করোনার ওষুধ ‘রেমডিসিভির’ দেশে প্রস্তুত, চড়া দাম নিয়ে উদ্বেগ!

ইসলাম টাইমস ডেস্ক:  করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদন সম্পন্ন করেছে দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান। উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া শেষ করার পর গতকাল ৮ মে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে সরবরাহ করার প্রস্তুতি। তবে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্র বলছে, এ ওষুধের দাম পড়বে অনেক চড়া। এতে ওষুধটি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে কিনা এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন ও উদ্বেগ।

ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনাপরিস্থিতি নিয়ে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা দেশবাসীকে এই সুখবর দিতে চাই যে বিশ্বে করোনার একমাত্র কার্যকর ওষুধ বলে স্বীকৃত জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদনের সব ধাপ আমরা সম্পন্ন করেছি।’

ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ জানিয়েছে, বিধি অনুযায়ী রেমডিসিভির নমুনা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধিনস্ত ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যারোটরিতে জমা দেওয়া হবে এবং ছাড়পত্র ও বাজারজাতের অনুমতি পাওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যেই ওষুধটি বিতরণ শুরু করা হবে।

প্রসঙ্গত,  করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে রেমডেসিভির। গিলিয়েডের নিজস্ব পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষের শিরায় ইনজেকশন হিসেবে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। রোগের তীব্রতার ওপর এর ডোজ নির্ভর করে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য ৫ অথবা ১০ দিনের ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।

ওষুধটি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, খুবই সংকটাপন্ন রোগীর ওপর এটা কাজ করছে। রোগীরা দ্রুত হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং ভাইরাসের ঘনত্ব ওষুধটি কমিয়ে আনতে পারছে। ওষুধটি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য ভালো ফল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যদিও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোনো ওষুধ শতভাগ কার্যকর, এমনটা বলা যাচ্ছে না। তবে রেমডেসিভির ভালো কাজ করেছে।

এই ওষুধটি ইনজেকশন প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ রোগীর শরীরে সুঁইয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করাতে হয়।

এদিকে ওষুধটির চড়া মূল্যের কারণ তুলে ধরে এসকেএফ-এর বিপণন পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, “যেসব রোগীদের অবস্থা গুরুতর, তাদের ব্যবহারের জন্য মূলত এই ওষুধ। পাঁচ দিন ও দশ দিন – এই দুই ধরণের মেয়াদে বা কোর্সে ওষুধটি প্রয়োগ করার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কর্তৃপক্ষ।”

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, পাঁচ দিনের মধ্যে যাদের রোগ সারবে না, তাদের ক্ষেত্রে দশ দিনের কোর্সের পরামর্শ দেয়া হবে।

যারা পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা নেবেন তাদের জন্য রেমডেসিভিরের ৬টি ভায়াল, আর দশ দিনের চিকিৎসা নেয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১১টি ভায়াল প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি ভায়ালের দাম হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে।”

অর্থাৎ যারা পাঁচদিন চিকিৎসা নেবেন তাদের রেমডেসিভির ওষুধ কিনতে খরচ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর যারা দশ দিন চিকিৎসা নেবেন তাদের খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকার মতো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অপর একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান- বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজাও জানিয়েছিলেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা রেমডেসিভিরের প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হবে।

অর্থাৎ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করতে হলে বেশ বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, ৩৫ কিংবা ৬০ হাজার টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষ এ ওষুধ ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন কিনা।

পূর্ববর্তি সংবাদপঞ্চগড়ে এক কারাবন্দির করোনা পজিটিভ, রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ
পরবর্তি সংবাদকরোনা চিকিৎসা: পুলিশের জন্য রাজধানীতে আলাদা হাসপাতাল ভাড়া