ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বাগেরহাটের চিতলমারীর মরা চিত্রা নদী খননে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এক স্বামীহারা নারীর বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। এতিম সন্তানদের নিয়ে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৗশলীসহ সংশ্লিষ্ট অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নিকট ওই নারী তার বসতবাড়ি রক্ষার জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি সীমাহীন অনিয়ম-দূর্নীতির তদন্ত এবং তার একমাত্র বসতবাড়ি রক্ষার দাবীও তুলেছেন।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সুরশাইল গ্রামের মরা চিত্রা নদী পাড়ের বাসিন্দা রূপালী বেগম। ২০০৬ সালে তার স্বামী রুহুল আমিন মুকুল দুটি নাবালক ছেলে মেয়ে রেখে মারা যান। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দর্জি কাজ করে তিনি তার ছেলে তারেক শেখ ও মেয়ে তমাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। পাশাপাশি বহু কষ্টে নিজস্ব সম্পত্তিতে একটি আধা পাঁকা বাড়ি নির্মাণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিত অভিযোগে রূপালী বেগম উল্লেখ করেন, সম্প্রতি মরা চিত্রা নদী পুনঃখননের নামে বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছা-খুশি মতো কাজ করছে। চিত্রা নদীর পাড়ের কয়েকজন প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা বাঁচাতে গিয়ে নকশার পরিমাপের চেয়ে কম নদী খনন করা হচ্ছে। ফলে কমে গেছে প্রসস্থতা। পানি ভরা খালে চলছে খনন। এতে ওই নারীর বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে পড়েছে। চিতলমারী-সুরশাইল-পাটরপাড়া সড়কে ফাঁটল সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো জানান, প্রভাবশালীদের বাড়ির সামনে খননকৃত চিত্রা নদীর মুখের প্রসস্থতা ৪০ ফুটের কম। কিন্তু এই নদীর প্রায় পাঁচ-ছয়শ গজ দুরে খননকৃত মুখের প্রসস্থতা রয়েছে ৬০-৭০ ফুটের বেশি। একই নদীর খনন কাজে পাশাপাশি দুই জায়গায় মাপে এমন বৈষম্যের নেপথ্য কারণ কি? এ নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রূপালী বেগম অভিযোগ করেন, বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামানসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মোঃ ইলিয়াস হোসেনের জন্য তার মাথা গোজার শেষ সম্বল বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি তার বসতবাড়ি রক্ষাসহ নদী খননের ‘সমুদ্র চুরি’র বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবী করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট অভিযোগে তিনি ইতোমধ্যে এই নদীর বিষয়ে বিভিন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিলিপি যুক্ত করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে রবিবার বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগের কথা আমি শুনিনি। মরা চিত্রা খননে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। তিন বার কেন প্রয়োজনে আবারও মাপা হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলব।
এ ব্যপারে ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠান কাবিকো লিঃ এবং জুয়েল কনষ্ট্রাকশনের (জেভি) পক্ষে মোঃ ইলিয়াস হোসেন অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, খাল খনন চলছে। এখনও কোন বিল পাই নাই। পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে নকশা দেবে ঠিকাদার সেই ভাবে খনন করবে। কোন কোন স্থানে নদীর পাশে নানা ধরণের স্থাপনা থাকায় নকশা ও পরিমাপ অনুযায়ী খনন কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে সময় ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে তাদের কোন হাত নেই।