাতিগত শুদ্ধি অভিযান শুরু করে তারা। তিনবছর ধরে চালায় গণহত্যা। বসনিয়ানদের জন্য সে দিনগুলো ছিল বিভীষিকাময়। প্রতিদিনই অনেক মানুষকে হত্যা করা হতো। সর্বশেষ ১১ জুলাই লাইনে দাঁড় করিয়ে একদিনে ৮ হাজার মুসলিম যুবককে হত্যা করা হয়।

বসনিয়া গণহত্যার পঁচিশ বছর পূর্ণ হলো। এই গণহত্যার ক্ষত স্বজনেরা এখনও ভুলতে পারেনি। নব্বইয়ের দশকে বসনিয়া গণহত্যা নিয়ে বিশ্ব সরব ছিল। পত্রিকাগুলোর প্রধান খবরের বিষয় ছিল বসনিয়ার মৃত্যু সংবাদ। তবে পঁচিশ বছর পর বসনিয়া গণহত্যা নিয়ে মানুষের সেই আবেগ এখন অনুপস্থিত। এখন কেবল প্রতিবছর জুলাই মাসে দিবস উদযাপনের মতোই মনে করা হয় বসনিয়ার গণহত্যাকে। গণকবরে গিয়ে স্মরণে দোয়া করে আসেন স্বজনেরা।

ইয়েমেন এবং সিরিয়ার গণহত্যা এ সময়ের প্রধান আলোচনার বিষয়। ইরাক, আফগানিস্তান এবং আরাকানে সংগঠিত হওয়া ম্যাসাকারের খবরও পুরোনো হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত ইয়েমেন এবং সিরিয়ার পরে মুসলমানদের নতুন কোনো ভূ-খণ্ডকে বেছে নেওয়া হবে। যুগ যুগ ধরে ঝরবেই কেবল মুসলমানের রক্ত।

পূর্ববর্তি সংবাদকলকাতায় করোনো নেগেটিভ-পজেটিভ দ্বন্দে আহত ৬
পরবর্তি সংবাদআওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে সহ্য করতে পারে না: রিজভী