সরকার নির্দেশিত ৬০ শতাংশের বিপরীতে ‘যাচ্ছে তাই’ ভাড়া আদায় গণপরিবহনে

রায়হান মুহাম্মদ।।

করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে কয়েক দফায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষ হল প্রায় ২ মাস পর। সব ধরণের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে চালু হয়েছে সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। ১ জুন থেকে চালু হয়েছে গণপরিবহণ। এর আগে ৩১ মে বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে গণপরিবহণে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি কিছু ক্ষেত্রে মানার চেষ্টা করা হলেও যাত্রীদের থেকে দিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

দেশের সংকট বিবেচনায় সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও হেলপাররা একশভাগ ভাড়া আদায় করছেন বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ যাত্রী। কেউ কেউ বলছেন, একদিকে করোনা সংক্রমণ, অন্যদিকে আস্তে আস্তে বাড়ছে রাজধানীতে মানুষের ভিড়, অনেক ক্ষেত্রে চাইলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না, তার মাঝে বাস হেলপারদের ‘যাচ্ছে তাই’ ভাড়া আদায়, এ যেন মড়ার ওপর খাড়ার ঘা।

কিছুটা ক্ষোভ মেশানো কন্ঠে সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলছেন, দীর্ঘ ২ মাস পর বাস চালু হল, বাড়িয়ে দেওয়া হল বাস ভাড়া। দীর্ঘ ছুটিতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের তো কোন আয় বাড়েনি, তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে করোনাকালে কষ্ট হলেও এই বাড়তি ভাড়া দিতে কোন আপত্তি নেই সাইফুল ইসলামের, কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও যদি এ ভাড়া বহাল থাকে তবে তা নিশ্চিত যাত্রীদের উপর অন্যায় হবে বলছিলেন তিনি।

রাস্তায় বেড়েছে গণপরিবহনের চাপ। ছবি: সংগৃহীত

হাবিবুর রহমান নামে আরেক যাত্রী বলছেন, শুধু করোনাকাল নয়, বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের দুভোর্গের শিকার হওয়ার ব্যাপারটি এদেশে পুরাতনই বলা যায়। হেলপাররা সবসময় যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন, সরকারের ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনকে কাজে লাগিয়ে দিগুণ ভাড়া আদায় করতে তাই একটু বেশিই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে হেলপারদের মাঝে। তাইতো ৬০ শতাংশ বৃদ্ধিতে ১০ টাকার ভাড়া ১৬ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা।

বাস ভাড়া বেশি আদায় নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু চালক-হেলপারের দাবি, ‘ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। হয়তো দুই-এক টাকা কমবেশি হতে পারে। তাছাড়া যাত্রীসংখ্যা কম।’

তবে রাজধানীতে কয়েকটি বাসের কিছু আসন ক্রস চিহ্ন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। যাত্রীরা এ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।

রাজধানীতে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েই চলছে বাস। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শ্যামলী এলাকায় দায়িত্বরত টিএসআই আতাবুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া নিয়ে এখনো কোনো ঝামেলা আমাদের চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব’।

তবে যাত্রীদের মুখে শোনা গেছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, বাস ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত,অভিযোগ করে কখনো এর সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যায় না, তাই তাই মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না আমাদের।

আরো পড়ুন: মুমূর্ষু রোগীরা পাচ্ছেন না আইসিইউ সেবা: ড. খালিদের আক্ষেপ ও আহ্বান

এদিকে গণপরিবহণ চালুর চতুর্থ দিনে রাজধানীতে বাস ও যাত্রীর উপস্থিতি বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা বেশির ভাগ বাসে অর্ধেক যাত্রী নিতে দেখা গেছে। বাসে ওঠার সময় স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে দেখা গেছে কিছু ক্ষেত্রে।

যাত্রী উঠানোর আগে তাদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

বাস ভাড়া বাড়ানোর শুরু থেকেই তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘যেকোনো সংকটে বা অজুহাতে দেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ালে তা স্বাভাবিক সময়েও কমানোর কোনো নজির নেই। সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বর্ধিত করলেও প্রকৃতপক্ষে বাস মালিকগণ নানা চল চাতুরি করে ১২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দেবে’। বাস্তবেও যেন তাই হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব।

এদিকে, বাসের ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা না মানলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে প্রশাসন আরো কঠোর নজরদারি বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন মন্ত্রী।

আরো পড়ুন: লকডাউনের সাথে সাথে কি শেষ হলো সচেতনতাও?

পূর্ববর্তি সংবাদবজ্রপাতে একদিনে নয় জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদকরোনা পরীক্ষায়ও দালালের দৌরাত্ম্য!