সংকটকালে নিরবে নিভৃতে মানবতার সেবায় নিয়োজিত আরো বহু উদ্যোগী

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

করোকাল। কঠিন হচ্ছে মানুষের জীবন। কমছে মধ্যবিত্তের সংখ্যা, বাড়ছে ক্ষুধা কাতর মানুষ ও নিম্নবিত্তের কান্না। করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা ও গবেষণার শেষ নেই। প্রতিদিন আসছে নিত্য নতুন গবেষণার ফলাফল। এসবে এখন আর মানুষের বিশ্বাস নেই বললেই চলে। এর মাঝে অনেকেই আবার বলছেন করোনার সাথে তাল মিলিয়ে বাঁচতে শেখার কথা। কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে পরিস্থিতি, কিন্তু থামছে না করোনার প্রকোপ।

এদিকে করোনাকে ঘিরে মানুষের মাঝে বেড়েছে অমানবিকতা। খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসছে যেন চামড়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকা পৈচাশিক এক চেহারা। কত সব অপ্রীতিকর ঘটনা, এসব দেখে প্রথমে আঁতকে উঠলেও এখন যেন গা সয়া হতে চলেছে সব ।

তবে মহামারীর এই কঠিন সময়েও নিজের সব দুঃখ ভুলে দুখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুন্দর একটা মন লালন করা কিছু মানুষ। মহামারীর এই সংকটকালে রাজধানী ও পুরো দেশে কিছু সংগঠনকে সব সময় মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে। মানব সেবার এই মহত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলো যেমন ভূমিকা রেখেছে, তাদের দেখে উদ্যোগী হয়েছে আরো অনেক সংগঠন। নিজেদের সামর্থ্যের ভেতরে জেলা পর্যায়ে দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করেছে জেলাভিত্তিক অনেক সংগঠন। সংকটকালে সাংগঠনিক সেবা ছাড়াও বাড়ির পাশে সংকটাপন্ন প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। পুরো সহায়তা করতে না পারলেও দুয়েক বেলার খাবার দিয়ে প্রতিবেশীকে সহায়তা করেছেন এমন হৃদ্যতা ও সম্প্রীতির খবরও পাওয়া গেছে শত অমানবিক খবরের মাঝে।

আরো পড়ুন: গরীবের দ্বারে দ্বারে রমজান ও ঈদ প্যাকেজ পৌঁছে দিচ্ছে দরদী সংগঠনগুলো

মানুষের পাশে দাঁড়ানো সংগঠনগুলো  শুধু ত্রাণ বিতরণের মাঝেই তাদের দ্বায়িত্ব সিমাবদ্ধ রাখেনি, সংকটকালে আপনজন পর হয়ে প্রিয়জনকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনায় যখন সবাই বিস্মিত হয়েছে,  এমন সময় নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে করোনা আক্রান্ত অথবা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষদের লাশ দাফন করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে এ সংগঠনগুলো। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মুসলিমদের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সৎকারেও কার্পন্য করেনি এ সংগঠনগুলো। সংকটকালে ত্রাণ সহায়তা মোটামুটি সবাই করলেও মহামারি আক্রান্তদের লাশ দাফনের মতো সাহসী ভূমিকা পালন করতে আলেম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মতো অন্য কারো তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ সদস্যের লাশ দাফনের খবরও পাওয়া গেছে।

এসব ছাড়াও করোনা থেকে সুরক্ষায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনসচেতনতায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক, হ্যান্ডস্যানেটাইজার বিতরণ, জীবাণূনাশক স্প্রে ছিটিয়েছে আলেম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। আলেম সংগঠন ছাড়াও অন্য অনেক সংগঠনের সেবার কাজগুলো মূলায়িত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায়।

এই সংগঠনগুলো ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় প্রচারের আড়ালে থেকে নিরবে নিভৃতে সংকটকালীন সময়ে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকেই। কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবার কেউ সংগঠনের মাধ্যমে। ফেসবুক অথবা কোন প্রচার মাধ্যমে কখনো আসছেনা তাদের খবর। নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এমন উদ্যোগতাসহ সংকটকালে সেবা করে যাওয়া সবার অবদান করোনা পরবর্তী ইতিহাসে জাতি স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে।

আরো পড়ুন:সংকটের মুহুর্তে মানবিকতার  প্রতিচ্ছবি

পূর্ববর্তি সংবাদটাঙ্গাইলে ত্রাণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তিনজনকে জরিমানা
পরবর্তি সংবাদআম্পানে বিদ্যুতের ক্ষতি প্রায় ৭০ কোটি টাকা