ঝড় তুফানের সময় আমাদের করণীয় কী

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : ইসলামে মানুষের সকল অবস্থার জন্যে দিক নির্দেশনা রয়েছে। ঝড় তুফানের সময় কী করতে হবে তাতেও রয়েছে  ইসলামের শিক্ষা, রাসূল স. এর আদর্শ।

হাদীস থেকে জানা যায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসূল (সা.) বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে রাসূল (সা.) মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

এ জন্য ঘূর্ণিঝড়  আগমনে আমাদেরও এ আমলগুলোর প্রতি যত্মবান হতে হবে। বিশেষত অতীতের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। বেশি বেশি ইস্তিগফার, নফল নামাজে সেজদায় পড়ে ক্রন্দন করে ক্ষমা প্রার্থনা, নফল রোজা, সূরা ফাতেহা পাঠ, দুরূদ শরীফ পাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়ায়ে ইউনূছ প্রভৃতি পাঠ করতে হবে।

নিচের এই দোয়াগুলো পাঠ করা যেতে পারে:
দোয়া: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, যখন প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া শুরু হতো তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দোয়া পড়তেন: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি; ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়াশাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম।

পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রাসূল (সা.) কয়েকটি দোয়া শিখিয়েছেন।

জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে
اﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণটাই কামণা করি চাই। এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। আবূ দাউদ ৪/৩২৬, নং ৫০৯৯; ইবন মাজাহ্ ২/১২২৮, নং ৩৭২৭।

মেঘের গর্জন হলে যে দোয়া পড়তে হবে
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-
يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ
উচ্চারণ: ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি
অর্থ: পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা যা-লিকা।
অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও। (তিরমিজি)

ঝড় বা ঝড়ো বাতাস থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺧَﻴْﺮَﻫَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺧَﻴْﺮَ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّﻫَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺃُﺭْﺳِﻠَﺖْ ﺑِﻪِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (বুখারী, ৪/৭৬, ৩২০৬ ও ৪৮২৯)

দোয়ার পাশাপাশি প্রাণ বাঁচানোর জন্যে উদ্যোগী হওয়াও ইসলামের শিক্ষা

যে কোনো জাতীয় দুর্যোগ ও সংকটের সময় তওবা ইস্তেগফার করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা গোটা দেশবাসীর দায়িত্ব। শুধু উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা নন বরং সারা দেশের মানুষের দায়িত্ব বেশি বেশি দোয়া করা। এবং এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া।

এমন সংকটের সময় জীবন বাঁচানো এবং প্রাণ বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হওয়া এবং নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়াই ইসলামের শিক্ষা। এসব ক্ষেত্রে হঠকারিতা বা উদাসীনতার কোনো সুযোগ নেই। বরং উপদ্রুত অঞ্চলে বসবাসরত  প্রতিটি পরিবারের করণীয় হচ্ছে, নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ জায়গা গিয়ে ওঠা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে ঘূর্ণিঝড় আমফান অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ রাখুন। আমীন।

পূর্ববর্তি সংবাদঘূর্ণিঝড় আমফান: ভারতের দিঘায় সমুদ্রের জল এখন রাস্তায়
পরবর্তি সংবাদভারতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে করোনা: রেকর্ড শনাক্তের দিনে ১৪০ জনের মৃত্যু