জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন

 মাওলানা তারিক জামিল।।

হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআয র. কে  বলেছেন, “মুআয! নিজের যবানকে নিয়ন্ত্রণ করো। এটাই আমার পুরো শরীয়ত। এতেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন”। এই কথা তিনি কাকে বুঝিয়েছেন? মুআযকে। কীভাবে বুঝিয়েছেন? যেভাবে ছোট বাচ্চাকে আকৃষ্ট করতে বুঝানো হয়। শুধু এতটুকু বললেই তো যথেষ্ট ছিল যে, “ভাই! যবানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করো”। ছোট শিশুর মত করে বুঝিয়েছেন। কারণ, এটা অনেক কঠিন একটা কাজ। বিশাল একটি মালবাহী গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কিন্তু ২ ইঞ্চির যবানকে ব্রেক লাগানোর সময় সব ব্রেক ফেল হয়ে যায়।

আজ ঘরে ঘরে যত অশান্তি, তার কারণ‌ও এই যবান। আর ইনি কে, যাকে হুযুর সা. ছোট্ট শিশুর মত করে বুঝিয়েছেন? মুআয বিন জাবাল। তিনি কে? আমার নবী বলেন, “কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের আলেমদের পতাকা মুআযের হাতে থাকবে”।

আমি গতমাসে জর্দানে আমাদের এক তাবলীগী ইজতেমায় গিয়েছিলাম। আমি সেখানে আম্মানের আগে ইরবিদ গিয়েছিলাম। ইরবিদের আঠারো-বিশ কিলোমিটার আগে হযরত মুআযের কবর রয়েছে। পিতা এবং পুত্র উভয়ের কবর সেখানে আছে। হযরত উমর রা. এর খেলাফতকালে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিল। যখন আমি ভেতরে গেলাম, তখন দেখলাম সেখানে মৃত্যুসন লেখা রয়েছে ১৮ হিজরী। আর এখন ১৪৩৫ হিজরী। ১৪১৭ বছর হয়ে গেছে এই মানুষটি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। যেই কামরায় কবর ছিল, আমি যখন তাতে প্রবেশ করলাম, অনুভব করলাম পুরো কামরাতেই সুবাস আর সুবাস। কবরের উপর দুই-চারটি চাদর রাখা ছিল। আমি ভাবলাম, হয়তো এই চাদরে সুগন্ধি লাগানো রয়েছে। যে কারণে এই সুবাস ছড়াচ্ছে। তখন আমি সূরা ফাতিহা পড়ে চলে গেলাম এবং নিকটবর্তী একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে পুনরায় আসলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলাম যে, এটা কেমন সুবাস? এক লোক আমার পাশে দাঁড়ানো ছিল। তিনি এই ভাবে চাদর শুঁকে দেখছিলেন যে, হয়তো চাদরে কোন সুগন্ধি লাগানো আছে। এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, “জনাব! এটি চাদরের সুবাস নয়। এটি এই কবর‌ওয়ালার সুবাস। চব্বিশ ঘণ্টা এই সুবাস বের হতে থাকে” অতঃপর আমি পরীক্ষার জন্য প্রত্যেকটি চাদর শুঁকলাম, কোথাও কোন সুগন্ধি লাগানো ছিল না। ইনিই হলেন সেই মুআয। যার ইন্তেকালের পর ১৪১৭ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, অথচ কবর এখনো সুবাস ছড়াচ্ছে। আমি কোন শুনা কথা বলছি না, বরং চোখে দেখা ঘটনা বর্ণনা করছি। গতমাসে আমি নিজেই সেখানে গিয়েছি। এই লোকটিকেই (রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন ভাবে বুঝাচ্ছেন, যেমন করে ছোট শিশুকে বুঝানো হয়। “মুআয! যবানকে নিয়ন্ত্রণে রাখো”।

