সোহবতের হাহাকার: কথার কথা-করোনার কথা

মুহাম্মাদ আদম আলী।।

বিকেলে আসরের আগে আধ ঘণ্টা বিশ্রাম নেই। ইদানিং ‎বিশ্রামটা ঠিকমতো নিতে পারছি না। এসময় ঘরের ফ্লোরে ‎এসে ছোট ছেলেটা খেলা শুরু করে। শুধু যদি খেলত, ‎ভালো ছিল। খেলার সঙ্গে সে আপন মনে কথা বলতে ‎‎থাকে। ছেলেটার বয়সী কোনো বন্ধু এ বাসায় নেই। ‎পাশের বাসায় আছে। সেখানে হুটহাট যেতে পারে না। ‎‎ছেলের কথা থাক। সেটি শুনে আর কি লাভ।

আচ্ছা, ‎আপনি এ মুহূর্তে কি করছেন? জটিল প্রশ্ন। এ করোনা ‎সব রুটিন পাল্টে দিয়েছে। মোবাইলে আর কতক্ষণ কথা ‎বলা যায়? ‘কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে!…’―এ সময় যাদের ‎‎পেরিয়ে গেছে, তাদের জন্য আরও কঠিন সময়। এখন ‎‎যে আপন মনেই কথা বলার সময়! ‎

আসলে মনের সঙ্গে কথা বলার এখনই সময়। চরিদিকে ‎হু-হুতাশ শুরু হয়ে গেছে। এভাবে জীবন চলে নাকি! ‎জমানো টাকা খরচ করে করে আমরা হয়তো ভালোই ‎আছি। অনেকে ভালো নেই। রাস্তায় জমাট বাধা শোক। ‎‎শোক বাড়ি-ঘরেও। মানুষ চলে যাচ্ছে। যাচ্ছে তো ‎যাচ্ছেই…। দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে। এক সময় আমাকেও ‎‎যেতে হবে মনে করতাম। কিন্তু লকডাউনে থেকে থেকে ‎এখন এ বোধও কমে গেছে। বাহ্যত এখন মৃত্যুভয়ও ‎কাজ করছে না।

জানালার শিক ধরে আকাশের ব্যাপ্তি ‎‎দেখে দেখে সময় যাচ্ছে। মানুষের ভালো-মন্দ ভাবতে ‎ইচ্ছে করে না। নিজেই ভালো নেই―সেখানে কে কীরকম ‎আছে, জেনে কি লাভ! ‎মসজিদে নামায পড়া হচ্ছে না অনেকদিন। প্রথমে কষ্ট ‎লাগলেও এখন আর কষ্ট লাগে না। অন্তর কি তবে মরে ‎যাচ্ছে? এমনিতে দ্বীন-ধর্ম কোনোমতে টিকে ছিল। এখন ‎করোনা এসে এটা প্রায় শেষ করতে চলেছে। ঘরে নামায ‎পড়ে আর যা-ই হোক, দ্বীনদারী টেকানো যায় না।‎মসজিদ খুলে দেওয়া হোক, চারিদিকে আওয়াজ উঠছে। ‎কবে হবে, কে জানে!

‎ ইউটিউবে সুন্দর চেহারার মানুষগুলো দ্বীনের কথা বলে। ‎এত কষ্টকর পরিস্থিতিতে তাদের চেহারা কেমন চিকচিক ‎করে―দেখতে দেখতে মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয়, ‎করোনা তাদের ছুঁয়েও দেখেনি! এর মধ্যে মানুষের কষ্ট ‎নিয়ে অনেকে গান রচনা করছে। এখন কি গান গেয়ে কষ্ট ‎লাঘবের সময়! আমি কোনো খেই পাই না। ‎

আমরা ইংরেজি শিক্ষিত দ্বীনদার। আমাদের জন্য ‎উলামায়ে কেরামের সোহবত লাগে। সেটি ছাড়া আমাদের ‎দ্বীনদারি ভেঙে যাওয়া মুহূর্তের ব্যাপার। সম্ভবত আমরা ‎অনেক বেশি সময় একাকী পার করছি। এভাবে সময় ‎‎গেলে কষ্ট বাড়তেই থাকবে। অন্তর কঠিন হতে হতে ‎একসময় স্থবির হয়ে পড়বে। সেই সময় আসার আগেই ‎সব চালু হোক, এটিই প্রত্যাশা।

নতুবা একা একাই ‎কথা বলতে হবে। নফসের সঙ্গে কথা বলে কখনো পারা ‎যায় না। সাহায্য লাগে। এ সাহায্যের দরজা যত ‎তাড়াতাড়ি খোলে, ততই মঙ্গল। খুব আশা, ভালোবাসার ‎এই জীবন ভালোভাবেই সেরে উঠবে! ‎

পূর্ববর্তি সংবাদসৌদিতে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসীকে খাদ্য সহায়তা দূতাবাসের
পরবর্তি সংবাদঠাকুরগাঁওয়ে বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা