ঐতিহ্যের নগরী মিশরের মুদ্রায় ব্যবহৃত কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদ

তারিক মুজিব ।।

মিশর প্রাচীন ঐতিহ্যের নগরী। দ্বিতীয় খলিফা উমর রাযি.-এর শাসনামলে সাহাবি আমর ইবনুল আস রাযি. মিশর মুসলমানদের করতলগত করেন। সেই থেকে মিসর মুসলিম ঐতিহ্যের নগরীও। দেশটির রাজধানী কায়রো হাজার বছরের মুসলিম সংস্কৃতির আধার।

আমর ইবনুল আস রাযি. মিশর জয় করার পর খুব দ্রুত এর সমগ্র ভূখণ্ডে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। গড়ে উঠে প্রাচীন সব মসজিদ এবং দ্বীনি বিদ্যাপীঠ। হাজার বছর ধরে এসব মসজিদে ইবাদত হয়েছে এবং কুরআনের তালীম হয়েছে।

মিসরের প্রাচীন মসজিদগুলোর ছবি দেশটির মুদ্রায় ব্যবহার করা হয়। গত শতকের বিশের দশক থেকে শুরু হয় এই উদ্যোগ।

সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে মিশরের নতুন-প্রাচীন, ঐতিহাসিক সব মসজিদেই জামাতে নামায আদায় বন্ধ রয়েছে। দেশজুড়ে মিসরবাসী অধীর অপেক্ষায় বসে আছে, কবে দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং মসজিদে তাদের পুনরায় নামায আদায়ের তাওফিক হবে। দৈনন্দিন কাজে তারা যখন অর্থের লেনদেন করে তখন তারা আবেগে উদ্বেলিত হয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে মিশরের মুদ্রায় ব্যবহৃত মসজিদগুলোর পরিচিতি তুলে ধরেছে।

১. সুলতান কায়তাবি মসজিদ

মিশরের মুদ্রায় সর্বপ্রথম সুলতান কায়তাবি মসজিদের ছবি ছাপা হয়। মসজিদ মামলুল শাসক সুলতান কায়তাবির শাসনামলে নির্মিত। মিশরে মামলুকরা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসন কায়েম করে। সুলতান কায়তাবি মসজিদটি মিশরের রাজধানী কায়রোর পূর্বাংশে অবস্থিত। চমৎকার নির্মাণশৈলির এ মসজিদটি ১৯১৩ সালে মিশরের একটি মুদ্রায় ছাপা হয়। এরপর গত একশত বছর যাবত এ মসজিদটি মিশরের মানুষ তাদের মুদ্রায় দেখে আসছে।

২. মুহাম্মদ আলী মসজিদ

কায়রোতে সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর দূর্গে অবস্থিত মুহাম্মদ আলী মসজিদটি স্থানীয়ভাবে ‘মরমর মসজিদ’ নামে পরিচিত। মসজিদটির নির্মাণশৈলিতে উসমানীয় সালতানাতের স্থাপত্যরীতি লক্ষ্য করা যায়। এটি মিশরের মুদ্রায় ব্যবহৃত দ্বিতীয় মসজিদ। ১৯২১ সালে চূড়ান্তভাবে এই মসজিদের ছবি মুদ্রায় প্রকাশ করা হয়। এই মুদ্রাটিই মিশরে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।

মরমর মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি চমৎকার স্থাপত্যশৈলির কারণে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুউচ্চ মিনার এবং নানাবর্ণের কারুকার্য শোভিত এই মসজিদটির উচ্চতা ৫২ মিটার। অনেক দূর থেকে এই মসজিদটি দৃষ্টিগোচর হয়।

৩. সুলতান হাসান জামে মসজিদ

এই মসজিদটি মিশরের ঐতিহাসিক ইসলামি নিদর্শনের অন্যতম। সুলতান নাসের হাসান ইবনে কালুন এই মসজিদের নির্মাতা। এই মসজিদের পাশেই সুলতান চার মাযহাবের পাঠদানের জন্য একটি মাদরাসাও স্থাপন করেছিলেন। ৭৬৪ হিজরীতে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক মাকরিযির বর্ণনা মতে এই স্থাপনাতে প্রতিদিন ২০ হাজার দিরহাম খরচ করা হতো।

বিশাল গম্ভুজ, সুউচ্চ মিনার এবং চমৎকার কারুকার্যের কারণে ঐতিহাসিকগণ এই মসজিদ কমপ্লেক্সকে পৃথিবীর আশ্চর্য কতিপয় স্থাপনার অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

১৯৭০ সালে প্রথমবার এবং ১৯৭৯ সাল থেকে চূড়ান্তভাবে এই মসজিদটিকে মিশরের একটি মুদ্রায় স্থান দেওয়া হয়।

৪. মসজিদে রিফায়ি

মিশরের সুপরিচিত সুলতান হাসান জামে মসজিদের পাশেই এই মসজিদের অবস্থান। ঐতিহাসিক একটি স্থাপনার পাশে থেকেও আলাদা পরিচিতি পাওয়া থেকেই বুঝা যায় মসজিদে রিফায়ির মাহাত্ম্য। এটি কায়রোর বড় মসজিদগুলোর অন্যতম। মামলুক সুলতানদের স্থাপত্যশৈলি অবলম্বনে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯১২ সালে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।

মিশরের একজন প্রখ্যাত সুফি দরবেশ আবু রিফায়ী নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়। মসজিদের এককোনে রয়েছে আবু রিফায়ীর কবর।

সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে এই মসজিদের ছবি মুদ্রায় প্রকাশ করা হয়। তখন মসজিদের ভিতরের অংশের ছবি বিদ্যমান ছিল মুদ্রায়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে মসজিদের বাহিরের অংশের ছবি প্রকাশ করা হয়।

৫. কানি মসজিদ

মিশরের সবচেয়ে বড় অঙ্কের মুদ্রাটিতে স্থান পেয়েছে এই মসজিদটি। ৯০৮ হিজরীতে এই মসজিদ নির্মাণ করেন মামলুক শাসক সুলতান কানি। নানাবিধ কারণে মামলুক সুলতানদের মাঝে সুলতান কানি অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন।

৬. আহমদ ইবনে তালুন

মসজিদ এটি মিশরের সর্বপ্রাচীন এবং মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এর নির্মাণকাল ২৬৫ হিজরী। এই মসজিদে প্রবেশদ্বার ২১ টি এবং জানালা রয়েছে ১৩০ টিরও বেশি।

সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সালে এই মসজিদের ছবি মুদ্রায় প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে মসজিদের অপরাংশের ছবি ব্যবহার করা হয়।

৭. জামে আযহার মসজিদ

ইবনে তালুন মসজিদের পর এটি মিশরের সর্বপ্রাচীন মসজিদ। এটির নির্মাণকাল ৩৫৯ হিজরী। এখানেই পরবর্তী পৃথিবী বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান জামে আযহার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তি সংবাদচীনে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ, নতুন আক্রান্ত ৫৭
পরবর্তি সংবাদআক্কেলপুরে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন