করোনা: পরিবহন বন্ধ ও গার্মেন্টস খোলার অদ্ভুত উল্টোযাত্রা

খসরু খান ।।

করোনা মহামারী সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য মানুষের ঘরে অবস্থান কর্মসূচি দীর্ঘ করা হলো। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলো। আজ ঘোষণা দিয়ে জানানো হলো, গণপরিবহন আরো এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। মহামারী সংক্রমণের সার্বিক দিক বিবেচনায় এসব সিদ্ধান্ত তো ভালই ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আজ দুপুরের পর থেকে ঢাকার সবগুলো প্রবেশমুখে উল্টো আরেকটি চিত্র দেখা গেল। লাখো লাখো গার্মেন্টস কর্মীকে কর্মস্থলে ফিরে আসতে হচ্ছে।

এই বিপরীত পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? করোনা সংক্রমনের ভয়ে গণপরিবহন বন্ধ করেই রাখলেন। তাহলে গার্মেন্টস খুলে দিলেন কেন? গার্মেন্টসগুলো যদি খুলে দিতেই হয় তবে গণপরিবহন বন্ধ রাখলেন কেন? লাখ লাখ শ্রমিক দুর্ভোগের শিকার হয়ে, অতিরিক্ত ভাড়া গুনে, ট্রাকে, লেগুনায় চেপে শত শত মাইল দূর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছুটে আসতে বাধ্য হচ্ছে কেন? এরকম জটিল সময়ে এত উল্টো সিদ্ধান্ত প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার মান সম্পর্কে কী বার্তা দেয়?

একদিকে ঢাকাসহ দেশজুড়ে প্রায় লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশে করোনা মহামারীর ভয়াবহ চিত্র দেখে দেশের বেশিরভাগ নাগরিক যে আবদ্ধতার অবস্থাটাকে মেনেও নিয়েছে, সেখানে লাখ লাখ মানুষকে ভিড় করে আবার ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল, ব্যাপারটা একদমই স্পষ্ট না। করোনা মহামারীর সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সর্বাত্মক একাকীত্ব ও মেলামেশাহীনতাকে যে সময়টাতে সবচেয়ে দরকারী বলে মনে করা হচ্ছে এবং ঘোষণা করা হচ্ছে, সে সময়টাতেই ব্যাপক জনসমাগম ও মেলামেশার এই পরিস্থিতি তৈরীর পেছনে যৌক্তিক কী কারণ থাকতে পারে!

দশ দিন আগে হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণা করা হলো। এক থেকে দেড় দিনের মধ্যে ঢাকা ছাড়তে বলা হলো। ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হলো। যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। তখনো কোটি খানেক মানুষ ভিড় করে, হুড়োহুড়ি করে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হলেন। যে ভিড় এবং হুড়োহুড়ি করোনার সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর কারণ হতে পারে বলে সবাই মনে করছেন। সেই একই দৃশ্য আজ দুপুরের পর থেকে দেখতে হচ্ছে।

লাখ লাখ শ্রমিক শুধু ঢাকার দিকে আসছেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নানারকম যানবাহনে ভিড় করে, হুড়োহুড়ি করে ঢাকায় ফিরছেন। বলা যেতে পারে, এভাবে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে। সিদ্ধান্তের অস্থিরতা এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি-কোনো বিবেচনাতেই এ ধরনের পরিস্থিতিকে সমীচীন বলা যায় না।

এ যেন এক উল্টোযাত্রা। একদিকে বলা হচ্ছে ঘর থেকে বের হবেন না, আরেকদিকে লাখ লাখ মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে হুড়োহুড়ি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। একদিকে বলা হচ্ছে, সংক্রমণ এড়াতে নিজে এবং নিজের পরিবারের লোকেরা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে মিশবেন না, অপরদিকে এক একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে হাজার হাজার শ্রমিককে একসঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে প্রায় নিশ্চিত সংক্রমণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতি সাদাচোখেই এখন জটিল এবং আশঙ্কাজনক। পৃথিবীর যেসব দেশে এ মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হয়ে দিনে হাজারখানেক মানুষ মারা যাচ্ছে, জানা গেছে, তাদের দেশে করোনা বিস্তারের সূচনা সময়টা এমনই ছিল, যেমনটা এখন বাংলাদেশে। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে এজাতীয় উল্টো সিদ্ধান্ত এবং উল্টোযাত্রার ফলাফল কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়টি কি আমাদের কর্তা-কর্ত্রীরা ভেবে দেখেছেন?

পূর্ববর্তি সংবাদমিরসরাইয়ে অগ্নিকাণ্ডে ১০ বসতঘর পুড়ে ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি
পরবর্তি সংবাদ৪ এপ্রিল মুফতি আমিনী রহঃ-এর ডাকা ঐতিহাসিক হরতাল