এই দেশটা মইরা গেছে, তোর বাপ তো এখনো বাইচা আছে!

ওয়ারিস রব্বানী।।

ঢাকা মেডিকেলে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এক শিশু। ১৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ওই শিশুর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তাকে নিতে হবে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত ওই শিশুকে এম্বুলেন্সের তোলার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত শিশুর বাবা তার সন্তানকে কোলে তুলে নেন। এরপর এম্বুলেন্সে নিয়ে উঠেন।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রতি সাধারণ মানুষ তো রয়েছেই, স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত লোকজনের আচরণই এখন ভয়ঙ্কর একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ভয়, আতঙ্ক এসবের পাশাপাশি অসহযোগিতা ও নির্দয়তার অগণিত ঘটনা ঘটছে দেশজুড়ে। গতকাল ঢাকা মেডিকেলের ঘটনাটাও ছিল তেমনই একটি ঘটনা।

হৃদয়বিদারক এই দৃশ্যটি ফটো সাংবাদিকরা ক্যামেরাবন্দি করেন। সুরক্ষা সুবিধা নিয়ে কেউ যখন ওই শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত বহন করতে এগিয়ে এলো না তখন বাবাই সন্তানকে কোলে তুলে নিলেন। হাসপাতালের বারান্দায় মাস্ক পরা বাবার কোলে মাস্ক পরা শিশুটির এই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ছবির সঙ্গে দুঃখী বাবার বক্তব্য হিসেবে বহু মানুষ একটি ক্যাপশন লিখে রেখেছেন। বোঝা যায়, বেদনাদায়ক এ চিত্রটিকে ভাষা দেওয়ার জন্যই ভারাক্রান্ত মানুষ এ ক্যাপশনটি নিজে থেকেই তৈরি করেছেন। করোনা আক্রান্ত শিশু, যাকে কেউ নিতে এগিয়ে আসছে না, তাকে যেন তার বাবা বলছেন, ‘ভয় কিরে বেটা, এই দেশটা মইরা গেছে, তোর বাপ তো এখনো বাইচা আছে।’

সন্তানের জন্য বাবা মায়ের ব্যাকুলতার কথা প্রত্যেক বাবা-মা-ই জানেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে বাবা-মার প্রতি সন্তানদের অবহেলা ও নির্মমতার অনেকগুলো ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এসব ঘটনায় যেমন ফুটে উঠেছে মানুষের পশু হয়ে যাওয়ার একটি চিত্র, তেমনি পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের নির্দয়তার বীভৎস ছবি। এসময়ই ভাইরাল হওয়া ছবিটি মানুষের হৃদয়ে দুঃখ ও দরদের, ভালোবাসা ও মমতার অপূর্ব একটি দৃশ্য সামনে এনেছে। একই সঙ্গে এনেছে দেশের স্বাস্থ্যসেবার ভঙ্গুর ও বেদনাদায়ক চিত্র।

ঘরে ঘরে জ্বর, কাশি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বহু শিশুকে নিয়ে এই সংকটময় সময়ে বাবা আর মায়ের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এমনও খবর আসছে, বুকের মধ্যে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন বাবা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সন্তান। কেউ চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছে না। ভয় ও আতঙ্ক চারদিকে। কিন্তু বাবার কোলে তো অসুস্থ শিশু, শ্বাসকষ্টে বুক ওঠানামা করছে। চোখ মুছতে মুছতে সন্তানকে কোলে জাপ্টে ধরে বাবা আরেক হাসপাতালে ছুটছেন। যদি তার ‘বুকের ধনের’ একটা উপায় হয়!

দুনিয়ার সব সন্তানের জন্য দুনিয়ার সব বাবা-মা তো এমনই। নির্দয়তায়, নির্মমতায় গোটা দেশ মরে গেলেও বাবা আর মায়ের কোল তো মরতে পারে না!

পূর্ববর্তি সংবাদতিন চিকিৎসকসহ নরসিংদীতে নতুন করে ২৭ জনের করোনা শনাক্ত
পরবর্তি সংবাদদেশে করোনায় আক্রান্ত ৯০ জন চিকিৎসক,কোয়ারেন্টাইনে ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী