২৫তম তারাবি: আল্লাহর পথে জিহাদ জাহান্নাম থেকে মুক্তির সওদা

মাওলানা রাশেদুর রহমান ।।

২৫তম তারাবিতে সূরা মুজাদালা, সূরা হাশর, সূরা মুমতাহিনা, সূরা সাফ, সূরা জুমুআ, সূরা মুনাফিকুন, সূরা তাগাবুন, সূরা তালাক এবং সূরা তাহরিম পড়া হবে। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৮তম পারা।

৫৮. সূরা মুজাদালা: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ২২, রুকু ৩)

শরিয়তের একটি বিধানের আলোচনার মাধ্যমে সূরাটির সূচনা। সূরায় মজলিসের আদবসংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান আলোচিত হয়েছে। সেসব মোনাফেকের আলোচনাও রয়েছে সূরায়, যারা ইহুদিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখত, আবার নিজেদের ঈমানদার হওয়ার ব্যাপারেও কসম কাটত। আল্লাহ তাআলার দল এবং শয়তানের দলের বিবরণ দিয়ে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৫৯. সূরা হাশর: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ২৪, রুকু ৩)

আল্লাহর সপ্রশংস তসবিহর বর্ণনার মাধ্যমে সূরাটির সূচনা। অপরাধের কারণে ইহুদি গোত্র বনু নজিরকে মদিনা থেকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গটি সূরায় আলোচিত হয়েছে। এরপর ‘ফাঈ’ তথা বিনাযুদ্ধে অর্জিত কাফেরদের থেকে প্রাপ্ত সম্পদ বণ্টননীতি প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে। নবীজির দেওয়া বিধিনিষেধ মেনে চলতে বলা হয়েছে। মোনাফেক ও ইহুদিদের নিন্দা করা হয়েছে। সূরা হাশরের শেষ রুকুতে ঈমানদারদেরকে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর পরিচয়সংক্রান্ত বিবরণের মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৬০. সূরা মুমতাহিনা: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৩, রুকু ২)

কাফেরদের সঙ্গে মুসলিম নীতি কেমন হওয়া উচিত, সে বর্ণনা রয়েছে এ সূরায়। ইসলাম কবুলের পর যেসব নারী মদিনায় হিজরত করে এসেছিলেন, তাদের ঈমান যাচাইয়ের বর্ণনাও রয়েছে সূরায়। কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখো না মর্মে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন: ২৪তম তারাবি: রবের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে?

৬১. সূরা সফ: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৪, রুকু ২)

আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মহিমার বর্ণনা দিয়ে সূরাটির সূচনা। সূরার মূল আলোচ্য বিষয় জিহাদ ও কিতাল। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জান ও মাল কোরবান করার প্রতি এবং তাঁর রাহে জিহাদের প্রতি সূরায় উৎসাহিত করা হয়েছে। সূরার শেষে ঈমানদারদের বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ‘হাওয়ারিরা’ তাদের নবী হজরত ঈসা (আ.)কে দ্বীনের কাজে সহযোগিতা করেছিলেন।

৬২. সূরা জুমুআ: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১, রুকু ২)

সূরা জুমুআর সূচনা হয়েছে আল্লাহর হামদ, সানা ও তসবিহর বর্ণনা দ্বারা। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর গুণাগুণ এবং রিসালাতের মাকসাদ ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এর পর ইহুদিদের আলোচনা করা হয়েছে। আসমানি ওহি তথা তাওরাতের বিধিবিধান অনুযায়ী আমল না করায় তাদেরকে গাধার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যে নিজের পিঠে পবিত্র কিতাব বহন করে; কিন্তু তা থেকে কোনো ফায়দা হাসিল করতে পারে না। সূরার শেষে জুমুআর নামাজ প্রসঙ্গ আলোচনা রয়েছে। মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আজান শোনামাত্রই কেনাবেচা, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ করে দাও। অবশ্য নামাজ শেষে তোমাদের জন্য আবার উপার্জনে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৬৩. সূরা মুনাফিকুন: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১, রুকু ২)

