এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়!

মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব ।।

দেশ-বিদেশের বহু ব্যস্ততম নগরী এখন শান্ত। অবর্ণনীয় বহু কোলাহল এখন স্তব্ধ। পরিচিত রাস্তাঘাট, যানজট, জনসমাগম এখন সুদূর কল্পনা।

বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে ঢাকায় থাকি। এই দীর্ঘ সময়ে কখনো একটানা ২০দিন গ্রামের বাড়িতে থাকা হয়নি। এবারই প্রথম। আত্মীয় ঘনিষ্ট অনেকে এ সময়ও ঢাকায় আছেন। তাদের সঙ্গে ফোনে কথা হলে ঢাকার শান্ত রাস্তাঘাটগুলোর গল্প শুনি। দুয়েকটা ছবিও দেখি। কেমন যেন লাগে। মুহূর্তে যে কতকিছু হতে পারে, অকল্পনীয় বহু পরিবর্তন হতে যে সময় লাগে না বিশ্বাস করি। প্রতিদিনের জ্যামে আটকে থাকা, নির্দিষ্ট গাড়ির জন্যে দীর্ঘ অপেক্ষা করা, গাড়ি এলে কৌশল ও ছুটোছুটির প্রতিযোগিতা করা- এখন নিছক গল্প। কত সহজেই সবকিছু বদলে গেছে! সব কোলাহল থেমে গেছে। থমকে গেছে ব্যস্তময় পুরো জগত। এ পরিস্থিতির আগে হয়ত এমন কল্পনা করে গল্প বলাও কঠিন ছিল। বিশ্বাস করানো ছিল অসম্ভবপ্রায়।

সবচেয়ে ব্যস্ত যেসকল চাকুরিজীবী প্রতিদিন সকালে পূবাকাশ ঝলকিত হওয়ার আগেই অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। ফিরেন রাস্তার যানজট ঠেলে অনেক রাতে। এরপর খাওয়া দাওয়া ঘুম। ঘুম থেকে উঠে সকালে আবার অফিস। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার কিংবা সঙ্গে আরেকদিন শনিবার ছুটি পান। এভাবেই বছরের পর বছর চলে। একই রুটিনে। একই ব্যস্ততায়। আমার পরিচিত একজন প্রায়ই বলেন, গত বিশ বছর ধরে তিনি এই নিয়মেই অফিস করে যাচ্ছেন। দুয়েকবার তাঁকে কোরআন মাজীদ শেখার কথা বলেছি। উত্তরে তিনি খুবই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। সময় হয়না, সুযোগ হয়না, বারবার বলেছেন। আমিও তার রুটিন শুনে তেমন কিছু বলতে পারিনি। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার ছাড়া বাস্তবেই তার কোনো সময় নেই। সপ্তাহের সে একদিনে সন্তানাদির সঙ্গে তার দেখা হয়। অন্যদিন তাদেরকে ঘুমে রেখেই অফিসে যান। তারা ঘুমিয়ে পড়ার পর অফিস থেকে ফিরেন। এই একদিনে তাকে অন্য কাজের কথা বলতেও বিবেকে বাধে। শুক্রবারের নানা গল্প করেন তিনি। সকালে বাজারে যান। কাঁচা বাজারসহ পুরো সপ্তাহের সব বাজার করেন। দুপুরে স্ত্রী সন্তানদের সাথে খুব আনন্দে খাওয়া দাওয়া করেন। বিকেলে ছেলেদের নিয়ে একটু ঘুরতে বের হন। এ তার দীর্ঘদিনের রুটিন।

গত কয়েকদিন আগে তার সঙ্গে ফোনে কথা হলো। বললাম, এই লম্বা বিরতিতে কুরআন মাজীদ শিখছেন তো! তিনি বললেন, কার কাছে শিখব? একা একা শেখা হলে তো ভুল শিখে ফেলি। আমি বললাম, ফোনে ফোনে আমি সময় দিতে প্রস্তুত। তিনি সহাস্য সম্মত হলেন। খুশিও হলেন। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করে এখন বেশ অগ্রসর। মাশাআল্লাহ।

তার এই ঘটনার পর অন্য অনেককেই বললাম, মনে হলো অনেকেই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন অ্যাপ বা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে কোরআন শিখছেন। এতে অল্প বিস্তর ঝুঁকি থাকলেও উৎসাহ দিলাম। সেইসঙ্গে মাঝে মধ্যে আমাকে পড়া শোনাতে বললাম।

ঘনিষ্ট অনেককে দেখি, তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে নামায পড়ছেন। কিন্তু নামায সহী না। দাঁড়ানো সহী না। হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু করা, সিজদা করা, অনেক কিছুই সহী না। অন্তরঙ্গ হয়ে এসব বিষয়ে কথা বললে সবার একই কথা- শেখার খুব আগ্রহ। কিন্তু সময় সুযোগ হয় না। তাদের কাউকে কাউকে সেদিন বললাম, এই সুযোগকে তো কাজে লাগাতে পারেন। কেউ কেউ যেন এমন কিছু আগে ভেবেই দেখেননি! কেউ কেউ ভেবেছেন। তবে কারো সহায়তা পাচ্ছেন না।

সেদিন আমাদের এক মুহতারাম উস্তায কাদিয়ানী বিষয়ে মেহনতকারী এক সাথীকে বললেন, বাংলাদেশে হয়ত পাঁচ পার্সেন্ট কাদিয়ানী। মাশাআল্লাহ তুমি তাদের জন্য ফিকির করছো। তাদের হেদায়েতের জন্য মেহনত করছো। এটা অনেক আনন্দের। এ মেহনতের ধারা অব্যাহত থাকলে ভয়ঙ্কর একটি ফেতনা থেকে দেশ ও দেশের মুসলমান রক্ষা পাবে। কিন্তু এদেশে যে নব্বই পঁচানব্বই পার্সেন্ট মানুষ সাধারণ মুসলাম। যারা দ্বীন-ঈমান সম্পর্কিত জরূরী বিষয়গুলোও জানে না। তাদেরকে নিয়েও ভাবা দরকার। তাদের জন্যও সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত মেহতন প্রয়োজন। তাদেরকে তো ফরযে আইন পরিমাণ দ্বীনী ইলম শেখাতে পারলে পুরো দেশের চেহারাই বদলে যাবে। পুরো দেশে দ্বীনী পরিবেশ তৈরি হবে। ঈমানী পরিবেশ তৈরি হবে। তাতে অন্য অনেকের জন্য দ্বীন শেখা এবং দ্বীন মানাও সহজ হয়ে যাবে।

আজ হঠাৎ এই নিভৃত অবসরে ঘরে বসে উস্তাযে মুহতারামের কথা খুব মনে পড়ছে।

হে আল্লাহ! আমাদের এই অবসরকে কাজে লাগানোর তাওফীক আপনি দান করুন। যিন্দেগীর সুখ-দুঃখের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ কদর করার তাওফীক দান করুন। বর্তমানের এই মসীবত ও পরীক্ষা থেকে আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন। আমীন।

পূর্ববর্তি সংবাদ‘জনগণ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে আর সরকারি দলের লোকেরা আত্মাসাতে ব্যস্ত’
পরবর্তি সংবাদলকডাউন শিথিলের জন্য ৬ শর্ত দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা