ইমামে আযম: কারাগারে শহীদ ইতিহাসের অমর মনীষী

ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর কবরস্থান পাশ্ববর্তী মসজিদ।

তারিক মুজিব ।।

ইমাম আবু হানিফা রহ.। ইলমি আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ইতিহাসের কিতাবগুলোতে বিখ্যাত এ মনীষীর রয়েছে বহুমাত্রিক পরিচিতি। ইলমের সাগরে নিমগ্ন এ জ্ঞানসাধক বাতিলের বিরুদ্ধেও ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। জালিম শাসকের রোষানলে পড়ে ১৫০ হিজরীতে তিনি কারাগারে শাহাদাত বরণ করেন।

তখন আব্বাসী শাসনামল। খলিফা মনসুর ক্ষমতায়। মদিনায় খলিফা মনসুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন নবী দৌহিত্র হাসান রাযি.-এর বংশধর মোহাম্মদ রহ.। ১৪৫ হিজরীতে তিনি কুফায় সফর করেন।

তখন নিজ মাতৃভূমি কুফাতেই অবস্থান করছিলেন ফিকহ শাস্ত্রের বরিত পুরুষ ইমাম আবু হানিফা রহ.। মদিনা থেকে আগত মোহাম্মদ রহ. তার সাক্ষাতপ্রার্থী হন। স্বাভাবিকভাবেই নবী পরিবারের সদস্য হওয়ায় আবু হানিফা রহ. তাঁকে উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শন করেন।

গুজব রটে যে, আবু হানিফা রহ. মদিনার বিদ্রোহের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন ও সাহায্য করেছেন।

ততদিনে ইমাম আবু হানিফার রহ.-এর পরিচিতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। খলিফা মনসুর শঙ্কিত বোধ করলেন। আবু হানিফা রহ. কে কুফা থেকে বাগদাদে নিয়ে আসেন।

খলিফা মনসুর নিজের শাসন নিঃশঙ্ক করতে ইমাম আবু হানিফা রহ.কে এই মর্মে অনুরোধ করেন যেন তিনি এই ফতোয়া প্রদান করেন যে, খলিফা মনসুর ‘আলা মিনহাজিন নবুওয়্যাহ’ তথা নববী পথ ও পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত। বিনিময়ে মানসুর আবু হানিফাকে কাযী-উল-কুযাত পদ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এর মানে এই দাঁড়ায় যে, খলিফা মনসুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হারাম। যা ছিল প্রকারান্তরে খলিফা মানসুরের যাবতীয় জুলুমকে একবাক্যে বৈধ বলে ফতোয়া দেওয়ার নামান্তর।

বাগাদাদে জামে আবু হানিফা রহ.

আবু হানীফা রহ. দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখান করেন। মনসুর ইমাম আবু হানিফার পায়ে ত্রিশটা বেত্রঘাত করে, তাঁর পা ফেটে রক্ত ঝরতে শুরু করে এবং তাঁকে কারান্তরীণ করার নির্দেশ দেওয়া হয। কয়েকদিন পর মনসুর পুনরায় ইমাম আবু হানিফাকে ডেকে এনে ক্ষমা চান এবং তাঁর সামনে হাদিয়াস্বরূপ ৩০ হাজার দিরহাম উপস্থাপন করেন। এবারেও আবু হানিফা রহ. মনসুরের যাবতীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

ঐতিহাসিক বর্ণনামতে, এবার মনসুর এই নির্দেশ প্রদান করেন যে, তার মতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক পরবর্তী দিন ১০ বেত্রাঘাত করে বাড়িয়ে আবু হানিফাকে বেত্রাঘাত করা হবে। একাদশতম দিনে অর্থাৎ ১১০ বেত্রাঘাত প্রদানের দিন তাঁকে বিষমিশ্রিত শরবত পান করানো হয়। সেজদারত অবস্থায় আবু হানীফা রহ. শাহাদাত বরণ করেন।

এই ছিল আমাদের পূর্বপুরুষের আদর্শ। ত্যাগ ও কুরবানী।  নিজের মৃত্যুর বিনিময়েও অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি। পূর্বসূরীর পদাঙ্গ অনুসরণ করেন ইমাম আহমদ, কাযী ইয়ায, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ.। যুগ যুগ ধরেই এ ধারা অনুসৃত।

ইলমের পথে সমুচ্চ খেদমতের পাশাপাশি তাঁদের জীবন ছিল কুরবানীময়। কুরবানীর এই মিছিলে যুক্ত ছিলেন আমাদের নিকট অতীতের শামেলীর ময়দানের মহান বীরেরাও। আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।

পূর্ববর্তি সংবাদকরোনা আক্রান্তে কানাডাকে ছাড়িয়ে ১৭তম বাংলাদেশ
পরবর্তি সংবাদরাজশাহীতে দিনদুপুরে ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাই!