করোনা ভাইরাস : আত্মোপলব্ধির কয়েকটি দিক

মাওলানা হাসান মুরাদ ।।

করোনা তোমাকেই বলি! তুমি মালিকের সৃষ্টি। আমিও মালিকের সৃষ্টি। তোমার কোন ক্ষমতা নেই। আমারও কোন ক্ষমতা নেই। তোমার ক্ষমতা আছে। আমারও ক্ষমতা আছে। তবে পরিমিত। মালিক যতটুকু দিয়েছেন ততটুকু। কিন্তু মানুষ তোমাকে অনুভব করে ভয় করছে। ভয় করছে না যিনি তোমাকে শক্তি দিয়েছেন তাকে।

তুমি পৃথিবীতে এসেছ ১৯ সনের ডিসেম্বরে। তোমার বয়স মাত্র ৪ মাস। ৪মাসেই পৃথিবীর ৭মহাদেশ ভ্রমন করে ফেলছ।তুমি পৃথিবীর নিয়ম পরিবর্তন করে দিয়েছ। কেন? আমার সর্বশক্তিমান মালিক তোমাকে পঠিয়েছেন অন্ধদের চোখ ফেরাতে, গাফেলদের গাফলতি দূর করতে, জালিমদের জুলুম থেক নিবৃত করতে, আর মুমিনদের ঈমান বাড়াতে।

ফিলিস্তিন, কাশ্মির, সিরিয়া, চেসনিয়, বসনিয়া, আফগান, ইরাক, সোমালিয়া আর আরাকানে শহিদদের কত লম্বা সারি। যা আজো গণনাহীন। কেউ তা প্রচার করে না।  বিশ্বের অসহায় মানুষগুলোর চোখজোড়া শুধু লবনাক্ত পানি ঝরিয়েছে। আর কিছুই করতে পারেনি। বার বার ডেকে ডেকে ফরিয়াদ করেছে رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا (সুরা নিসা ৭৫)বলে।

মালিক ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাই তোমাকে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে জুলুম, নির্যাতন, শোষণ, দাম্ভিকতা, পরশ্রিকাতরতা, যুদ্ধ,  স্বৈরাচার,  অস্ত্রের স্তুপ আর গোলাবারুদের কালো ধোয়ায় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমার মালিককে ভুলে মালিকের জমিন মাড়িয়ে আকাশ পেরিয়ে মহাকাশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। আর কত! আমার মালিকের কোরআনকে রাখতে চেয়েছে দূরে। প্রিয় নবীকে অপমান করেছে বারে বারে। শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামকে বানাতে চেয়েছে সন্ত্রাসের ধর্ম । তারা পারেনি পারবেও না কোনদিন। অপমান করেছে মুসলিমদের, লাঞ্ছিত করেছে মানবতাকে ।

হে করোনা তুমি তো আদ, সামুদ, ইরাম, তুব্বা, মু’তাফিকার প্রতিচ্ছবি। তবু কি আমরা ভাবছি! নারীবাজি, মদ, জোয়া, ক্যাসিনো,কালোবাজারি তুমি প্রায় সবই বন্ধ করে দিয়েছ। তারা বাড়ি ফির গেছে। অনেকেই মালিকের ঘর মসজিদে হজিরা দিচ্ছে। দোয়া করি জুলমাতের সে ঘরগুলো যেন আর খোলা না হয়। সেদিন কাবার ইমাম কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন “হে মালিক, আমাদের গোনাহের কারণে তোমার ঘরথেকে আমাদের দুরে সরিয় দিও না”। এর সাথে আমার ফরিয়াদ হে মলিক যারা তোমার ঘরে এখন সিজদা করছে তাদের তুমি আর বের করে দিওনা।

বনী ইসরাইলের ইতিহাস পড়েছি, পড়েছি ইবনে হাজার আসকালনির লেখা মাহমারির তারিখ। আর বিভিন্ন সুরাতে অতীত জাতির উপর পাঠানো আযাবের ইতিহাস পড়েছি। সবই ছিল মালিকের পরীক্ষা। পৃথিবীতে এসেছিল ভয়ানক রূপ নিয়ে, আবার চলে যাবে। আশা করছি তুমিও দ্রুত ফিরে যাবে। তবে যারা তাওবা করে ফিরে আসবে, তারা হবে সফল। আর যারা পশ্চাতে ফিরে যাবে তারা হবে নাকাম। করোনা এসেছে তাওবার সিগনাল নিয়ে। সুপথে ফেরার পরীক্ষা নিয়ে। যারা জনগণের অধিকার লুট করেছে। বাক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে। দেশ- বিশ্বব্যাপি অন্যায়-অবিচারের রাজ্য কায়েম করেছে তাদের টনক নাড়তে। যারা একত্ববাদের শিক্ষা তুলে দিতে চায়,মালিকের শক্তির মুকাবেলা করতে চায় তাদের সাবধান করতে।

মুসিবত যখন আসে তখন শুধু জালিমদেরকেই পাকড়াও করেনা। অনেক নেক মানুষও কষ্ট পান।  ইরশাদ হচ্ছে وَاتَّقُوا فِتْنَةً لاَ تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (অর্থঃআর তোমার এমন ফিতানা থেকে বেচে থাক যা শুধু তোমারে জালেমদের উপরই পতিত হবে না এবং জেনে রেখ আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন- আনফাল ২৫)

হে মালিক তাই আমরা করোনা থেকে তোমার করুণা কামনা করছি। তুমি আমাদের করুনা কর। আমাদের ঈমানকে শক্তিশালি করে দাও। অন্যদের হেদায়াত দাও।দেশ ও বিশ্বনেতাদের সুবুদ্ধি দাও।মজলুমদের সাহায্য করো । জালিমদের নিবৃত কর।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম, বুজরুকগড়গড়ী চুয়াডাঙ্গা

পূর্ববর্তি সংবাদভারত-পাকিস্তানে শিথিল হচ্ছে লকডাউন, খুলছে দোকানপাট
পরবর্তি সংবাদপর্যুদস্ত আফ্রিকা : করোনার পাশাপাশি পঙ্গপালের হানা