আবারো লঞ্চডুবি, স্বজন হারাদের চিৎকারে ভারী সদরঘাট

রায়হান মুহাম্মদ।।

নদী পথে লঞ্চ ডুবির ঘটনা এদেশে নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে এমন দুর্ঘটনায় স্বজন হারাদের আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। মিডিয়া মারফতে শোক ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এরপর সময় গড়ায়, কিন্তু দুর্ঘটনার আড়ালে চাপা পড়ে আসল ঘটনা, শনাক্ত হয় না দোষীরা। বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটে এমন ঘটনার।

বেশ কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে রাজধানীর শ্যামবাজার বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে আজ সকাল ৯টায় মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুরগামী ময়ূর টু নামে আরেকটি লঞ্চের ধাক্কায় মূলত দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় নারী, শিশু ও পুরুষসহ এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন সময়ে সুযোগ পেলেই যাত্রী সেবার বিপরীতে লঞ্চগুলোতে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী বোঝাইয়ের এক রমরমা বাণিজ্যিক চিত্র ভেসে ওঠে আমাদের সামনে। এতে লঞ্চ মালিকদের বাণিজ্যিক লালসার শিকার হয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান অনেকেই।

শুধু এমন বড়সড় লঞ্চ ডুবির ঘটনা নয়, এছাড়াও দেশে পণ্যবাহী লঞ্চ ও ট্রলার ডোবার ঘটনা ঘটে অহরহ, গতকালই চাঁদপুরে পণ্যবাহী ট্রলার ডুবে লাখ টাকা ক্ষতির খবর এসেছে মিডিয়ায়। আজ ঘটল অনাকাঙ্ক্ষিত এ দুর্ঘটনা। স্বজন হারাদের চিৎকারে ভারী হয়ে উঠল সদরঘাটের আকাশ,বাতাস। যার হারিয়েছে সেই বুঝে হারানোর যন্ত্রণা, বাকিদের কি যায় আসে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন এমন বার্তায় দিয়ে যাচ্ছে বারবার।

বুড়িগঙ্গায় আজকের দুর্ঘটনার পর ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে উদ্ধার করতে নরায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ষায় বুড়িগঙ্গার পানি বেড়ে জাহাজটি পোস্ত গোলা ব্রীজে আটকে গেছে, তাই কোটি টাকা ব্যয় করে উদ্ধার কাজের জন্য বানানো  জাহাজটি  কাজে লাগানো গেল না সময় মতো।

বারবরের মতো দুর্ঘটনার সময়ে এবারো দেখা গেল অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা। অনেকেই বলছেন,  উদ্ধারের জন্য এ জাহাজটি নির্মাণের অনেক আগেই নির্মিত হয়েছে পোস্তগোলা ব্রিজ। বিভিন্ন পরিস্থিতি, ব্রীজের উচ্চতা, দুর্ঘটনার আগপিছ, এসব না ভেবেই কি তবে জাহাজটি নির্মাণের সময় কোটি টাকা ব্যয় করা হল? কোটি টাকা ব্যয় করেও জনগণের সহায়তায় ব্যবহার করা গেল না জাহাজটি এ নিয়ে আক্ষেপ জানাতে দেখা গেছে অনেককেই।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমার কাছে এ লঞ্চ ডুবির ঘটনাকে পরিকল্পিত মনে হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেছেন, ফিটনেস না থাকা, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচলে বারবার নিষেধের পরও লঞ্চ মালিকরা এসব মানছেন না।এব্যাপারে দ্রুতই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরাবরের মতো এবারো দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে দুর্ঘটনার আড়ালে চাপা পড়বে না আসল ঘটনা, উপযুক্ত শাস্তি পাবে দোষীরা নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর কথায় এমন শান্ত্বনা খুঁজে পেতে চান দেশের মানুষ।

পূর্ববর্তি সংবাদসুন্দরবনের সব নদী ও খালে দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা
পরবর্তি সংবাদএখন থেকে করোনা পরীক্ষায় ফি লাগবে