করোনার সময় ঢাকা মেডিকেলে যেভাবে কাটলো ৩ টি দিন

এনাম হাসান জুনাইদ ।।

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগ মানেই মনেই হয় এ্যাম্বুলেন্স আর মানুষের কান্না, স্ট্রেচারে অচেতন মানুষকে টেনে নেয়ার  শব্দ! শুক্রবার দুপুরে আরও অনেকের মত এই প্রতিবেদকও  দুরুদুুরু বুকে জরুরি বিভাগের বাইরে চেয়ারে বসে ছিলেন, কখন তার ছোট ভাইয়ের জ্ঞান ফিরে?

জরুরি বিভাগে রোগীদের সাহায্য সহযোগিতায় নিয়োজিত আনসার বাহিনীর সদস্যরা আছেন। তাদেরকে সত্যিকারে রোগীদের অনেক সহযোগী মনে হয়েছে।

আনসারদের একজন শোনালেন, রাস্তায় বাটপারদের খপ্পরে টাকা পয়সা খোয়ানো গ্রামের সরল মানুষ কিভাবে হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থেকে চিকিৎসা নিলেন। দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে মনে হয় ঢামেক সত্যিই এক আশ্রয় স্থল।

দুপুরের দিকে কয়েকজন ছেলেকে দেখলাম ধুলোমলিন কাপড়ে ১০ টাকার টিকেট হাতে এসে স্টাফদের পায়ে ধরছে মাথা সিলাই করে দিতে, হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে, ড্রেসিং করে দিতে।

কেমন আসছে রোগী এই লক ডাউনে?

লক ডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকলেও মানুষের প্রয়োজন কি আর বন্ধ থাকে? খেয়াল করে দেখলাম, রাত নেই দিন নেই- জরুরি বিভাগে একের পর এক এম্বুল্যান্স আসতেই থাকে। ঘন্টায় না হলেও তো ৪/৫ টা আসে।

একজন দায়িত্বরত আনসার জানালেন, অন্যান্য সময় আরও ভিড় থাকে। সে তুলনায় এখন নাকি একেবারেই খালি। তখন বাশি ফুঁ দিতে দিতে  তাকে ক্লান্ত হতে হত। আর এখন কিছু ই করতে হয় না- বলছিলেন আনসার সদস্য।

এই দুয়েক দিনে দেখা গেল, গ্রাম থেকে মাথায় কাটা নিয়ে এসেছেন কয়েক জন। একজন বয়স্ক নারীকে দেখলাম তার মাথা ফেটে গেছে। জানা গেল, জমি নিয়ে বিরোধের  জেরে মারামারিতে আহত হয়েছেন তিনি।

আরেক কিশোরকে আনা হয়েছে, মাথায় পট্টি বাধাঁ। জানা গেল, মসজিদ থেকে বের হয়ে নিজের বন্ধুদের কাউকে মার খেতে দেখে বাঁচাতে গিয়েছিল। পরে নিজেই আক্রান্ত হল।

লক ডাউনে হাসপাতালে আসতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এমন একজন জানালেন, প্রথমে তারা পিজিতে গিয়েছেন। সেখানে ডাক্তাররা করোনার ডরে জরুরি বিভাগেও অনুপস্থিত। অবশেষে তারা ঢামেকে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুক্রবারেও হাসপাতালের ডাক্তারদের উপস্থিতি, কর্মতৎপরতা ততটা খারাপ মনে হয়নি। আমার ভাইয়ের মাথার অপারেশনও শুক্রবারে হয়েছে, যা ছুটির দিন, এবং করোনার ভয়ে অনেক হাসপাতালও বন্ধ।

লক ডাউনে জরুরি বিভাগ বলতে গেলে অনেকটাই ফাঁকা। বারান্দায় বিছানা সবগুলো খালি পড়ে আছে। ভেতরেও খালি আছে কিছু। আর কিছু আছে রোগীর আত্মীয়দের দখলে।

ঢামেক সম্পর্কে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, সীমাহীন ভীড়ের কারণে যত্রতত্র রোগীদের ফেলে রাখার যে অভিযোগ তা তেমন চোখে পড়েনি। হয়তো লক ডাউনে মানুষ কম থাকায় এবং করোনা আতঙ্কে এই পরিচ্ছন্নতার প্রতি যত্মশীলতা। অথবা হতে পারে সত্যিকারের অগ্রগতি।

তবে কিছু কিছু স্টাফ, আয়া, ট্রালি ম্যানের সহযোগীতার প্রশংসার পাশপাশি তাদের উপরি পাওনা দাবি করার অনুযোগ করছেন কেউ কেউ।

 

 

পূর্ববর্তি সংবাদকরোনায় ইসরাইলের সাবেক প্রধান ধর্মযাজকের মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদএবার মসজিদে তারাবীহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিল সৌদি