সূরাটিতে মোনাফেকদের মিথ্যাচারিতা, ভেতর-বাইরের অসামাঞ্জস্যতা, মুসলমানদের প্রতি তাদের বিদ্বেষ পোষণ এবং কুৎসা রটনার বিবরণ রয়েছে। সূরায় বলা হয়েছে, মোনাফেকরা যতই ইজ্জত-আভিজাত্যের নামে আস্ফালন করুক না কেন, সত্যিকার ইজ্জত-সম্মান তো একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে ইজ্জত-সম্মান দেন, সে-ই প্রকৃত সম্মানিত; আর তিনি যাকে লাঞ্ছিত করেন, সে কোনোভাবেই সম্মান লাভ করতে পারে না। সূরার শেষে মুসলমানদেরকে বোঝানো হয়েছে, তারা যেন মোনাফেকদের মতো দুনিয়ার মায়ায় মেতে আখেরাতকে ভুলে না যায়। বিষয়সম্পত্তি এবং সন্তান-সন্ততি সাধারণত মানুষকে আল্লাহ ও আখেরাতের কথা ভুলিয়ে দেয়। তাই এ বিষয়ে সাবধান করে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচের নির্দেশ প্রদান করে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন: ;কোনো সংস্থাকে যাকাত দিলে তারা সততা ও শরীয়া নীতি মান্য করে কিনা নিশ্চিত হতে হবে

৬৪. সূরা তাগাবুন: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৮, রুকু ২)

‘সৃষ্টির সবকিছুই আল্লাহর প্রশংসাসহ তসবিহ করে’- সূরার সূচনায় এ সত্যটি প্রকাশের পর বলা হয়েছে, মানুষ দু-দলে বিভক্ত : একদল আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে, আরেক দল শুকরিয়া আদায় করে না, অকৃতজ্ঞ থেকে যায়। সুতরাং পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির মতোই হবে তাদের পরিণাম। সূরায় কেয়ামত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটি ‘ইয়াওমুত তাগাবুন’ অর্থাৎ ক্ষতি ও লোকসানের দিন। কাফের ব্যক্তি কেয়ামতের দিন নিজের ক্ষতি ও ধ্বংস স্বচক্ষেই দেখতে পাবে, আর ইবাদতগোজার মুত্তাকি মোমিন বান্দাও সেদিন আফসোস করবে, হায় দুনিয়ায় যদি আরেকটু বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে আসতাম, তাহলে আরও ওপরে উন্নীত হতে পারতাম। ঈমানদারদের আল্লাহকে ভয় করার, তাঁর পথে খরচ করার এবং কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে সূরাটি শেষ হয়েছে।

৬৫. সূরা তালাক: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১২, রুকু ২)

সূরায় বৈবাহিক এবং পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। তালাক, স্বামীবিচ্ছেদ-পরবর্তী ইদ্দত, স্ত্রীর খরচা এবং তার বসবাসের বিধিবিধানের আলোচনা রয়েছে সূরায়। বারবার তাকওয়া অবলম্বনের এবং আল্লাহকে ভয় করার ফায়দা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। আল্লাহর কুদরত ও মাহাত্ম্যের আলোচনার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

৬৬. সূরা তাহরিম: (মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১২, রুকু ২)

আরো পড়ুন: ২৬তম তারাবি: ‘আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী’

নবী-পরিবারের একটি ঘটনার আলোচনার মাধ্যমে সূরার সূচনা। এরপর বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও, আল্লাহর কাছে সাফ-শুদ্ধ দিলে তওবা কর।’ নবী নুহের হতভাগা কাফের স্ত্রী এবং ফেরাউনের মোমিনা স্ত্রীর আলোচনার মাধ্যমে সূরাটি সমাপ্ত হয়েছে।

লেখক: ইমাম ও খতিব, বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদ।

পূর্ববর্তি সংবাদকক্সবাজারে পুলিশের ধাওয়ায় সিএনজি উল্টে হাফেজ ছাত্র নিহত
পরবর্তি সংবাদসরকারের ত্রাণ বিতরণে চরম জালিয়াতি হচ্ছে: রিজভী