যদি যবান নিয়ন্ত্রণে এসে যায়, তাহলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া শেষ হয়ে যাবে। এটা তো সম্ভব নয় যে, কখনোই উচ্চবাচ্য হবে না। তবে যদি স্বামী রাগান্বিত হয়ে যায়, তাহলে স্ত্রী যবান নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। স্ত্রী রাগান্বিত হলে স্বামী যবান নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। যদি দু’জনেই এটা করতে পারেন, তাহলে তাদের ঘর জান্নাতে পরিণত হবে। কখনো শাশুড়ি উত্তেজিত হলে বৌ চুপ হয়ে যাবে। বৌ উত্তেজিত হলে শাশুড়ি চুপ হয়ে যাবে। যদি ছেলে উত্তেজিত হয়ে যায় তাহলে বাপ চুপ হয়ে যাবে। বাপ উত্তেজিত হলে ছেলে চুপ হয়ে যাবে। এই দাবি করবেন না যে, “আমি হলাম পিতা, অথচ সে আমার আগে আগে কথা বলে!” মানুষ তো মানুষই। ভুল তো হতেই পারে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আপনারা যবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। এই কথা যেন কেউ না বলে যে, আপনি মানুষকে কষ্ট দেন। المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সেই ব্যক্তিই তো প্রকৃত মুসলমান, যে নিজের হাত ও মুখ দ্বারা কাউকে কষ্ট দেয় না”

তিনি আরো বলেন, “আল্লাহর কসম! ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়” এই কথা তিনি তিনবার বললেন। কোন্ ব্যাক্তি! মদপান করনেওয়ালা? না। নামায ছাড়নেওয়ালা? না। যিনাকারী? না। জুয়াড়ি? না। তাহলে কে?কে? তিনি বললেন, “যেই ব্যক্তি নিজের পাড়া-পড়শীকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়। যেই ব্যক্তি নিজের সাথী-সঙ্গীকে কষ্ট দেয়, সে ঈমানদার নয়”। নিজের যবানকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে অভ্যস্ত করে তুলুন। সহ্য করতে শিখুন।

হীরা মূলত কী? কার্বন। তাহলে হীরা কীভাবে হয়েছে? ডায়মন্ড কীভাবে হয়েছে? তেজ সহ্য করতে করতে আল্লাহ তাকে হীরা বানিয়ে দিয়েছেন। যদি তোমরাও হীরা হতে চাও, প্রিয় হতে চাও, তাহলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো। নিজের যবানকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো। যবানের উপর আল্লাহ তায়ালা দুইটা দরজা লাগিয়ে দিয়েছেন। এগুলোকে বন্ধ রাখুন। সাথে বত্রিশটি তালা আছে, আল্লাহর ওয়াস্তে এগুলোকে বন্ধ করতে শিখুন। যদি জীবনে সুখ ও আনন্দ চান, তাহলে ধৈর্য্য ধরতে শিখুন। আর যদি জীবন ধ্বংস করত চান, তাহলে যবান নিয়ন্ত্রণহীন করে দিন। যার যবান খুলে গেছে, তার দ্বীন চলে গেছে। যার যবান নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, পুরো দ্বীন তার জন্য সহজ হয়ে গেছে। হযরত লুকমান বলেন, “বাছা! চুপ থাকার কারণে কখনো আমি লজ্জিত হ‌ই নি। চুপ থাকার কারণে কখনো আমার আফসোস করতে হয় নি। বরং যখনি আফসোস করেছি, কথা বলার কারণেই করেছি যে, হায়! এ আমি কী বলে ফেললাম!”

অনুবাদ: শাহাদাত হুসাইন

পূর্ববর্তি সংবাদকরদাতাদের গোপনীয় তথ্য ভিয়েতনামের হাতে চলে যাওয়ার অভিযোগ
পরবর্তি সংবাদরাহুলের কটাক্ষ: মোদির ব্যর্থতাগুলো হার্ভার্ডের পাঠভূক্ত হতে পারে